নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ভারতরত্ন সি ভি রমন, যিনি রামন ক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।

স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, ভারতীয় বিজ্ঞানী যিনি রামন প্রভাব আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত।  তিনি ১৯৩০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। নোবেল পুরস্কারের বিষয় ছিল আলোর বিচ্ছুরণের ক্ষেত্রে তার মৌলিক আবিষ্কার।  তাঁর ভাইপো সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরও ১৯৮৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন।

রামনের জন্ম হয়েছিল ১৮৮৮ খ্রিষ্টান ৭ই নভেম্বর তামিলনাড়ুর তিরুচিরপল্লী শহরের তিরুবনইক্কবল গ্রামে। তাঁর পিতা চন্দ্রশেখর আইয়ার ছিলেন পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক।  আট ভাইবোনের মধ্যে পালন ছিলেন মেজ।

 মায়ের নাম পার্বতী তিনি খুব সংস্কৃতিমনা মহিলা ছিলেন ।

রামন শৈশবকাল থেকেই ছিলেন খুব বুদ্ধিমান ও জ্ঞানপিপাসু । মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। ১৯০৪ সালে মাত্র ষােল বছর বয়সে মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে বি- এ পাস করেন । সেবার তিনি একাই প্রথম শ্রেণী পেয়েছিলেন ।

 রামন উক্ত কলেজ থেকেই পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম . এ . পাস করেন ।

অল্প বয়সে, রমন বিসাখাপত্তনম শহরে চলে যান এবং সেন্ট আলয়সিয়াস অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেন। তিনি ১১ বছর বয়সে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৩ বছর বয়সে বৃত্তির মাধ্যমে এফ.এ পরীক্ষার পাশ করেন (আজকের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার সমতুল্য, পিইউসিপিডিসি এবং +২)।

১৯০২ সালে রমণ মাদ্রাজে (বর্তমানে চেন্নাই) প্রেসিডেন্সী কলেজ, চেন্নাই যোগ দেন যেখানে তাঁর পিতা গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে একজন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯০৪ সালে তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর অব আর্টস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং পদার্থবিদ্যায় স্বর্ণপদক পান। ১৯০৭ সালে সর্বোচ্চ ডিস্টিংসান নিয়ে তিনি মাস্টার অফ সায়েন্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

এম . এ . পাস করার পর কলকাতার এ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের অফিসে একটা মর্যাদাসম্পন্ন চাকরি গ্রহণ করেন । 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য স্যার আশুতােষ মুখােপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে একটা অধ্যাপনার পদে চাকরি দিতে চাইলেন । রামন তাঁর মােটা বেতনের সরকারী চাকরি ছেড়ে দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যােগদান করেন । 


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হওয়ার পর ১৯১৭ সালে রমন সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। একই সময়ে, তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স (আইএসিএস) -এ গবেষণা চালিয়ে যান, যেখানে তিনি অবৈতনিক সচিব ছিলেন। রমন তার কর্মজীবনের এই সময়টিকে সুবর্ণ যুগ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। অনেক শিক্ষার্থী আইএসিএস এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নিকট সমবেত হন। ১৯২৬ সালে অধ্যাপক রমন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানের সাময়িক পত্রিকা প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তিনি প্রথম সম্পাদক ছিলেন। সাময়িক পত্রিকার দ্বিতীয় খণ্ডে রমন প্রভাব আবিষ্কারের প্রতিবেদন সমেত তাঁর বিখ্যাত নিবন্ধ “একটি নতুন বিকিরণ” প্রকাশিত হয়।

১৯২৮ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, তারিখে রমন সহযোগীদের সহায়তায় আইএসিএস-এ কেএএসএস কৃষ্ণানসহ আলোর বিচ্ছ্ররনের ওপর পরীক্ষানিরীক্ষার নেতৃত্ব দেন যেসময় তিনি যা আবিষ্কার করেন তা বর্তমানে রমন প্রভাব বলে জানা যায়।  এই সময়ের একটি বিস্তৃত বিবরণ জি ভেঙ্কটরমনের জীবনীর নথীতে পাওয়া যায়।  এটি তাৎক্ষনিকভাবে পরিষ্কার ছিল যে এই আবিষ্কারটি অতীব প্রয়োজনীয় ছিল। এটি আলোর কোয়ান্টাম প্রকৃতির আরও প্রমাণ দিয়েছে । রমনের কে.এস. কৃষ্ণানের সঙ্গে জটিল পেশাদার সম্পর্ক ছিল, যিনি আশ্চর্যজনকভাবে পুরস্কারটি ভাগাভাগি করেননি, কিন্তু নোবেল বক্তৃতাও উল্লেখযোগ্যভাবে উল্লেখ করেছেন।

রমন স্পেকট্রোস্কোপি এই ঘটনাটির উপর ভিত্তি করে এসেছিল, এবং আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ১৯২৯ সালে রয়েল সোসাইটিতে তাঁর রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলেন। রমন ১৯২৯ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১৬ তম অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন। তাকে একটি নাইটহুড এবং পদক প্রদান করা হয় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করা হয়। রমণ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জেতায় আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তবে ১৯২৪ সালে নোবেল পুরস্কার ওলিন রিচার্ডসন এবং ১৯২৬ সালে লুই ডি ব্রোগি পাওয়াতে হতাশ হয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি পুরস্কার জেতার এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, যে তিনি জুলাইতে টিকেট কিনেছিলেন, যদিও পুরস্কারগুলি নভেম্বরে ঘোষণা করা হতো, এবং যদি সংবাদটি না আসে সেই ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে, পুরস্কারের ঘোষণার খবরের জন্য প্রতিটি দিনের সংবাদপত্র খুঁটিয়ে দেখতেন। অবশেষে তিনি ১৯৩০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন “আলোর বিকিরণ এবং রমন প্রভাব আবিষ্কারের জন্য”।  বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য তিনি প্রথম এশীয় এবং প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ ছিলেন। তাঁর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ভারতীয়) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯১৩ সালে।

১৯৭০ সালের ২১শে নভেম্বর রমনের মৃত্যু হয়।

 রমন এফেক্ট আবিষ্কারের দিনটি স্মরণে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটিতে সারা ভারতের সবগুলো বিজ্ঞান গবেষণাগার সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে এ দিনটির ভূমিকা অনেক ।

।।সংগৃহীত : উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েব পেজ।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *