ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায় ….।
আমাদের পরম পবিত্র ভারতভূমিতে যৌথ পরিবার ছিল, পারিবারিক, সামাজিক বন্ধন গুলো খুব সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। কিন্তু, বর্তমানে ভারতবর্ষে আমাদের সমাজে নিঃস্ব রিক্ত মানুষের জীবনে বিপদে আপদে কেউ পাশে থাকেনা, মানুষ তার বিপদেই পাশে থাকে যার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানটা শক্তপোক্ত। আমাদের এই পৃথিবী হল বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। বীরের বীরত্ব তার কর্মেই। তাই বসুন্ধরার প্রতি সঠিক কর্তব্য পালনের জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কর্মক্ষম থেকে বসুন্ধরাকে যথাযোগ্য সম্মান করা। আর সেই জন্য দরকার শারীরিক দৃঢ়তা ও মানসিক সুস্থতা। নিজেকে সুস্থ রাখার ব্যাপারটা সাধনার অঙ্গ। আর, দেখবেন শরীর সুস্থ থাকলে সব কাজ সহজ হয়ে যায়। যেমন আমাদের জীবনে সত্য এবং মিথ্যা পাশাপাশি থাকে। যখন আমরা সত্যকে মিথ্যার উপর আনতে পারি তখন সত্য মিথ্যাকে দাবিয়ে দেই। তেমনই যখন আমরা মিথ্যাকে সত্যর উপর আনতে পারি তখন মিথ্যা সত্যকে দাবিয়ে দেই। এর জন্য দরকার আমাদের প্রচন্ড পুরুষকার। পুরুষকার সত্যকে মিথ্যার উপরে বিজয় লাভ করতে সাহায্য করে। আমাদের পুরুষার্থের অভাবে সত্য সব সময় বিজয় লাভ করে না। যা আমাদের ধারণ করে থাকে তাই ধর্ম। জলের যেমন প্লবতা শক্তি বা অগ্নির যেমন দাহিকা শক্তি তেমনই মানুষের যে গূণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না তাই ধর্ম – অর্থাৎ মনুষ্যত্ব। ধর্ম অর্থ এখানে সত্য। ধর্ম মানে ধারণ করা, সত্য যে রক্ষা করে সত্য তাকে রক্ষা করে। সত্য রক্ষার মধ্যেই পুরুষার্থ লুকিয়ে আছে। তাই, তো বীরভোগ্যা বসুন্ধরা।
ভবিষ্যত তাদেরই যারা তাদের স্বপ্নের সৌন্দর্যে বিশ্বাস করে। সৌন্দর্য মূলত আধ্যাত্মিক। প্রকৃত সৌন্দর্য মানুষের হৃদয়ে নিহিত থাকে। এটি এক একজনের, এক এক রকম ভাবে চরিত্রে রয়েছে। সৌন্দর্য বিশুদ্ধতায় বাস করে। গুণে সৌন্দর্য উজ্জ্বল হয়। প্রেম সমগ্র সৃষ্টির সাথে একত্বের একটি পরিমার্জিত, সহজাত অনুভূতি। প্রেম হল আত্মত্যাগ, নিঃস্বার্থতা। আমাদের এক চোখ কখনো আরেক চোখকে দেখেনা, তবুও এক চোখের কিছু হলে আরেক চোখে অশ্রু না ঝড়িয়ে পারে না। তেমনই ভালবাসা হল হৃদয়ের পবিত্রতা। ভালবাসা হল অবাধ সদিচ্ছা, করুণা, সহানুভূতি এবং সহনশীলতা। প্রেম হল কামুকতার অনুপস্থিতি। হৃদয় এবং সৌন্দর্যের মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। এটি হল উদ্দেশ্য, অনুভূতি এবং চিন্তার বিশুদ্ধতা। সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হল আত্ম অহংকার ও আত্ম গুরুত্বের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি। এটি একটি নিঃস্বার্থ হৃদয়ে পাওয়া যায়, যা না চাইতেই দিতে প্রস্তুত। আমি কবে মুক্ত হব? যখন ‘আমি’ আমি হওয়া বন্ধ হয়ে যাব। ভালো সময় যেমন চিরস্থায়ী নয় ঠিক তেমনই খারাপ সময়ও চিরস্থায়ী হয় না, তাই ধৈর্য্য ধরুন আর ভগবানের ওপরে ভরসা রাখুন, দেখবেন খুব তারাতাড়ি আপনার খারাপ সময়টাও পেরিয়ে যাবে । সরল জীবনযাপন এবং উচ্চ চিন্তাই মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য। সুখ সবার কাছেই মনের কোনে হৃদয়ে গোপন থাকে। মানুষের হৃদয়ে সুখ ছাড়া সৌন্দর্য নেই। এখানেও সেই পুরুষার্থ লুকিয়ে আছে। তাই, তো বীরভোগ্যা বসুন্ধরা।
ভগবান শুধু আবেগের জন্য ক্ষুধার্ত, ভগবান ভক্তির কাঙাল, আবেগ দিয়েই তাকে পাওয়া যায়। প্রাণীরাও তাদের জীবনকে ভালোবাসে, তারাও মানুষের মতো দুঃখ-কষ্ট, সুখ-দুঃখ অনুভব করে। মানুষের মতো তারাও চায় কেউ যেন তাদের হত্যা বা হয়রানি না করে।দেবদেবীর সাথে যে কোনো পশু বা পাখির মেলামেশাও পশুর সুরক্ষার প্রতীক। আমাদের হিন্দু ধর্মে সর্বত্র নিরপরাধদের প্রতি অহিংসার কথা বলা হয়েছে এবং সর্বত্র হিংসা না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেখবেন যদি সবাই আপনাকে নিয়ে খুশি হয়, তবে আপনি অবশ্যই আপনার জীবনে অনেক আত্মত্যাগ করেছেন। আর আপনি যদি সবাইকে নিয়ে সুখী হন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি অন্যের অনেক দোষ উপেক্ষা করেছেন। আমাদের জীবনে সততা একটি বিরল, ব্যয়বহুল উপহার। এটি সস্তা মানুষের কাছে আশা করবেন না। তাই নিজে কখনো যদি খারাপ থাকেন, কখনো কারো কাছে প্রকাশ করবেন না, ভুল করেও কখনো এটা প্রত্যাশাও করবেন না যে, কেউ আপনার খারাপ থাকার কথা শুনে, ছায়ার মতো আপনাকে আগলে রাখবে, এক নিষ্ঠ মনে আপনার ভালো করার চেষ্টা করবে, সব সময় মনে রাখবেন! বর্তমান কালে খারাপ সময়টা একান্তই আপনার নিজের, এই সময়টাতে আপনিই আপনার একমাত্র পরীক্ষক, আপনি নিজের যতটা পরীক্ষা নিতে পারবেন, যতটা নিজের পরিপক্কতার দক্ষতা রাখতে পারবেন ততোই আপনার সফলতা নিশ্চিত। “আমি ভালো নেই” বা ” আমি খারাপ আছি” এই কথাটা কখনো কারো কাছে প্রকাশ করতে যাবেন না, মানুষ আপনার খারাপ থাকার গল্পটাই শুধু দীর্ঘায়িত করবে, সংকুচিত করার কোনো চেষ্টাও করবে না। মানুষ আপনার খারাপ থাকার গল্প শুনে সামনে আপনাকে কে মিথ্যে মিথ্যে স্বান্তনা দিয়ে, অন্যের কাছে খারাপ থাকার গল্প শুনিয়ে মজা করবে। আপনার পুরুষার্থ দিয়ে খারাপ সময়টা আপনাকেই জয় করতে হবে। তাই,তো আমাদের এই বসুন্ধরা বীরভোগ্যা। সুখ সব সৌন্দর্যের রহস্য। সুখ ছাড়া সৌন্দর্য নেই। জীবন আপনারও সুন্দর, অর্থপূর্ণ, মজাদার এবং পরিপূর্ণ হতে পারে, যদি আপনার পুরুষকার দিয়ে আপনি এটি জয় করতে পারেন।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