বালুরঘাট, নিজস্ব সংবাদদাতা:- কেন্দ্রের উদাসীনতায় বিগত ৮ বছরেও এগোয়নি জমি চিহ্নিতকরণ বা অধিগ্রহণের কাজ। সীমান্তবর্তী হিলির স্থলবন্দর বা ল্যান্ডপোর্ট চালু হওয়াটা কার্যত বিঁশবাও জলে। এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এনিয়ে স্থানীয় বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল।
তিনদিক ঘেরা ২৫২ কিলোমটার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। সীমান্তবর্তী এলাকার মধ্যে হিলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। হিলি সীমান্তে থাকা ইমিগ্রেশান চেক পোস্ট দিয়ে চলে আন্তর্জাতিক আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য। এই চেকপোস্ট দিয়েই দুদেশের মানুষের বৈধভাবে চলে যাতায়াত। বানিজ্যিক সুবিধায় হিলিতে স্থল বন্দরের (ল্যান্ডপোর্ট ) প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল বহু আগেই। এই বন্দর গড়ে তোলবার দাবিতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য স্তরের নানান পর্যায়ে বহু দরবার করেছে হিলির আমদানি ও রফতানিকারীরা। আমদানি রফতানিকারী সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত থেকে লরি বোঝায় পেয়াজ, রসুন, লঙ্কা, ফলমূল, মাছ এবং অন্যান্য কাঁচামালের পাশাপাশি চিনি, জিরা, ডাল, পোশাক, সহ বহু সামগ্রী যায় বাংলাদেশে। আবার বাংলাদেশ থেকে এপারে আসে ইলিশ মাছ ও কিছু মশলা সামগ্রী। এই চেকপোস্ট দিয়ে চলা বাণিজ্য থেকেই ভারত সরকারের শুল্ক আদায় হয় মাসে অন্তত ৩০ কোটি টাকা। তবে স্থল বন্দর না থাকায় এই ব্যবসা করতে গিয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয় মাঝে মধ্যে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় আমদানি রফতানিকারীদের। আবার শুল্ক আদায় কমে যায় ভারত সরকারের। কখনও বাংলাদেশের অস্থীরতা এবং আচলাবস্তায় বন্ধ হয়ে যায় হিলির আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট। ফলে সে সময় পণ্য পরিবহনকারী হাজার হাজার ট্রাক ও লরিগুলি আটকে পরে হিলির রাস্তায় । অনিদৃষ্টকালের ওই বন্ধতে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা রাজ্য ও ভিন রাজ্যের গাড়িগুলিতে পচতে থাকে কাঁচামাল । সেখানে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়িদের। এমন আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে বার বার দাবি তোলা হয়েছিল স্থলবন্দরের। এই বন্দর হলে দীর্ঘ সময় ঠাণ্ডা ঘরে রাখা যাবে কাঁচামাল। এছাড়া বন্দরের সুবন্দবস্ত পরিবেশে থাকতে পারবে গাড়ির চালক সহ এই কারবারে যুক্ত মানুষজন। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল এখানে একটি স্থল বন্দর তৈরির। জমি চিহ্নিতকরনে ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির একটি দল হিলিতে আসে ২০১৫ অক্টোবর মাসে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দফায় দফায় তিনটি জায়গা দেখা হয়। হিলির উজালে ১০ একর জমিটি প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ন্যায্য দাম পেলে জমি দিতেও রাজি ছিল জমির মালিকরা। তবে দীর্ঘ কয়েক বছরেও কোন সঙ্কেত মেলেনি ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির পক্ষ থেকে। স্বাভাবিক ভাবেই হিলির প্রয়োজনীয় স্থলবন্দর তৈরি এখন বিশবাঁও জলে বলেই দাবি। প্রশ্ন উঠেছে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের ভূমিকা নিয়ে।
হিলির রফতানি ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল নেতা কৌশিক মাহাত বলেন, স্থলবন্দর তৈরির প্রয়োজনে সুকান্ত মজুমদার সঙ্গে দরবার করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্ত কিছু হয়নি। কৌশিকবাবুর কথায়, সুকান্ত বাবুরা হিলির তিওরে আয়ুষ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। সেটিও বিঁশবাও জলে। এমনকি রাজ্য সরকার বালুরঘাট বিমানবন্দরের কাজ সম্পূর্ন করে ফেললেও কেন্দ্র ছাড়পত্র দিচ্ছেনা। হিলির স্থলবন্দর আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা। সুকান্ত বাবুর প্রতিশ্রুতি বাস্তবে পরিণত হয়না এখানে।