ভারতের উত্তরকাশির দর্শনীয় কিছু স্থান।

0
20

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়।  আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই   একটি দর্শণীয় স্থান উত্তরকাশি।

উত্তরকাশী  শব্দটির অর্থ হলো উত্তরের কাশী। এটি ভারতের উত্তরাখণ্ডের একটি জেলা শহর এবং এই জেলার সদর দপ্তর। সমুদ্রতল থেকে ১১৫৮ মি উচ্চতায় ভাগীরথী নদীর তীরে এই শহরের অবস্থান। এখানে অসংখ্য মন্দির এবং আশ্রমের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়াও নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং এই শহরেই অবস্থিত। কাশী (বারানসী) অর্থাৎ বারাণসী শহরের সঙ্গে এই শহরের নামের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। বরুণ পর্বতের পাশে বরুণা এবং অসি নদীর সঙ্গমস্থলে এই শহরের অবস্থান। উত্তরকাশিতে অনেক আশ্রম ও মন্দির আছে। কাশি (বেনারসের) নামে এই জায়গাটির নামকরণ প্রভাবিত হয়েছে যা বর্তমানে উত্তরাখন্ডের অন্যতম জনপ্রিয় প্রধান শহর। এটি রাজ্যের একটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়। সারাবছর ধরে এখানে প্রচুর পর্যটক ও পূর্ণার্থীরা আসেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা হিমালয় রেঞ্জের এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।

পর্যটকরা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করে। উত্তরকাশি আশেপাশের কিছু আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ও সংলগ্ন গঙ্গা নদীর অববাহিকার সৌন্দর্য্যর জন্য বিখ্যাত। 

উত্তরকাশিতে ঘোরার জায়গা সমূহ—–


দোদিতাল লেক—


দোদিতাল লেকটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক আকর্ষণীয় জায়গা যা ট্রেকিংয়ের জন্য বিখ্যাত। লেকের জল খুবই স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন। এটি উত্তরকাশির অবশ্য ভ্রমণ করা জায়গা গুলির একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৩০২৪ মিটার। উত্তরকাশি ভ্রমণ কালে প্রথমেই আপনি এই জায়গাটি চয়েজ করতে পরেন। উত্তরকাশি থেকে দোধিতাল লেকের দুরত্ব ২২ কিলোমিটার। দোধিতাল যেতে হলে প্রথমে আপনাকে সঙ্গমছাট্টি যেতে হবে। তরপর ১৯ কিমি ট্রেক করে দোধিতাল লেক পৌছাবেন। ভগবান গণেশের জম্মস্থান হিসেবে সঙ্গমছাট্টিকে ধরা হয়। আপনার রাত কাটানোর জন্য বানরা বা আগোরা নামে গ্রাম রয়েছে। এখানে ট্রেকিং করতে হলে বন দপ্তরের অফিস থেকে পারমিট জোগার করতে হবে। আপনাকে প্রচুর পরিমান শুকনো খাওয়ার ও জল বহন করতে হবে। কারণ সেখানে এসব জোগার করার বিশেষ ব্যবস্থা নেই। ট্রেকিং করে দোধিতাল যাওয়া ও থাকার জন্য মোট ৪ দিন সময় লাগবে।

নচিকেতা লেক—


উত্তরকাশির একটি আকর্ষণীয় ও অবশ্য ভ্রমন করা পর্যটণ কেন্দ্রটির নাম নচিকেতা লেক। নচিকেতা লেকে পর্যটকেরা খুঁজে পাবেন আকর্ষণীয় চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক পরিবেশ। এটি উত্তরকাশির প্রধান শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে। চৌরিঙ্গি খাল থেকে নচিকেতা লেকের ট্রেকিং পথে দুরত্ব ৩-৪ কিলোমিটার। লেকের জল স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। রং বেরঙের মাছ খেলা করছে। বৈদিক যুগে মুনি নচিকেতার নামে এই লেকের নামকরণ করা হয়েছে। নচিকেতা লেকের পাশে নাগ দেবতার মন্দির রয়েছে। আপনি ওখানে গেলে প্রচুর পরিমানে শুকনো খাওয়ার ও জল বহন করুন। কারণ ওখানে খাওয়ার ও পাণীয় জলের ব্যবস্থা নেই।

