একদিকে রয়েছে পীর বাবার মাজার অন্যদিকে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী দেবী জগদ্ধাত্রী মন্দির। আর দুটি পিঠস্থান একই জায়গায় অবস্থিত হওয়ার কারণে নামকরণ হয় পীরেরহাট বারোয়ারি। জানা গেছে নদীয়ার শান্তিপুর সূত্রাগড় অঞ্চলে প্রায় ৩০০ বছর আগে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় পুজোর সূচনা করেছিলেন দেবী জগদ্ধাত্রীর। এরপর থেকেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্রর নামে পূজোর সংকল্প করা হয়, তবে চিরাচরিত নিয়মের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই দেবী পূজোর। পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, একটা সময় এখানে একটি হাট বসত এই পীর বাবার মাজারের পাশেই। সেখানে বাজারের কর আদায় করত ও খাজনা আদায় করতো রাজা।
যবে থেকে রাজবাড়ীতে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন হয় তারপরে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের উদ্যোগে এই পীরের হাট এলাকায় সূচনা হয় পুজোর, এবং এই পুজোর প্রথম পুজো দেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বয়ং, তারপর থেকেই চিরাচরিত ভাবে বৈষ্ণব মতে আরাধনা হয়ে আসছে দেবীর। তবে এই পীরেরহাট সম্পর্কে রয়েছে এক ঐতিহ্যময় ব্যাখ্যা। একটা সময় ওই স্থানে হিন্দু ও মুসলিমের মেলবন্ধনে এই পূজোর অনুষ্ঠিত হতো, যেখানে কোন ধর্মীয় ভেদাভেদ ছিলনা, বর্তমানেও ধর্মীয় ভেদাভেদ ছাড়াই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আরাধনা হয় দেবীর। এখন হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হলেও ওই পীর মাজার দেখাশোনা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরাই, তাতেও খুব একটা ভেদাভেদ দেখা যায় না। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরাই পীর মাজার দেখাশোনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন হিন্দুদেরকেই। এতে গেল কালের কথা, এই পীরেরহাট বারোয়ারির জগদ্ধাত্রী প্রতিমা আরও এক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, দেবী এখানে যন্ত্রচালিত শব্দ পছন্দ করেন না, যার কারণ বহুবার অঘটন ঘটেছে। যেরকম ইলেকট্রনিক সাউন্ড সিস্টেম একাধিকবার ব্যবহার করা হলে বারবার সেই যন্ত্র বিকল হয়ে যেত, তারপর থেকেই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দেবীর আরাধনা করা হয়।
যদিও এই পুজোতে বলি দেওয়া হয় আখ, চাল কুমড়ো,ও ফল। পুজো উদ্যোক্তারা জানান, ভক্তি সহকারে মায়ের কাছে কিছু চাইলে মা কখনো খালি হাতে ফেরার না, সেদিক থেকে দেখতে গেলে দেবী খুবই জাগ্রত বলে ব্যাখ্যা করেন উদ্যোক্তারা। তবে দেবী দর্শনে তিনদিন ধরে অগণিত ভক্তবৃন্দদের ভিড় হয় উপচে পড়ার মতো। তবে দেবী নিরঞ্জনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাদ্যযন্ত্র সহকারে একেবারে ঘরোয়া নিয়মে দেবীকে শোভাযাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয় এখনো।