কোলাঘাটের মহাপ্রভুর পাদুকা নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ভক্তদের।

পশ্চিম মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- নবদ্বীপ ধামের ধামেশ্বর মন্দির থেকে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতি বিজড়িত চরণ পাদুকা যুগল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট রাধামাধব আশ্রমে বহন করে আনলেন নবদ্বীপধামের একদল গোস্বামী পারিষদগন গন। কোলাঘাটে চলছে সপ্তাহ ব্যাপী রথযাত্রা উৎসব। এদিন এই মহাপ্রভুর চরণপাদুকা দর্শনে স্থানীয় এবং দূর দূরান্তের বহু মানুষ সমবেত হন।
হরিনাম সংকীর্তন সহকারে রাজপথে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। আয়োজন হয়ে ছিল মহাপ্রভুর জীবন ও ভাবাদর্শ নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সমবেত মানুষ জনকে ভোগ প্রসাদে আপ্যায়ন করা হয়। বহু মানুষ সারিবদ্ধ ভাবে লাইন দিয়ে সকাল দশটা থেকে বৈকাল চারটা পর্যন্ত মহাপ্রভুর এই পাদুকা যুগল ভক্তি এবং আগ্রহ সহকারে দর্শন করেন।

উল্লেখ্য,- প্রায় ৫৪০ বছর আগে কাটোয়ায় কেশব ভারতীর কাছে সন্ন্যাস নিয়ে পুরীধামে চলে যান মহাপ্রভু, মা শচীমাতার অনুমতি না নিয়েই। তাই এক বছরের মাথায় শচীমাতাকে দর্শনের জন্য শ্রীচৈতন্যদেব শান্তিপুরে আসেন। মাকে দর্শনের পরেই শ্রীবাস, গদাধরকে সঙ্গে করে কীর্তন করতে নবদ্বীপে আসেন। বিষ্ণু প্রিয়াদেবী তখন বাড়িতে প্রার্থনারত। স্ত্রীর মুখ দর্শন করতে মানা সন্ন্যাসীদের। তাই উঠোনে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন মহাপ্রভু। বিষ্ণু প্রিয়াদেবী ঘর থেকে বের হয়ে স্বামীকে প্রণাম করতে যান। মাথা তুলতেই দেখেন, সামনে মহাপ্রভু নেই। রেখে গিয়েছেন এক জোড়া পাদুকা। ওই দিন রাতেই বিষ্ণু প্রিয়াদেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ পা —‘জন্মভিটের নিম গাছ থেকে কাঠের বিগ্রহ তৈরি কর। তার সঙ্গে হবে পাদুকাযুগলের পূজাও।’ স্বামীর বিরহে কাতর হয়ে পড়েন বিষ্ণু প্রিয়াদেবী। দুঃখ-কষ্ট নিরসনে তিনি স্বামীর এই পাদুকা যুগল আঁকড়ে ধরে পুজো করতে থাকেন। সেই থেকেই মহাপ্রভুর পাদুকা পুজো হয়ে আসছে। পরবর্তীতে বিষ্ণু প্রিয়াদেবী তাঁর ভাই যাদবাচার্যের ছেলে মাধবাচার্যকে অর্পণ করে যান সেই পাদুকাযুগল। ১৯৬০ সালের পর ওই পাদুকা দু’টিকে একটি রুপোর খাপের মধ্যে রাখা হয়। প্রায় পাঁচ কেজি রুপো দিয়ে সেটি বাঁধানো। মহাপ্রভু ধাম মন্দিরের ভিতর চৈতন্যদেবের দারু বিগ্রহের পাশে রুপোর সিংহাসন আর ছাতার নীচে রাখা রয়েছে এই পাদুকাযুগল। আজও নিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়ে আসছে সেগুলি। মহাপ্রভুর চরণ দর্শন করতে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থীরা ধামেশ্বর মন্দিরে ছুটে আসেন। এদিন কোলাঘাটে এই পবিত্র পাদুকা নিয়ে ধর্মপ্রাণ ভক্ত মানুষের মধ্যে উন্মাদনা ও উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত। সমাগম ঘটে বহু মানুষের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *