প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু না কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। এমনি ভাবে প্রতিবছর ১১ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস দিনটি পালিত হয়ে আসছে। পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যতকে সামনে রেখে জাতিসংঘ ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।রাষ্ট্রসংঘ ২০০২ সালটিকে প্রথম ‘আন্তর্জাতিক পর্বত বছর’ (International Mountain Year) হিসেবে ঘোষণা করে। এই আন্তর্জাতিক পর্বত বছর পালন শুরু হয় নিউ ইয়র্কে। আর ঠিক তার পরের বছর অর্থাৎ ২০০৩ সাল থেকে ১১ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস’ পালন করা শুরু হয় সমগ্র বিশ্ব জুড়ে। রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে বিভিন্ন খাদ্য ও কৃষিকেন্দ্রিক সংস্থাগুলি এই দিবস পালনের জন্য বেশি সক্রিয় থাকে।
তাই প্রকৃতির অপরূপ দান পাহাড়-পর্বত সুরক্ষা করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস’।
তাছাড়া, বিশ্বের বহু মানুষের জীবিকা পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। সেই কারণে পর্বত পর্যটনকে টিকিয়ে রাখা বহু মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পর্বত পর্যটন যেমন বহু মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারে, তেমনই দারিদ্র্য দূর করে, সামাজিক মেলবন্ধন ঘটায় এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি পর্যটনের মাধ্যমে প্রকৃতি, সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ পাওয়া যায়। পাহাড় কে না ভালোবাসে। বহু মানুষই পাহাড়ে বেড়াতে যেতে ভালবাসেন। তাই তাঁদের জন্য আজকের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পাহাড়ে গেলে যেমন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা তৈরি হয়, তেমনই মন উদার হয়। যাঁরা পাহাড়ে বেড়াতে যান, তাঁদের দায়িত্ব হল প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা। যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা কোনওভাবেই কাম্য নয়।
রাষ্ট্রসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করেন। এমনকি জীববৈচিত্র্যের ৫০ শতাংশ হটস্পট এলাকাই বিভিন্ন পর্বতের অন্তর্গত। প্রায় অর্ধেক মানবসম্প্রদায় পর্বতজাত মিষ্টি জল খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। পৃথিবীর প্রায় ২২ শতাংশই পার্বত্য অঞ্চল। এই অঞ্চলগুলি ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মিষ্টি জলের উৎস। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। পর্বতমালা, নদ-নদী, বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এ অঞ্চলকে করেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ। যেকোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন অপরিহার্য। তাই এইসকল কারণে পর্বতের উন্নয়নসাধন আমাদের কাছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু আজকের বিশ্বে প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে। অতিমাত্রায় বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাভাবিকতাকে ব্যাহত করছে। পর্বতমালার জলবায়ু পরিবর্তিত হওয়ায় সেখানকার জীবকুল অত্যন্ত সংকটাপন্ন। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের জীবনধারণ আরো কঠিন হয়ে পড়েছে কারণ হিমবাহগুলি এত দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে যে তা স্বাভাবিক জলের উৎসকে প্রভাবিত করছে। আর তার থেকেও বড় অতিরিক্ত জলে প্লাবিত হবার আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের সকলকেই দূষণ রোধে অগ্রণী হতে হবে যাতে উষ্ণতা বৃদ্ধি কমানো যায়। তা না হলে আগামীতে বিপন্ন হবে এখনকার জীবনযাত্রা। তাই সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১১ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস’ পালিত হয়। আধুনিক বিশ্বে বিপন্ন প্রকৃতির কথা মাথায় রেখে পর্বতের রক্ষণাবেক্ষণ এবং তার উন্নয়নের ধারণা থেকেই এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি পর্বতের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ইত্যাদি বিষয়ের গুরুত্ব তুলে ধরাই এই দিবসের উদ্দেশ্য।
আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস কীভাবে উদযাপন করবেন।
আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস আনন্দ এবং শিক্ষামূলক উপায়ে উদযাপন করা যেতে পারে। হাইকিং উত্সাহীরা আনন্দের সাথে সাথে দূরবর্তী স্থানগুলি উপভোগ করতে সক্ষম হবেন যেগুলি খুব কমই ভ্রমণ করেন। আপনি শহরের জীবনের আলোক দূষণ এবং কোলাহল থেকে দূরে ক্যাম্পে বসতি স্থাপন করতে পারেন।
অথবা হয়ত আপনি ড্রাইভ করতে পছন্দ করেন, পাহাড়ের ধারে ঘুরাঘুরির রাস্তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর কিছু দেশ আছে যা কাছে বা দূরে পাওয়া যায়।
আপনি এই দিনে পর্বতারোহণ বা হাইক করার পরিবর্তে আপনার মাউন্টেন বাইক নিয়ে যেতে পারেন। পাহাড়ের দর্শনীয় স্থানগুলি উপভোগ করতে পারেন। তবে সর্ব প্রথম আপনি নিরাপত্তা অগ্রাধিকার নিশ্চিত করুন। সর্বদা একটি হেলমেট পরুন এবং আপনার বাইকটি আগে থেকেই পরীক্ষা করে নেওয়া ভাল।
ক্যাম্পিং করতে আপনি আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসও ব্যবহার করতে পারেন। পাহাড়ে সপ্তাহান্তে ক্যাম্পিং একটি অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা। আপনি সম্পূর্ণ ক্যাম্পিং অভিজ্ঞতার জন্য যেতে চাইতে পারেন। সিদ্ধান্ত আপনার। আপনার চারপাশের পাহাড় এবং আকাশের তারা দেখার মতো কিছু নেই। এটি একটি অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা, এবং অবশ্যই আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস কাটানোর সেরা উপায়গুলির মধ্যে একটি। সুতরাং, এভাবে আপনি একটি দুর্দান্ত ক্যাম্পিং উইকএন্ড উপভোগ করুন।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।