জন্মদিনে স্মরণে, আরামবাগের গান্ধী নামে খ্যাত ভারতীয় বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী – বিভূতিভূষণ সরকার।

0
377

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে  বিভূতিভূষণ সরকার প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।  বিভূতিভূষণ সরকার ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

বিভূতিভূষণ সরকার ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজসেবী।  তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা, আরামবাগের গান্ধী নামে পরিচিত প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের বিশ্বস্ত জেনারেলদের একজন ছিলেন।

বিভূতিভূষণ সরকার ১১ ডিসেম্বর, ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের হুগলি জেলার পশ্চিমবঙ্গের পুরশুরার ভূয়েরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি ছিলেন যতীন্দ্রনাথ সরকার ও শৈলবালা দেবীর জ্যেষ্ঠ সন্তান।  বিভূতিভূষণ সরকার প্রমীলা দেবীকে বিয়ে করেন।  নবকুমার সরকার ওরফে স্বামী অসীমানন্দ তাদের সাত সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়।

ছোটবেলায় স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন।  যে কারণে স্কুলের পর তাঁর লেখাপড়ার অগ্রগতি হয়নি।  এক পর্যায়ে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের গান্ধীবাদী নেতা প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের কাছাকাছি আসেন।  তাঁর সঙ্গে ‘সত্যাগ্রহ’ ও ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।  কিন্তু তিনি ছিলেন চরমপন্থী।  ১৯৩০-এর দশকে ঘাটাল থানার কনস্টেবল ব্রিটিশ শাসকদের অনুগত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছিলেন।  ভার পড়ল বিভূতিভূষণের উপর তাঁকে শাস্তি দেওয়ার।  বিভূতিভূষণ তাকে ঘাটাল বাজারে কঠিন শাস্তি দেন।  তিনি দীর্ঘদিন ধরে কারাবরণ করেন।  এসময় তাঁর হাতের প্রতিটি আঙুলে সূঁচ পেঁচিয়ে নির্যাতন করা হয়।  ফলে শেষ জীবনে তাঁর সমস্ত আঙ্গুল অকেজো হয়ে পড়ে।  ১৯৪০-৪১ সালে, সুভাষ চন্দ্র বসু দলীয় কর্মসূচিতে একবার পুরশুরা এসেছিলেন।  সেখান থেকে তিনি বিভূতিভূষণের সঙ্গে একটি হাতিতে চড়ে চন্দ্রকোনার কালিকাপুরে যান।  স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিভূতিভূষণকে অনেক দিন আরামবাগ ও চুঁচুড়া জেলে কাটাতে হয়েছে।  যদিও প্রফুল্ল চন্দ্র সেন বড়ডোঙ্গালে ‘সাগরকুঠি’ নির্মাণ করে একদিকে সমাজসেবা হিসেবে স্বাধীনতা আন্দোলনের কাজ চালিয়ে গেলেও, সেই সময় স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল ঘাঁটি ছিল শ্রীমন্তপুরে বিভূতিভূষণের দ্বিতীয় তলায়।  ভগ্নিপতির গোয়ালঘর।  সেখান থেকে প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের সংগ্রামের বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন বিভূতিভূষণ।
স্বাধীনতার পর, বিভূতিভূষণ স্বদেশমন্ত্রে দীক্ষিত অনেক ব্যক্তিত্বের সাথে রাজনীতি থেকে সরে আসেন এবং পুরোপুরি সমাজসেবায় নিযুক্ত হন।  জীবনের শেষ অধ্যায়টা কাটাও তোমার কামারপুকুর বাড়িতে।  পরে তিনি দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।

সমাজসেবামূলক কাজে তিনি স্থানীয় মানুষের কল্যাণে যে কাজ শুরু করেছিলেন তা তাঁর উত্তরসূরিরা তাঁর নামে গঠিত ট্রাস্ট- ‘বিভূতিভূষণ সরকার সেবা সংস্থা’র মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুঁয়েড়া গ্রামে তার নামে একটি দাতব্য হাসপাতাল, একটি বিনা বেতন শিক্ষা কেন্দ্র এবং একটি এতিমখানা রয়েছে।

স্বাধীনতার পঁচিশ বৎসর পূর্তিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট তাকে ‘তাম্রপত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেন।

বিভূতিভূষণ সরকার ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ জুলাই কামারপুকুরে প্রয়াত হন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here