ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ওতপ্রতভাবে জড়িত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার হ্যামিলটন স্কুল।

তমলুক-পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ – শুধু পড়াশোনা নয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই স্কুলের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ওতপ্রতভাবে জড়িত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার এই স্কুল। এই স্কুল শিক্ষা দীক্ষার ক্ষেত্রে জেলার একটি নামকরা স্কুল। কিন্তু এই স্কুলের ইতিহাসে সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানান বিপ্লবীদের নাম। এমনকি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বদেশী আন্দোলনের সময় স্কুল চত্বরে স্বদেশী মেলার আয়োজন করে ছিলেন। এমনই একটি স্কুল হল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হ্যামিলটন স্কুল।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সদর শহর তমলুক। এই শহরের একটি নামী স্কুল হল তমলুক হ্যামিলটন স্কুল। এই স্কুল ১৮৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০১ সালে এই স্কুল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন থেকে হেরিটেজ স্কুলের মর্যাদা পায়। এই স্কুলের বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এই স্কুল শুধু মেধাবী ছাত্রদের জন্য নয়। ব্রিটিশ রাজ শক্তির বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন এই স্কুলের ছাত্ররা। তমলুকের এই স্কুলে স্বদেশী আন্দোলনের বীজ বপন হয়ে ছিল যদুগোপাল মুখোপাধ্যায় ক্ষুদিরাম সহ প্রমুখ ও অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের হাত ধরে।

পরবর্তী কালে ১৯২১ সাল, ১৯৩০ এবং ১৯৪২ সালের বিভিন্ন আন্দোলনে এই স্কুলের ছাত্ররা সরাসরি স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে এই স্কুলের ১২ জন ছাত্র জড়িয়ে পড়লে, স্কুল থেকে থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। সেই ছাত্র দলের মধ্যে ছিলেন তমলুক রাজ বাড়ীর সদস্য। এই স্কুলের একদা প্রধান শিক্ষক সতীশ চক্রবর্তী ব্রিটিশ রাজ চক্ষুর উপেক্ষা করেই স্কুল চত্বরে স্বদেশী মেলা বসিয়ে ছিলেন। এমনকি সেই মেলায় এসেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রফুল্ল চন্দ্র রায়।

১৯৩০ সালের লবণ সত্যাগ্রহ এমনকি ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তমলুক মহাকুমায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণকারী অজয় কুমার মুখোপাধ্যায় এবং সুশীল ধাড়া এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। এই স্কুলে গোপনে স্বদেশী কাজকর্ম চলতে বলে জানান স্কুলের বর্তমান ইতিহাসের শিক্ষক। তমলুক হ্যামিল্টন স্কুলের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে, আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ জয়দেব মালাকার জানান, ‘বিপ্লবের অগ্নিযুগ থেকে স্বদেশী আন্দোলনের বিভিন্ন আন্দোলনে এই স্কুলের ছাত্ররা সরাসরি জড়িয়ে পড়েছিল। স্কুল ব্রিটিশ পরিচালিত হলেও স্কুলের বেশ কিছু শিক্ষক স্বদেশী আন্দোলনকে পরোক্ষভাবে মদত দিতেন। স্বদেশী আন্দোলনের সময় প্রধান শিক্ষক সতীশচন্দ্র সামন্ত এই স্কুলে স্বদেশী মেলা বসিয়ে ছিলেন।’

বর্তমানে এই স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রে জেলার অগ্রণী একটি স্কুল। এই স্কুলের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িতে রয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের কাহিনী। আজও স্কুল চত্বরে পুরনো বিল্ডিং সহ গাছ বিভিন্ন গাছ সেই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *