নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়া:- বাঁকুড়ার জয়পুরে তৃণমূল নেতাকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে অভিযুক্ত তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি ও ২ পঞ্চায়েত সদস্য সহ বুধবার মোট ৭ জন তৃণমূল নেতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করলেন বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারপতি অনিরুদ্ধ মাইতি। অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই জামিনে ছাড়া পেয়ে বাইরে ছিলেন। তবে এদিন সাজা ঘোষণার সময় ৭ জনকেই আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়াও এদিন আদালতে হাজির ছিলেন তৃণমূলের জয়পুর ব্লক সভাপতি কৌশিক বটব্যাল সহ অন্যান্য নেতারা। ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি ওই ঘটনায় জয়পুরের বৈতল এলাকার বাসিন্দা গোলাম কুদ্দুস শেখের মৃত্যু হয়। অভিযোগ, ইন্দিরা আবাসনের টাকা তছরুপ করার অভিযোগে জয়পুরের উত্তরবাড় অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি বাবর আলী কোটালে নেতৃত্বে বৈতল ও অন্যান্য জায়গার বহু তৃণমূল কর্মী একত্রিত হয়ে গোলাম কুদ্দুস শেখকে লাঠি, টংগি, কাটারি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং কোপ মারে। গুরুতর জখম অবস্থায় তারা কুদ্দুস শেখকে সেখানেই ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাঁকুড়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তবে সেখানে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই গোলাম কুদ্দুসের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনা পরের দিন গোলাম কুদ্দুসের দাদা ইউসুফ আলী শেখ বাবর আলী কোটালসহ দুই পঞ্চায়েত সদস্য লাল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ও রাজন মন্ডল সহ ৪১ জন তৃণমূল নেতাকর্মীর নামে জয়পুর থানার ভাইকে খুন করার কথা জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করলেও প্রাথমিক তদন্তের পর ১৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করে। ১২ বছর ধরে বিষ্ণুপুর আদালতে ওই মামলা চলার পর মঙ্গলবার আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অনিরুদ্ধ মাইতি মোট ৭ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি বাবর আলী কোটাল ছাড়াও যাবজ্জীবন স্বজপ্রাপ্ত আসামিরা হল দুই পঞ্চায়েত সদস্য লাল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ও রাজন মন্ডল। এছাড়াও স্থানীয় নেতা শুকুর ভুইয়া, ইয়ামিন ভূঁইয়া, নবীয়াল মন্ডল এবং হোসেন মন্ডলদের ওই সাজা শোনানো হয়। এদিন বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী গুরুপদ ভট্টাচার্য বলেন ‘জয়পুরের হরিনাশুলি গ্রামে ইন্দিরা আবাসনের টাকা তছরুপ করার অভিযোগে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি বাবর আলী কোটালের নেতৃত্বে বেশ কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীরা গোলাম কুদ্দুস শেখ নামে এক তৃণমূল নেতাকে লাঠি, টাঙ্গি, কাটারি ইত্যাদি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। ওই ঘটনায় গোলাম কুদ্দুস হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় মারা যায়। এরপরেই মৃত নেতার দাদা ইউসুফ আলী শেখ বাবর আলী কোটাল সহ মোট ৪১ জনের নামে ভাইকে খুন করার অভিযোগ দেয়ার করেন। ১২ বছর সেই মামলা চলার পর মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানির শেষ দিনে মোট ৭ জনকে বিষ্ণুপুর মহাকুমা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অনিরুদ্ধ মাইতি দোষী সাব্যস্ত করেন। বুধবার তাদের সাজা ঘোষণা করা হয়। ওই ৭ জনকেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ,১৪৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৩২৪ ধারায় ৩ বছর কারাদণ্ড ও ৩২৫ এবং ১৪৯ ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ড সঙ্গে প্রত্যেকেরই ১০,০০০ টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এছাড়াও ১৪৭ ধারায় ২ বছর কারাদণ্ড ও ১৪৮ ধারায় ৩ বছর কারাদণ্ডর নির্দেশ দেন। বিভিন্ন ধারায় সমস্ত সাজা একসঙ্গে লাগু থাকবে বলে এদিন জানিয়েছেন বিচারক অনিরুদ্ধ মাইতি’। বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালত অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেও তাদের উচ্চ আদালতে ফের আবেদন করার রাস্তা খোলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
জয়পুরে তৃণমূল নেতাকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে অভিযুক্ত তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি ও ২ পঞ্চায়েত সদস্য সহ বুধবার মোট ৭ জন তৃণমূল নেতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা।

Leave a Reply