বাঁকুড়া জেলার রতনপুর গ্রামে রয়েছে দেবব্রত দত্ত মানব হৃৎপিণ্ডের অজানা রহস্যের সমাধান বের করলেন।

আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ- মানব হৃৎপিণ্ডের অজানা রহস্যের সমাধান বের করলেন বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ব্লকের রতনপুর গ্রামের ডঃ দেবব্রত দত্ত। হৃদরোগের পারমাণবিক কারণ খুঁজতে অত্যাধুনিক ক্রায়ো ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ এবং স্বয়ংক্রিয় বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। অ্যাক্টিন এবং মায়োসিন, এই দুই প্রোটিন একে অপরের কাছে এলে হৃদপিন্ডের অলিন্দ বা নিলয় সংকুচিত হয় এবং দূরে চলে গেলে প্রসারিত হয়। যেকোনো কারণে অ্যাক্টিন বা মায়োসিনের পারমাণবিক গঠনগত পরিবর্তন হলে হতে পারে হৃদরোগ। অ্যাক্টিন ফিলামেন্টের মলিকিউলার গঠন জানা থাকলেও। অজানা ছিল মায়োসিন ফিলামেন্টের মলিকিউলার গঠন, সেই কাজটাই করলেন ডঃ দেবব্রত দত্ত। এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল নেচারে। বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র দেবব্রত দত্তের প্রাথমিক শিক্ষা রতনপুরে হলেও, পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজিয়েট স্কুল থেকে। কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে রসায়ন নিয়ে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। তারপর আইআইটি খড়গপুর থেকে বায়োটেকনোলজি নিয়ে পিএইচডি করে ২০১৯ সালে পিএইচডি লাভ করে আমেরিকার পাড়ি দেন। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল স্কুলে একজন হৃদ-বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন।

বাঁকুড়া জেলার রতনপুর গ্রামে রয়েছে দেবব্রত দত্ত যৌথ পরিবার। ছোট থেকেই পরিবার পরিজনের ভালোবাসা এবং অনুশাসনে বেড়ে উঠেছেন তিনি। বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন বাবা-মা এবং জেঠিমা। বাঁকুড়ার ভূমিপুত্র হয়ে, এই যুগান্তকারী আবিষ্কার করার জন্য বিজ্ঞানী ডক্টর দেবব্রত দত্ত এখন রতনপুর তথা বাঁকুড়া এবং গোটা ভারতবর্ষের গর্ব। তার বাড়িতে বই যাচ্ছে খুশির জোয়ার। ২০১৯ সালের পর থেকে করোনা বিধির কারণে প্রায় পাঁচ বছর বাড়ি ফিরতে পারেননি দেবব্রত দত্ত। পুত্রের সাফল্যে আবেগঘন হলেন বাবা-মা।

ছেলেবেলা থেকেই নিজের সব কাজে পারদর্শী ছিলেন দেবব্রত দত্ত। বাড়ির বাইরে থেকে পড়াশোনা করার অভ্যাস রয়েছে তার। বর্তমানে আমেরিকায় স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে গবেষণা করছেন তিনি। দেবব্রত দত্তের বাবা মহাদেব দত্ত পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ভূমিকা তুলে ধরলেন তাঁর পুত্রের জীবনে।

মেধার খনি বাঁকুড়া জেলা। বাঁকুড়া জেলা থেকে প্রতিবছর একাধিক কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের নাম উঠে আসে। তাদের উদ্দেশ্যে দেবব্রত দত্ত জানালেন একটি দুর্দান্ত সিক্রেট। “নিজেকে করতে হবে একটি প্রশ্ন” বললেন তিনি। তিনি আরোও বলেন “যে বিষয়ের প্রবলেম সলভ করে আমি বেশি আনন্দ পাই সেটা নিয়েই এগিয়ে যাওয়া উচিত।”
এই গবেষণা হৃদরোগ সংক্রান্ত চিকিৎসা এবং হৃদরোগের ওষুধ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ঠ চিকিৎসক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *