ঠিকাদার সাদ্দাম নাদাব খুনের ঘটনায় পুলিশ সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠন করে।

দঃ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- তপন থানার সিহুর গ্রামে এক নির্মীয়মাণ বাড়ির দেওয়ালের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া ঠিকাদার সাদ্দাম নাদাব (৩৬)-এর দেহ ঘিরে পুলিশের তদন্তে উঠে এলো এক গা শিউরে ওঠা পারিবারিক খুনের চক্রান্ত। পুলিশ সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠন করে।
অভিযুক্ত সাদ্দামের কাকিমা মৌমিতা হাসান (৪০) এবং তাঁর স্বামী তথা সাদ্দামের কাকা রহমান নাদাব। পুলিশের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে মৌমিতার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল সাদ্দামের। সময়ের সঙ্গে সম্পর্কটি পরিণত হয় যৌন চাহিদার শোষণ, ব্ল্যাকমেল ও প্রাণনাশের হুমকিতে। ওই মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অবসান ঘটাতেই মৌমিতা ও রহমান মিলেই এই খুনের পরিকল্পনা করে বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ মে রাতে মালদহের চাঁচলের বাসিন্দা সাদ্দাম, যাঁর ট্রেন দেরিতে এসেছিল, পৌঁছন সিহুর গ্রামে কাকিমার পৈতৃক বাড়িতে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ। সেই বাড়ির একটি ঘরে, যা তখনও নির্মাণাধীন, মৌমিতা তাঁকে ঘরে ডেকে নিয়ে যান। এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তে আগে থেকে বালিশের নিচে রাখা ছুরি দিয়ে কাকিমা সাদ্দামের গলা কেটে দেন। ঘরের অন্ধকারে আগে থেকেই লুকিয়ে ছিলেন রহমান। এরপর মৃতদেহটি নাইলনের দড়ি দিয়ে বেঁধে পলিথিনে মুড়ে বাড়ির দেওয়ালের গহ্বরে লুকিয়ে রাখেন তারা। আগেই মজুত করা ছিল বালি ও সিমেন্ট—সেই দিয়েই দেওয়ালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
হত্যার রাতে বাড়ির অন্য সদস্যদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রবল ঝড় ও লোডশেডিং সেই রাতে তাঁদের কাজে সুবিধা করে দেয়। কোনও সিসিটিভি ফুটেজ ছিল না, প্রতিবেশীরাও কিছু বুঝতে পারেননি।
সাদ্দাম তাঁর স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে মালদার ইংলিশবাজারের রিজেন্ট পার্ক এলাকায় থাকতেন এবং তাঁর নির্মাণ সংস্থার অফিস ছিল কাকিমার মালিকানাধীন বাড়ির তলায়। মৌমিতা ছিলেন তাঁর সংস্থার হিসাবরক্ষকও। পুলিশ বলছে, সেই পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন মৌমিতা।
২৩ মে সাদ্দামের স্ত্রী নাসরিন খাতুন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। ৩১ মে গ্রেফতার করা হয় মৌমিতাকে। জেরায় তিনি পুরো ঘটনা স্বীকার করেন। ৫ জুন ধরা পড়েন রহমান।
তবে পুলিশের দাবি খারিজ করেছেন নাসরিন। তাঁর অভিযোগ, এটা আর পাঁচটা পারিবারিক খুন নয়। আমার স্বামী কোটি টাকার ব্যবসা করতেন। ওই সময় তাঁর কাছে থাকা ২৫ লক্ষ টাকা এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটা সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক লোভের খুন।
এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, বাইরের কোনও গ্যাং জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। এটা নিখুঁতভাবে সাজানো এক পারিবারিক অপরাধ, যার পেছনে ব্যক্তিগত ও মানসিক কারণ কাজ করেছে।’
তদন্ত চলছে। আরও তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *