তর্পণ বৈদিক অনুশীলনের একটি শব্দ যা ঐশ্বরিক সত্তার প্রতি কোন কিছু নিবেদন করাকে বোঝায়। তর্পণ শব্দটার উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত ‘তৃপ্’ (অর্থাৎ সন্তুষ্ট করা) থেকে। হিন্দুধর্মে দেবতা, ঋষি ও মৃত পূর্বপুরুষদের (পিতৃকুল ও মাতৃকুল) উদ্দেশ্যে জল নিবেদন করে তাঁদের সন্তুষ্ট করার পদ্ধতিকে তর্পণ বলা হয়। বংশের যে সকল পিতৃপুরুষ পরলোক গমন করেছেন, তাঁদের প্রীতির উদ্দেশ্যে মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক স-তিল জল (তিল মেশানো জল) দান করে সাধারণত পুত্রসন্তানেরা পিতৃতর্পণ করে থাকেন। এভাবে তর্পণ করাকে আবার তিল তর্পণও বলে। হিন্দুশাস্ত্রে নানারকম তর্পণের কথা বলা হয়েছে। যেমন, দেব তর্পণ, মনুষ্য তর্পন, ঋষি তর্পণ, দিব্যপিতৃ তর্পন, যম তর্পণ, ভীষ্ম তর্পণ, পিতৃ তর্পণ, মাতৃ তর্পণ, অগ্নিদগ্ধাদি তর্পন, রাম তর্পন ও লক্ষণ তর্পণ ইত্যাদি। এর মধ্যে পিতৃতর্পণ রীতিই সাধারণ মানুষের মধ্যে অধিক প্রচলিত। এর অপর নাম পিতৃযজ্ঞ। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে পিতৃতর্পণ পালিত হয়। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গণেশ উৎসবের পরবর্তী পূর্ণিমা (ভাদ্র পূর্ণিমা) তিথিতে পিতৃপক্ষ শুরু হয় আবার উত্তর ভারত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল ও বাংলাদেশে ভাদ্রের পরিবর্তে দুর্গাপূজার পূর্বে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষকে পিতৃপক্ষ বলে এসব স্থানে মহালয়া অমাবস্যায় বা পিতৃপক্ষ অমাবস্যায় পিতৃতর্পণ করা হয়। তবে দুর্গাপূজার সাথে পিতৃতর্পণের সরাসরি কোন যোগ নেই। হিন্দুধর্মে পিতৃতর্পণের দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এইদিন তিথিনিয়মের বাইরে সব পূর্বপুরুষের শ্রাদ্ধ করা যায়। এজন্য যে সব ব্যক্তি কোন কারণে পূর্বপুরুষের সাংবাৎসরিক শ্রাদ্ধ করতে পারেন না, তাঁরা এই দিনে পিতৃতর্পণ করে থাকেন।
।।সংগৃহীত।।
Leave a Reply