ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে প্রফুল্ল চাকী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। প্রফুল্ল চাকী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
প্রফুল্ল চাকী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বকনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। পূর্ব বাংলায় জন্মগ্রহণকারী এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং জীবন উৎসর্গ করেন।
প্রফুল্ল চাকী ১৮৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধীনে বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তিনি বগুড়ার ‘নমুজা জ্ঞানদা প্রসাদ মধ্য বিদ্যালয়ে’ ভর্তি হন। পরে বগুড়ার মাইনর স্কুলে ভর্তি হন। ১৯০২ সালে তিনি রংপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। পূর্ববঙ্গ সরকারের কার্লাইল সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাকে রংপুর জিলা স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ভর্তি হন রংপুরের কৈলাস রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যয়নকালে তিনি জিতেন্দ্র নারায়ণ রায়, অবিনাশ চক্রবর্তী, ঈশান চন্দ্র চক্রবর্তী সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রাণিত হন।
১৯০৬ সালে কলকাতার বিপ্লবী নেতা বারীন ঘোষ প্রফুল্ল চাকীকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। যেখানে যুগান্তর দলে যোগ দেন প্রফুল্ল। তার প্রথম কাজ ছিল পূর্ববঙ্গ ও আসামের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলার কে হত্যা করা। কিন্তু এই পরিকল্পনা সফল হয়নি। এর পরে, প্রফুল্ল চাকি ক্ষুদিরাম বোসের সাথে কলকাতা প্রেসিডেন্সির অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে এবং পরে বিহারের মুজাফফরপুরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।
ক্ষুদিরাম এবং প্রফুল্ল কিংসফোর্ডের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন এবং ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। ইউরোপিয়ান ক্লাবের প্রবেশপথে তারা কিংসফোর্ডের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিল। একটি গাড়ি আসতে দেখে বোমা ছুড়ে মারে। দুর্ভাগ্যবশত, কিংসফোর্ড সেই গাড়িতে ছিলেন না, কিন্তু দুই ব্রিটিশ মহিলা মারা যান, ভারতপ্রেমী ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রী ও কন্যা। সঙ্গে সঙ্গে প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম এলাকা ছেড়ে চলে যান।
প্রফুল্ল এবং ক্ষুদিরাম পৃথক উপায়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। প্রফুল্ল ছদ্মবেশে ট্রেনে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। ২ মে নন্দলাল ব্যানার্জী নামে এক পুলিশ কনস্টেবল একটি ট্রেনে ষষ্ঠিপুর রেলস্টেশনের কাছে প্রফুল্লকে সন্দেহ করেন। মোকামা স্টেশনে পুলিশের মুখোমুখি হয়ে প্রফুল্ল পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কোণঠাসা, ধরা না পড়ে আত্মত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরে অনেক ইতিহাসবিদ অনুমান করেন যে প্রফুল্ল আত্মহত্যা করেননি, তাকে পুলিশ হত্যা করে শিরশ্ছেদ করেছে। পরে ক্ষুদিরামকে ধরা হয় এবং ফাঁসি দেওয়া হয়। অন্য দুই বাঙালি বিপ্লবী রণেন গাঙ্গুলী এবং শ্রীশচন্দ্র পাল ১৯০৮ সালের ৯ নভেম্বর ব্রিটিশ পুলিশ ইন্সপেক্টর নন্দলালকে হত্যা এবং প্রফুল্ল চাকীকে হস্তান্তরের প্রতিশোধ নেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।