দায়ারা বুগিয়াল——


দায়ারা বুগিয়াল, প্রাকৃতি সৌন্দর্য্যে ভরা এটি একটি সুন্দর জায়গা, যা ট্রেকিং করার জন্য আদর্শ। প্রথমে দয়ারা বুগিয়ালে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এরপর আপনি সেখানে যেতে পারেন। উত্তরকাশি থেকে লোকাল ট্যাক্সি(জন প্রতি ৮০ টাকা) ভাড়া করে  আপনি পৌছিয়ে যাবেন ভাটয়ারী। এরপর বাতয়ারি থেকে যেতে হবে সোজা রাস্তায়। গাইডের সেভাবে দরকার নেই। রাস্তা চড়াইএর দিকে গিয়েছে। চড়াইয়ের রাস্তা শেষ হলেই পড়বে দায়ারা টপ। আপনি ওখানে গেলে প্রচুর পরিমানে শুকনো খাওয়ার ও জল বহন করুন। কারণ ওখানে খাওয়ার ও পাণীয় জলের ব্যবস্থা নেই। এরপর আপনি এখান থেকে অন্য রাস্তা ধরে যেতে পারেন সর্ব্বোচ্চ চূড়া বাকারিয়া টপ। এছাড়াও বুগিয়ালের অন্য রাস্তা থেকে যাওয়া যেতে পারেন বন্দর পুঞ্চ।

দয়ারা বুগিয়ালে ট্রেকিং করার হলে যেখান থেকে শুরু হয় তা হল বারসু গ্রাম। এখান থেকেই সাধারণত দয়ারা বুগিয়ালের ট্রেকিং শুরু হয়। এটি উত্তরকাশির রাস্তার ধারে অবস্থিত একটি ছোটো গ্রাম। বারসু গ্রামে আপনি প্রকৃতির সুন্দর ও চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক পরিবেশের আস্বাদন করতে পারবেন। এখানে আপনি বিভিন্ন রং বেরঙের প্রজাপতি ও পাখি দেখতে পাবেন। এখানে জিএনভিএনের একটি গেস্ট হাউজ আছে। এছাড়া এখানে হোটেল ও হোম স্টে রয়েছে।

শক্তি মন্দির——


এটি উত্তরকাশি শহরে অবস্থিত একটি ছোটো মন্দির। বাসস্ট্যান্ড থেকে আনুমানিক ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দিরটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এটি গঙ্গার পাশে অবস্থিত। এখানে যে ভগবানের মূর্তি রয়েছে, তা শক্তিদেবী হিসেবে শক্তি ও এণার্জীর প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়। মন্দির চত্বরটি সর্বদাই পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ থাকে। মন্দিরটি বিশ্বনাথ মন্দিরের প্রেমিসেসের ভেতরে অবস্থিত। মন্দিরের ভেতর একটি ত্রিশুল রয়েছে। যা শক্তির প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়।

বিশ্বনাথ মন্দির——


উত্তরকাশির অন্যতম আবশ্যিক ভ্রমন করা পর্যটণ কেন্দ্রটির নাম বিশ্বনাথ মন্দির। এই মন্দিরটি ভগবান শিবের উদ্দ্যেশ্যে উৎসর্গীকৃত হয়েছে। এটি উত্তরকাশি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। উত্তরকাশি বাসস্ট্যান্ড থেকে এর দুরত্ব ৫০০ মিটার। বিশ্বনাথ মন্দিরটি গঙ্গার পাড়ে অবস্থিত। এটি ভারতের অন্যতম আদি মন্দির।  যা শক্তি মন্দিরের বিপরীতে অবস্থিত। এখানে সারা বছর প্রচুর পর্যটক আসেন। বিশেষ করে চারধাম যাত্রার সময় এখানে প্রচুর পূণার্থীরা আসেন। উত্তরকাশির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হল বিশ্বনাথ মন্দির।

নেহেরু ইন্সটিটিউশণ অফ মাউন্টেনিং——


ভারতের একটি অন্যতম বিখ্যাত ইন্সটিটিউট হল নেহেরু মাউন্টেনিং ইন্সটিটিউট। উত্তরকাশিতে এটি তৈরী হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ১৪ই নভেম্বর। এই ইন্সটিটিউটের  নামকরণ করা হয়েছিল ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী জহর লাল নেহেরুর নাম অনুসারে। এই ইন্সটিটিউটের চারিপাশে ঘন জঙ্গল ও পাহাড় দ্বারা আবৃত প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ। উত্তরকাশি প্রধান শহর থেকে এর দুরত্ব ২ কিলোমিটার। এখানে বিভিন্ন পর্বতারোহণ বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া হয়। আরোহণ প্রশিক্ষণ কোর্সের সঙ্গে আরোহণ অভিযান সংগঠন করা হয়। ভারতের প্রথম মহিলা এভারেস্ট আরোহণকারী বাচেন্দ্রি পাল এই সংস্থার ছাত্রী ছিলেন।

কুতেতি দেবী মন্দির—–


গঙ্গার তীরে অবস্থিত কুতেতি দেবী মন্দির। হরি পর্বতের চূড়ার দিকে এটি অবস্থিত।  উত্তরকাশি প্রধান শহর থেকে এর দুরত্ব ২ কিলোমিটার।  এটি তৈরী করেছিলেন মহারাজা কোটার মেয়ে ও জামাই। দেবী কুতেতি তাঁদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রতষ্ঠা করার জন্য। দেবী কুতেতি ভগবান দূর্গার আরেক রূপ। দেবী কুতেতির দেখান স্বপ্ন অনুসারে এই মন্দির তৈরী করা হয়েছিল। পর্যটকরা এখানে গিয়ে মন্দির দেখার পাশাপাশি পাহাড়ের উপর থেকে কাছাকাছি লেক,সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ল্যান্ডস্কেপ এবং ঝর্ণা  উপভোগ করেন। 

মনেরিবাঁধ——


উত্তরকাশির একটি আকর্ষণীয় পর্যটণ কেন্দ্রটির নাম মনেরি বাঁধ। এটি উত্তরকাশি থেকে ১২ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত।  এটি গঙ্গোত্রি যাওয়ার পথে পড়ে। ভাগীরথি নদীর উপর কংক্রিটের বাঁধ হল এই মনেরী বাঁধ। বর্তমানে এটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। মনেরী বাঁধ থেকে আপনি সুন্দর চোখ জুড়ানে  দৃশ্য্ উপভোগ করতে পারবেন।

কাছাকাছি ঘোরার আরো কিছু জায়গা—-

জাঙ্কি চাট্টি , উখিমঠ, রুদ্র্রপ্রয়াগ, গঙ্গোত্রী, মুসৌরি, বারকোট , রিষিকেশ , দেরাদুন  , হরিদ্বার , নিউ তেহেরী , শ্রীনগর(উত্তরাখন্ড) , হরসিল।

উত্তরকাশিতে অনেক আকর্ষণীয় ঘোরার জায়গা রয়েছে। প্রচুর পর্যটক এইসব জায়গা ঘুরতে এখানে আসেন। হর কি দুন, গোমুখ, তপোবন, দধিতাল লেক, দয়ারা বুগিয়াল সহ বিভিন্ন জায়গায় ট্রেক করতে হলে এখান থেকে পারমিশন (পোরচি) নিতে হবে। পারমিশন এর জন্য সামান্য টাকা দিতে হয়। 

উত্তরকাশি যাওয়ার সেরা সময়—-


গরমে এখানে অতি সুন্দর ও মনোরম আবহাওয়া বর্তমান। গরমের সময় উপরের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রীর আশেপাশে থাকে। আর নীচেরটা ১৩ ডিগ্রী। শীতে গড় তাপমাত্রা ০-১২ ডিগ্রী পর্যন্ত হয়। শীতে মারাত্বক ঠান্ডা পড়ে। এখানে সারা বছরই ঘোরা যায়। তবে গরম ও শীতে ঘোরার মজাটাই আলাদা।

উত্তরকাশী হিমালয়ের একটি অত্যন্ত প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র। অসংখ্য সাধু সন্ত এখানে বিমুক্তকামী হয়ে সাধনা করেছিলেন। পবিত্র এই তীর্থক্ষেত্রকে অর্ধচন্দ্রাকারে বেষ্টন করে বয়ে চলেছে উত্তরবাহিনী গঙ্গা।এই উত্তরকাশীতেই জ্যোতিরধামের রাজাকে উত্তরাখণ্ডে বৈদিক ধর্ম পুনস্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগের করার উপদেশ দিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন আচার্য শঙ্কর।

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়।  আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই   একটি দর্শণীয় স্থান উত্তরকাশি।

উত্তরকাশী  শব্দটির অর্থ হলো উত্তরের কাশী। এটি ভারতের উত্তরাখণ্ডের একটি জেলা শহর এবং এই জেলার সদর দপ্তর। সমুদ্রতল থেকে ১১৫৮ মি উচ্চতায় ভাগীরথী নদীর তীরে এই শহরের অবস্থান। এখানে অসংখ্য মন্দির এবং আশ্রমের দেখা পাওয়া যায়। এছাড়াও নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং এই শহরেই অবস্থিত। কাশী (বারানসী) অর্থাৎ বারাণসী শহরের সঙ্গে এই শহরের নামের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। বরুণ পর্বতের পাশে বরুণা এবং অসি নদীর সঙ্গমস্থলে এই শহরের অবস্থান। উত্তরকাশিতে অনেক আশ্রম ও মন্দির আছে। কাশি (বেনারসের) নামে এই জায়গাটির নামকরণ প্রভাবিত হয়েছে যা বর্তমানে উত্তরাখন্ডের অন্যতম জনপ্রিয় প্রধান শহর। এটি রাজ্যের একটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়। সারাবছর ধরে এখানে প্রচুর পর্যটক ও পূর্ণার্থীরা আসেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা হিমালয় রেঞ্জের এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র।

পর্যটকরা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে উপভোগ করে। উত্তরকাশি আশেপাশের কিছু আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র ও সংলগ্ন গঙ্গা নদীর অববাহিকার সৌন্দর্য্যর জন্য বিখ্যাত। 

উত্তরকাশিতে ঘোরার জায়গা সমূহ—–


দোদিতাল লেক—


দোদিতাল লেকটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক আকর্ষণীয় জায়গা যা ট্রেকিংয়ের জন্য বিখ্যাত। লেকের জল খুবই স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। প্রচুর পর্যটক এখানে আসেন। এটি উত্তরকাশির অবশ্য ভ্রমণ করা জায়গা গুলির একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৩০২৪ মিটার। উত্তরকাশি ভ্রমণ কালে প্রথমেই আপনি এই জায়গাটি চয়েজ করতে পরেন। উত্তরকাশি থেকে দোধিতাল লেকের দুরত্ব ২২ কিলোমিটার। দোধিতাল যেতে হলে প্রথমে আপনাকে সঙ্গমছাট্টি যেতে হবে। তরপর ১৯ কিমি ট্রেক করে দোধিতাল লেক পৌছাবেন। ভগবান গণেশের জম্মস্থান হিসেবে সঙ্গমছাট্টিকে ধরা হয়। আপনার রাত কাটানোর জন্য বানরা বা আগোরা নামে গ্রাম রয়েছে। এখানে ট্রেকিং করতে হলে বন দপ্তরের অফিস থেকে পারমিট জোগার করতে হবে। আপনাকে প্রচুর পরিমান শুকনো খাওয়ার ও জল বহন করতে হবে। কারণ সেখানে এসব জোগার করার বিশেষ ব্যবস্থা নেই। ট্রেকিং করে দোধিতাল যাওয়া ও থাকার জন্য মোট ৪ দিন সময় লাগবে।

নচিকেতা লেক—


উত্তরকাশির একটি আকর্ষণীয় ও অবশ্য ভ্রমন করা পর্যটণ কেন্দ্রটির নাম নচিকেতা লেক। নচিকেতা লেকে পর্যটকেরা খুঁজে পাবেন আকর্ষণীয় চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক পরিবেশ। এটি উত্তরকাশির প্রধান শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে। চৌরিঙ্গি খাল থেকে নচিকেতা লেকের ট্রেকিং পথে দুরত্ব ৩-৪ কিলোমিটার। লেকের জল স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। রং বেরঙের মাছ খেলা করছে। বৈদিক যুগে মুনি নচিকেতার নামে এই লেকের নামকরণ করা হয়েছে। নচিকেতা লেকের পাশে নাগ দেবতার মন্দির রয়েছে। আপনি ওখানে গেলে প্রচুর পরিমানে শুকনো খাওয়ার ও জল বহন করুন। কারণ ওখানে খাওয়ার ও পাণীয় জলের ব্যবস্থা নেই।

