নিজস্ব সংবাদ দাতা, দক্ষিণ দিনাজপুর:- কৃষি নির্ভর জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে জেলার কৃষিকাজ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চাষিরা জলের অভাবে যেমন ধান লাগাতে পারছেন না তেমনি অপরদিকে জল না থাকায় পাট পচাতে পারছেন না। সমগ্র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় কম বেশি একই চিত্র ধরা পড়েছে।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে জুলাই মাস ধান লাগানোর আদর্শ সময় কিন্তু বৃষ্টির অভাবে সারা জেলাতে চাষিরা ধান লাগাতে পারছেন না।
বালুঘাট ব্লকের কৃষক গুপিন মূর্মু বলেন জলের অভাবে এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে ধান এবং পাট চাষ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশিরভাগ কৃষকেরা জমিতে ধান লাগাতে পারেনি এবং পাট পচানো যাচ্ছে না। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হব।
বালুরঘাট ব্লকের আরেক কৃষক শিবু মুর্মু বলেন পাট বৃষ্টির জন্য কাটতে পারিনি। কাটা হলেও কোথায় জাগ দেওয়া হবে সেটা একটা বিরাট সমস্যা। উপায়ান্তর না দেখে নদীতে পাট ভিজাতে নিয়ে যাচ্ছি। ধান চাষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন বৃষ্টির অভাবে বাধ্য হয়ে জল সেচের মাধ্যমে ধান চাষ করতে হচ্ছে কিন্তু এতে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি জটিল। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে আমরা ভীষণভাবে বিপদে পড়বো।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক প্রফেসর জ্যোতির্ময় কারফার্মা বলেন জুলাই মাসে দক্ষিণ দিনাজপুরে সাধারণত ৩৩০মিলিলিটারের মত বৃষ্টি হয় কিন্তু এবছর জুলাই মাসে এখনো পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৪০ মিলিলিটারের মত। সুতরাং বৃষ্টির ঘাটতি প্রায় ৪০ পার্সেন্টের মত। তিনি বলেন জুন মাসে ২৫০ মিলিলিটারের মতো বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে ১৫০ মিলিলিটার। কাজেই বৃষ্টির ঘাটতিতে ধান লাগানো ব্যাহত হচ্ছে। কৃষিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের জল সেচের মাধ্যমে ধান লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জ্যোতির্ময় বাবু বলেন যেহেতু জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে সেজন্য জলসেচ ছাড়া কোন উপায় নেই। দক্ষিণ দিনাজপুরে এক লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর ধান চাষ হয়। এ বছরে ৩০% মতো জমিতে ধান লাগানো এখনো পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন হয়তো পরবর্তীতে বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিক হলে বাকি জমিতে ধান লাগানো সম্ভব হবে। পাট ভিজানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন এটা একটা বড় সমস্যা। এ সমস্যা থেকে বের হতে গেলে জলসেচ করে জল মজুত করতে হবে। সেখানে পাট ভিজিয়ে তন্তু বের করতে হবে। তিনি বলেন পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। পূর্বে দক্ষিণ দিনাজপুরে এরকম বৃষ্টির ঘাটতি দেখা যায়নি। হতে পারে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সমবন্টন না হলে কৃষি ক্ষেত্রে তার প্রভাব নেতিবাচক হবে। এমনকি দেখা যাচ্ছে পুকুরে মাছ চাষের ক্ষেত্রেও জলের অভাবে পাম্পের সাহায্যে জল মজুত করে সেখানে মাছ চাষ হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন হয়তো জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বৃষ্টি স্বাভাবিক হলে বাকি জমিগুলিতে ধান লাগানো যাবে।