অন্নের প্রাচুর্য ও সংসারের শান্তির কামনায় উনন পুজো, বাঁকুড়ায় উৎসবের আমেজ।

বাঁকুড়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- পরিবারের কল্যাণ অন্নের প্রাচুর্য এবং শান্তির জন্য করা হয় এই পুজো। বাঁকুড়ার গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিশেষ রীতি এটি। কিভাবে হয় এই পুজো চলুন দেখিয়ে দিই আপনাদের । বাঁকুড়ার ইন্দাসের গোবিন্দপুর কর্মকার বাড়িতে ভাদ্র মাস মানেই এক বিশেষ আচার—উনন পুজো। বহু প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই প্রথা আজও পরিবারের সকলের কাছে সমান তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে উননকে মানা হয় মা মনসার প্রতীক হিসেবে। তাই পুজোর দিন ঘিরে থাকে বিশেষ উৎসবমুখর পরিবেশ।

পুজোর আগের দিন থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। গোটা বাড়ি জুড়ে চলে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা। উনন গোবরজল দিয়ে লেপে সাজানো হয়, আর তার উপর আঁকা হয় সাদা আলপনা। এই আচার শুধু পবিত্রতার নিদর্শন নয়, বরং বিশ্বাস করা হয়—এর মাধ্যমে ঘরে প্রবেশ করে শুভ শক্তি।

উনন পুজোর উপকরণও গ্রামের সহজ-সরল জীবনের প্রতিফলন। লাউ, কুমড়ো, বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজি আর সঙ্গে বাতাসা দিয়ে সম্পন্ন হয় এই আচার। বাহুল্য বা জাঁকজমক না থাকলেও এই সরল উপকরণগুলিই প্রতীকী অর্থ বহন করে। লাউ-কুমড়ো অন্নের প্রাচুর্যের ইঙ্গিত দেয়, বাতাসা মিষ্টি জীবনের কামনা করে।

এই পুজো মূলত পরিবারের কল্যাণ, অন্নের প্রাচুর্য এবং সংসারের শান্তির জন্য করা হয়। পুজোর সময় পরিবারের প্রত্যেক সদস্য একত্রিত হন, ভক্তিভরে প্রার্থনা করেন—যাতে মা মনসার আশীর্বাদে সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে।

গোবিন্দপুর কর্মকার পরিবারের কাছে উনন পুজো কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং এটি এক ধরনের পারিবারিক ঐক্যের প্রতীক। ভাদ্র মাস এলেই এই পুজো যেন মনে করিয়ে দেয়, অন্নপূর্ণার আশীর্বাদ ছাড়া সংসার পূর্ণতা পায় না। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই প্রথা এতটাই জীবন্ত হয়ে রয়েছে।

সব মিলিয়ে, সরল উপকরণ, আন্তরিক ভক্তি আর পারিবারিক মিলনমেলার মধ্যে দিয়ে বাঁকুড়ার এই গ্রামীণ আচার আজও বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলার লোকবিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক অনন্য দিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *