আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ- গরুর বিয়ে বাড়িতে বাড়িতে। হ্যাঁ ঠিকই শুনলেন, গরুর বিয়ে হল বাঁকুড়া জেলায়। প্রতি বছর অমাবস্যার পর প্রতিপদের দিন গরুর বিয়ে হয় বাঁকুড়ায়। ঠিক যেভাবে মানুষের বিয়ে হয়, সব রকম প্রথা মেনে জাঁকজমক সহকারে গরুর বিয়ে হল বাড়িতে বাড়িতে। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন একাধিক গরু। বিয়ে বলে কথা! সকাল সকাল গরুদের স্নান করিয়ে বিভিন্ন রং দিয়ে ছাপ দেওয়া হল গায়ে।গলায় পরানো হল মালা।পায়ে জল ঢেলে সেই জল গামছা দিয়ে মোছানো হয়।এরপর গরুর পায়ে ঘুঙুর পরিয়ে,মাথা আঁচড়ে দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। বিয়ের পর খাওয়ানো হয় মিষ্টি খাওয়ানো ।এই চিত্র দেখা গেল বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের সিমুলিয়া দশরথবাটি বাড়িতে বাড়িতে।সিমুলিয়া দশরথবাটি গ্ৰামের মানুষেরা বলেন, “ছোট থেকেই দেখে আসছি দাদু,বাবারা এই ভাবে গরুর বিয়ে দিত। আজ আমরা দিচ্ছি।সারা বছর ধরে সেবা করে যে গরু, তাকে তো কিছুটা ফিরিয়ে দিতেই হবেই।”
মানুষের বিয়েতে যে যে জিনিস লাগে সেই সব জিনিস ব্যবহার করা হয় গরুর বিয়েতেও। পান, সুপারি ,তেল ,হলুদ এবং কলা। থালায় রাখা হয় প্রত্যেকটা জিনিস। এ যেন মানুষের বিয়েকে ছাপিয়ে যাচ্ছে গরুর বিয়ে। অবশেষে থাকে আয়না। নিয়ম রয়েছে আয়নায় মুখ দেখাতে হবে গরুটির। আয়নায় গরুর প্রতিবিম্ব না পড়লে সেই বিয়ে সম্পূর্ণ হবে না। তাক লাগানো এই প্রথা দেখা গেল বাঁকুড়া জেলায়। ঘরে ঘরে করা হল গরুর বিয়ে।
তবে সময় যত এগিয়ে চলেছে। আধুনিকতার হাওয়া লাগছে, প্রান্তিক জেলা বাঁকুড়াতেও। এখন আর গরু পাওয়া যায় না। বাড়িতে কমেছে গরুর সংখ্যা। ফলেই এই প্রথা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সারাবছর একটি গরু কতই না সাহায্য করে একটি গৃহস্থ বাড়িতে। দুধ দেওয়া কিংবা লাঙ্গল টানা। গরুর গোবর ব্যবহার করা হয় জ্বালানি হিসেবে। তাই গরুকে একটি কৃতজ্ঞতা দেখানোর জন্যে এই পরব পালিত হয়।