সংবিধান দিবস হল একটি দেশের সংবিধানকে সম্মাননা জানানোর জন্য সরকারি ছুটির দিন। সংবিধান একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এটি লিখিত আবার কোন কোন দেশের ক্ষেত্রে অলিখিত দলিল।
সাধারণভাবে সংবিধান বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়মকানুনকে বােঝায়। যে-কোনাে প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে গেলে যেমন কতকগুলি সাধারণ নিয়মকানুনের প্রয়ােজন হয়, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও তা দেখা যায়। রাষ্ট্রের পরিচালনার জন্য একান্ত আবশ্যক এই নিয়মকানুনগুলি হল সংবিধান। সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলি লিখিত বা অলিখিত, দুই-ই হতে পারে। এই কারণেও সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন করা হয়ে থাকে।
দেশের শাসনব্যবস্থার মৌলিক নীতিগুলি যেক্ষেত্রে একটি দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে লিখিত সংবিধান বলে। সাধারণত একটি সংবিধান পরিষদ বা কনভেনশন এসব সাংবিধানিক মৌলিক নীতিগুলিকে লিপিবদ্ধ করার কাজ করে থাকে। বিশ্বের প্রাচীনতম লিখিত সংবিধান হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান। সুইটজারল্যান্ড, ভারত, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের সংবিধান লিখিত সংবিধানের অন্যতম উদাহরণ।
ভারতে ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস পালিত হয়। দিনটি সম্বিধান দিবস নামেও পরিচিত। সংবিধান দিবস ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের সংবিধান গৃহীত হওয়ার স্মরণে পালন করা হয়।
যে দিনটি ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল সেই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসাবে পালন করা হয়।সংবিধান গৃহীত হয় ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে। এটি ২৬ জানুয়ারী ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়েছিল। ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ তারিখে সংবিধান এবং গণপরিষদ মিলিত হয়েছিল|উচ্চস্বরে ও দীর্ঘায়িত সমর্থনে রাষ্ট্রপতির সংবিধান পাসকে স্বাগত জানানো হয়েছিল।গণপরিষদের সভাপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ সংবিধান পাশ করার প্রস্তাব দেওয়ার আগে তিনি বক্তৃতা ও মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন মনে রাখবে যে এটি একটি অনন্য বিজয় যার রাস্তা আমরা জাতির পিতার দেখানো অনন্য পদ্ধতিতে অর্জন করেছি এবং আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তা রক্ষা করা এবং এটি সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য ফলপ্রসূ করে তোলা আমাদের উপর নির্ভর করে।
৯ ই নভেম্বর ২০১৫ সালে ডঃ বি আর আম্বেদকরের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীর বছরব্যাপী উদযাপনের সময় ভারত সরকার ২৬ শে নভেম্বরকে সংবিধান দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।সংবিধান পাশ হওয়ার পর প্রবীণ স্বাধীনতা সংগ্রামী যোদ্ধা, অরুণা আসাফ আলী এবং প্রয়াত স্বাধীনতার বোন পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “জন-গণ-মন আধিনায়ক জয় হে, ভারত ভাগ্য বিধাতা” জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে গণপরিষদের ঐতিহাসিক অধিবেশন শেষ হয়। আগে এই দিনটি আইন দিবস হিসেবে পালিত হত। সংবিধানের গুরুত্ব ছড়িয়ে দিতে এবং আম্বেদকরের চিন্তাভাবনা ও ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২৬ নভেম্বর দিনটি বেছে নেওয়া হয়েছিল।
২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ভারত স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার ঠিক এক বছর আগে ১৯৪৬ সালে লেখা হয় ভারতের সংবিধান। যা এককথায় ‘সুপ্রিম রুল বুক’, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। সংবিধান গণপরিষদ দ্বারা লিখিত, যার ড্রাফটিং কমিটির প্রধান ছিলেন বি.আর আম্বেদকর। ১৯৪৯ সালের আজকের দিনেই সংবিধান গ্রহন করেন গণপরিষদ। যদিও, আইনত তা বলবৎ হয়েছিল পরের বছর অর্থাৎ ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারী। সেই বছর থেকেই ২৬ নভেম্বর সংবিধান দিবস বা জাতীয় আইন দিবস পালিত হয়।
সংবিধান দিবস প্রতি বছর ২৬ নভেম্বর দিনটি পালিত হয়। দেশের নাগরিকের অধিকার এবং এই দেশের সংবিধানের সঙ্গে বড় আশ্চর্য ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে মাসের ২৬ নম্বর দিনটি! একটি আমাদের অতি সুপরিচিত জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখ, যা প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে প্রতি বছর। এ ছাড়াও ভারত, ভারতীয় নাগরিক এবং তার সংবিধানকে ঘিরে বছরের নভেম্বর মাসের ২৬ নম্বর দিনটি উদযাপন করে থাকে।দিবসটির লক্ষ্য সংবিধানের গুরুত্ব ছড়িয়ে দেওয়া এবং ভারতীয় সংবিধানের জনক বি .আর. আম্বেদকরের চিন্তাভাবনা ও ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া।
বি: দ্র:- বিশ্বের সমস্ত সার্বভৌম দেশগুলির মধ্যে ভারতীয় সংবিধান দীর্ঘতম লিখিত সংবিধান। এটি ৪৪৮টি নিবন্ধ নিয়ে গঠিত এবং মোট ২৫ ভাগে বিভক্ত। সংবিধানের মূল বইটি প্রেম বিহারী নারায়ণ রায়জাদা লিখেছিলেন। গোটা বইটি ইটালিক স্টাইলে লেখা হয়েছিল। সংবিধানের প্রতিটি পৃষ্ঠাসজ্জা করেছিলেন শান্তিনিকেতনের শিল্পীরা। যাদের মধ্যে ছিলেন রামমনোহর সিনহা এবং নন্দলাল বসু।
তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।