দায়ারা বুগিয়াল——


দায়ারা বুগিয়াল, প্রাকৃতি সৌন্দর্য্যে ভরা এটি একটি সুন্দর জায়গা, যা ট্রেকিং করার জন্য আদর্শ। প্রথমে দয়ারা বুগিয়ালে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এরপর আপনি সেখানে যেতে পারেন। উত্তরকাশি থেকে লোকাল ট্যাক্সি(জন প্রতি ৮০ টাকা) ভাড়া করে  আপনি পৌছিয়ে যাবেন ভাটয়ারী। এরপর বাতয়ারি থেকে যেতে হবে সোজা রাস্তায়। গাইডের সেভাবে দরকার নেই। রাস্তা চড়াইএর দিকে গিয়েছে। চড়াইয়ের রাস্তা শেষ হলেই পড়বে দায়ারা টপ। আপনি ওখানে গেলে প্রচুর পরিমানে শুকনো খাওয়ার ও জল বহন করুন। কারণ ওখানে খাওয়ার ও পাণীয় জলের ব্যবস্থা নেই। এরপর আপনি এখান থেকে অন্য রাস্তা ধরে যেতে পারেন সর্ব্বোচ্চ চূড়া বাকারিয়া টপ। এছাড়াও বুগিয়ালের অন্য রাস্তা থেকে যাওয়া যেতে পারেন বন্দর পুঞ্চ।

দয়ারা বুগিয়ালে ট্রেকিং করার হলে যেখান থেকে শুরু হয় তা হল বারসু গ্রাম। এখান থেকেই সাধারণত দয়ারা বুগিয়ালের ট্রেকিং শুরু হয়। এটি উত্তরকাশির রাস্তার ধারে অবস্থিত একটি ছোটো গ্রাম। বারসু গ্রামে আপনি প্রকৃতির সুন্দর ও চোখজুড়ানো প্রাকৃতিক পরিবেশের আস্বাদন করতে পারবেন। এখানে আপনি বিভিন্ন রং বেরঙের প্রজাপতি ও পাখি দেখতে পাবেন। এখানে জিএনভিএনের একটি গেস্ট হাউজ আছে। এছাড়া এখানে হোটেল ও হোম স্টে রয়েছে।

শক্তি মন্দির——


এটি উত্তরকাশি শহরে অবস্থিত একটি ছোটো মন্দির। বাসস্ট্যান্ড থেকে আনুমানিক ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দিরটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এটি গঙ্গার পাশে অবস্থিত। এখানে যে ভগবানের মূর্তি রয়েছে, তা শক্তিদেবী হিসেবে শক্তি ও এণার্জীর প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়। মন্দির চত্বরটি সর্বদাই পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ থাকে। মন্দিরটি বিশ্বনাথ মন্দিরের প্রেমিসেসের ভেতরে অবস্থিত। মন্দিরের ভেতর একটি ত্রিশুল রয়েছে। যা শক্তির প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়।

বিশ্বনাথ মন্দির——


উত্তরকাশির অন্যতম আবশ্যিক ভ্রমন করা পর্যটণ কেন্দ্রটির নাম বিশ্বনাথ মন্দির। এই মন্দিরটি ভগবান শিবের উদ্দ্যেশ্যে উৎসর্গীকৃত হয়েছে। এটি উত্তরকাশি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। উত্তরকাশি বাসস্ট্যান্ড থেকে এর দুরত্ব ৫০০ মিটার। বিশ্বনাথ মন্দিরটি গঙ্গার পাড়ে অবস্থিত। এটি ভারতের অন্যতম আদি মন্দির।  যা শক্তি মন্দিরের বিপরীতে অবস্থিত। এখানে সারা বছর প্রচুর পর্যটক আসেন। বিশেষ করে চারধাম যাত্রার সময় এখানে প্রচুর পূণার্থীরা আসেন। উত্তরকাশির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হল বিশ্বনাথ মন্দির।

নেহেরু ইন্সটিটিউশণ অফ মাউন্টেনিং——


ভারতের একটি অন্যতম বিখ্যাত ইন্সটিটিউট হল নেহেরু মাউন্টেনিং ইন্সটিটিউট। উত্তরকাশিতে এটি তৈরী হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ১৪ই নভেম্বর। এই ইন্সটিটিউটের  নামকরণ করা হয়েছিল ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী জহর লাল নেহেরুর নাম অনুসারে। এই ইন্সটিটিউটের চারিপাশে ঘন জঙ্গল ও পাহাড় দ্বারা আবৃত প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ। উত্তরকাশি প্রধান শহর থেকে এর দুরত্ব ২ কিলোমিটার। এখানে বিভিন্ন পর্বতারোহণ বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া হয়। আরোহণ প্রশিক্ষণ কোর্সের সঙ্গে আরোহণ অভিযান সংগঠন করা হয়। ভারতের প্রথম মহিলা এভারেস্ট আরোহণকারী বাচেন্দ্রি পাল এই সংস্থার ছাত্রী ছিলেন।

কুতেতি দেবী মন্দির—–


গঙ্গার তীরে অবস্থিত কুতেতি দেবী মন্দির। হরি পর্বতের চূড়ার দিকে এটি অবস্থিত।  উত্তরকাশি প্রধান শহর থেকে এর দুরত্ব ২ কিলোমিটার।  এটি তৈরী করেছিলেন মহারাজা কোটার মেয়ে ও জামাই। দেবী কুতেতি তাঁদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রতষ্ঠা করার জন্য। দেবী কুতেতি ভগবান দূর্গার আরেক রূপ। দেবী কুতেতির দেখান স্বপ্ন অনুসারে এই মন্দির তৈরী করা হয়েছিল। পর্যটকরা এখানে গিয়ে মন্দির দেখার পাশাপাশি পাহাড়ের উপর থেকে কাছাকাছি লেক,সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা ল্যান্ডস্কেপ এবং ঝর্ণা  উপভোগ করেন। 

মনেরিবাঁধ——


উত্তরকাশির একটি আকর্ষণীয় পর্যটণ কেন্দ্রটির নাম মনেরি বাঁধ। এটি উত্তরকাশি থেকে ১২ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত।  এটি গঙ্গোত্রি যাওয়ার পথে পড়ে। ভাগীরথি নদীর উপর কংক্রিটের বাঁধ হল এই মনেরী বাঁধ। বর্তমানে এটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। মনেরী বাঁধ থেকে আপনি সুন্দর চোখ জুড়ানে  দৃশ্য্ উপভোগ করতে পারবেন।

কাছাকাছি ঘোরার আরো কিছু জায়গা—-

জাঙ্কি চাট্টি , উখিমঠ, রুদ্র্রপ্রয়াগ, গঙ্গোত্রী, মুসৌরি, বারকোট , রিষিকেশ , দেরাদুন  , হরিদ্বার , নিউ তেহেরী , শ্রীনগর(উত্তরাখন্ড) , হরসিল।

উত্তরকাশিতে অনেক আকর্ষণীয় ঘোরার জায়গা রয়েছে। প্রচুর পর্যটক এইসব জায়গা ঘুরতে এখানে আসেন। হর কি দুন, গোমুখ, তপোবন, দধিতাল লেক, দয়ারা বুগিয়াল সহ বিভিন্ন জায়গায় ট্রেক করতে হলে এখান থেকে পারমিশন (পোরচি) নিতে হবে। পারমিশন এর জন্য সামান্য টাকা দিতে হয়। 

উত্তরকাশি যাওয়ার সেরা সময়—-


গরমে এখানে অতি সুন্দর ও মনোরম আবহাওয়া বর্তমান। গরমের সময় উপরের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রীর আশেপাশে থাকে। আর নীচেরটা ১৩ ডিগ্রী। শীতে গড় তাপমাত্রা ০-১২ ডিগ্রী পর্যন্ত হয়। শীতে মারাত্বক ঠান্ডা পড়ে। এখানে সারা বছরই ঘোরা যায়। তবে গরম ও শীতে ঘোরার মজাটাই আলাদা।

উত্তরকাশী হিমালয়ের একটি অত্যন্ত প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র। অসংখ্য সাধু সন্ত এখানে বিমুক্তকামী হয়ে সাধনা করেছিলেন। পবিত্র এই তীর্থক্ষেত্রকে অর্ধচন্দ্রাকারে বেষ্টন করে বয়ে চলেছে উত্তরবাহিনী গঙ্গা।এই উত্তরকাশীতেই জ্যোতিরধামের রাজাকে উত্তরাখণ্ডে বৈদিক ধর্ম পুনস্থাপনের কাজে আত্মনিয়োগের করার উপদেশ দিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন আচার্য শঙ্কর।

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here