প্রখ্যাত বাঙালি লোকসঙ্গীত শিল্পী উৎপলেন্দু চৌধুরী র প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

উৎপলেন্দু চৌধুরী  (২৯ এপ্রিল, ১৯৪৯ -৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ) ছিলেন বিখ্যাত বাঙালি লোকসঙ্গীত শিল্পী। বাংলার শিক্ষিত সমাজে অবহেলিত লোকসঙ্গীতের ধারা পিতার নির্দেশিত পথে বহন করেছেন আমৃত্যু।
উৎপলেন্দুর জন্ম ভারতের স্বাধীনতার পর পূর্বপাকিস্তানে অধুনা বাংলাদেশের সিলেটে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে এপ্রিল। তার ডাকনাম ছিল রুণু। পিতা ছিলেন বাংলার সমৃদ্ধ লোকসঙ্গীত আন্দোলনের পথিকৃত, জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়ে তার পরিবার চলে আসেন কলকাতায়। উৎপলেন্দুর পড়াশোনা প্রথমে কলকাতার ডন বসকো ও পরে সেন্ট টমাস স্কুলে। তিনি এম.কম পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কিন্তু তার পিতা শৈশবকাল থেকেই তাঁকে সঙ্গীত শিক্ষা দেন। পিতার নির্দেশেই লোকগানের তালিম নেন অধুনা বাংলাদেশের বিদিতলাল দাসের কাছে। লোকগানে দক্ষতার পাশাপাশি শেখেন সরোদ ও পিয়ানো বাদন। সেতার শেখেন ওস্তাদ বাহাদুর খানের কাছে। তবে বাংলার হারিয়ে যাওয়া লোকগান গেয়ে পিতার ধারা বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন তিনি। গ্রামোফোন রেকর্ড ও ক্যাসেটের পাশাপাশি লোক-আঙ্গিকের বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজ করেছেন। তিনি বাংলা, আসাম ও ত্রিপুরার বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন আঙ্গিকের গান যেমন, বাউল, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, ধামাইল, সারিগান, ঝুমুর, টুসু ইত্যাদি লোকগানের পুনরুজ্জীবনের ও প্রচারের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তার গভীর সংবেদনশীল পরিবেশনের গুণে দেশ-বিদেশের সঙ্গীতপ্রেমীরা প্রকৃতপক্ষে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়তেন। পিতার ন্যায় তিনিও সাতের দশক থেকেই বিদেশে লোকগানের প্রতিনিধিত্ব করেন। নিজের সঙ্গীতের দল নিয়ে ভ্রমণ করেন আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড সহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ। পরে সোভিয়েত রাশিয়া হতে খ্যাতি ও সুনাম অর্জন করেন আটের দশকে। বাংলার সঙ্গীত শিল্পীদের সংগঠন “অ্যাপস”-এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন তিনি। সম্পাদকও হয়েছিলেন। প্রতিভাবান শিল্পীর গলায় একসময় ক্যান্সার রোগের মারণ আক্রমণ ধরা পড়ে। সাময়িক বিরতি,তবে চিকিৎসার পর আবার গান গাওয়া শুরু করেন, কিন্তু জীবনের শেষদিকে গাইতে সমস্যা হত।
তিনি কলকাতার সল্টলেকে বসবাস করতেন। তবে বেশিদিন গান গাইতে পারেন নি। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই ফেব্রুয়ারি মাত্র ৬১ বৎসর বয়সে কলকাতার এক হাসপাতালে প্রয়াত হন। তার স্ত্রী উত্তরা চৌধুরী ও দুই কন্যা তিস্তা ও তোর্সা।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *