ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। এমনি এক ভ্রমণ স্থান আমাদের দেশের ই একটি অঙ্গরাজ্য গোয়া।
গোয়া ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি অঙ্গরাজ্য। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত পর্তুগিজ শাসনে ছিল এটি। গোয়া, ভারতের পশ্চিম উপকূলে একটি রাজ্য, একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস’সহ প্রাক্তন পর্তুগিজ উপনিবেশ। প্রায় ১৪ লক্ষ জনসংখ্যা নিয়ে ৩,৭০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত গোয়া ভারতীয় মান অনুসারে ছোট রাজ্য। এটিতে ভারতীয় এবং পর্তুগিজ সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যের একটি অনন্য মিশ্রণ রয়েছে, যা প্রতি বছর আনুমানিক ২৫ লক্ষ দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে (প্রায় ৪,০০,০০০ জন বিদেশি পর্যটক’সহ)।গোয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় জায়গা হলো এখানকার সমুদ্রসৈকতগুলো। কালাংগুয়েট, আনজুনা, বাটারফ্লাই, বোগাসহ আরও অনেক সমুদ্রসৈকত রয়েছে গোয়ায়। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও গোয়ায় আরও অনেক দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গোয়ার সেরা ১০ জায়গা সম্পর্কে-
১. আগুয়াদা দুর্গ
আগুয়াদা দুর্গ একটি পর্তুগিজ দুর্গ। সপ্তদশ শতকে দুর্গটি নির্মিত হয়েছিলো। মানদোভি নদী ও আরব সাগরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এই দুর্গ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি জায়গা। পর্যটকরা এখানে এসে মুগ্ধ হয়। এটির সামনে প্রসারিত সমুদ্রের একটি শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দেয়। পূর্ব দিকে যাত্রা করা প্রতিটি পর্তুগিজ জাহাজ তাদের জল সরবরাহ পুনরায় পূরণ করতে ফোর্ট আগুয়াডায় একটি পিট স্টপ করবে কারণ এটি সমগ্র এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় মিঠা পানির আধার ছিল। দুর্গটি নিজেই দুর্দান্ত এবং এটি একটি দুর্দান্ত ভ্রমণ গন্তব্য তৈরি করে। একটি প্রাচীন বাতিঘর, এটি এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীনতম, দুর্গের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, এর সাথে অনেকগুলি কক্ষ রয়েছে যা পূর্বে কারাগারে ব্যবহৃত হত।
২. চাপোড়া দুর্গ
চাপোড়া দুর্গ গোয়ার একটি বিখ্যাত দুর্গ। স্থানীয়দের কাছে দিল চাহতা হ্যায় দুর্গ নামে এটি পরিচিত। ২০০১ সালে এখানে দিল চাহতা হ্যায় চলচ্চিত্রটির শুটিং হয়েছিলো। দুর্গটি চাপোড়া নদীর তীরে অবস্থিত। দুর্গট অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার শান্ত সাক্ষী হিসাবে কাজ করেছিল। এটি চাপোরা নদীর কাছাকাছি একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত, এবং আশেপাশের মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য সেখানে যাওয়া উপযুক্ত। পাথুরে দ্বারা সুরক্ষিত সৈকতের একটি প্রাকৃতিক উপত্যকা সমুদ্রের একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক প্রবেশাধিকার প্রদান করে।
৩. থালাসা
থালাসায় অবস্থিত দ্য গ্রিক তাভার্না গোয়ার বিখ্যাত রেস্তোরাঁগুলোর অন্যতম। পর্যটকদের কাছে এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। সূর্যাস্তের সময় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। থালাসায় দম্পতিদের বেশি দেখা যায়।
৪. দিভার দ্বীপ
পাঞ্জিম থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটিতে থাকলে মনে হবে যেন মালদ্বীপেই রয়েছেন। মান্ডবী নদীর পারে অবস্থিত স্থানগুলি পায়ে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন। সঙ্গীর হাত ধরে পায়ে হেঁটে দেখে নিতে পারেন ইউরোপীয় কাঠামো, পর্তুগিজ ল্যান্ডমার্ক এবং বিখ্যাত আওয়ার লেডি অফ কম্পেনশন চার্চ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি দ্বীপ হলো দিভার দ্বীপ। এখানে শত শত পর্যটক ছুটে আসেন এই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য।
৫. দুধসাগর জলপ্রপাত
ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত হলো দুধসাগর জলপ্রপাত। মোলেম ন্যাশনাল পার্কের ভেতর এই জলপ্রপাত অবস্থিত। মৌসুমী সময়ে জলপ্রপাতটি অবিরাম ঝরতে থাকে। এখানে সবসময় পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে।
দুধসাগর জলপ্রপাত পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত জলপ্রপাত গুলোর মধ্যে একটি। এটি কর্ণাটক এবং গোয়া সীমানায় অবস্থিত। উচ্চতায় এটি ভারতবর্ষের পঞ্চম। প্রায় ৩০ মিটার প্রস্থের সমগ্র মান্দভি বা মানদবী নদী ৩১০ মিটার উচ্চতা থেকে বিশাল জলরাশি নিয়ে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। এই জলপ্রপাতটি “সি অফ মিল্ক” নামেও পরিচিত।
দুধসাগর জলপ্রপাতটি নিয়ে স্থানীয় একটি কল্পকথা প্রচলিত আছে, প্রাচীনকালে এই জলপ্রপাতের স্থানে একটি রাজার প্রাসাদ ছিল। প্রাসাদ সংলগ্ন সরোবরে রাজকুমারী স্নান করে সোনার পাত্রে দুধ পান করতেন। একদিন স্নানরতা নগ্না রাজকুমারীকে এক রাজকুমার গাছের আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখতে থাকলে রাজকুমারী ব্যাপারটি বুঝতে পেরে, সোনার পাত্রে রাখা দুধ নিজের উপর ঢেলে লজ্জা ঢাকলেন। কথিত আছে সেই দুধের স্রোত থেকে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে।
দুধসাগর জলপ্রপাতের বৈশিষ্ট এর জলধারার স্বচ্ছতা। পাহাড়ি নদীর জল পাথরের উপর দিয়ে বসে আসার ফলে এর জল কর্দমাক্ত নয়, কিন্তু বারংবার পাথরে ধাক্কা খাবার ফলে ফেনিল। দেখে মনে হয় সত্যি যেন রাশি রাশি দুধ পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে। সেই অর্থে এই নামকরণ যথার্থ।
৬. ডোনা পওলা
ডোনা পওলা গোয়ার অন্যতম সমুদ্রসৈকত। পর্যটকদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়। একে ভারতের চিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ডোনা পওলা নামটি এখানকার তদানীন্তন ভাইসরয়ের মেয়ে ডোনা পওলা দে মেনেজেসের নামে রাখা হয়।
৭. টিটোস নাইটক্লাব
টিটোস নাইটক্লাব পর্যটকদের জন্য বিনোদনের জিনিসগুলির মধ্যে একটি। ক্যালাঙ্গুটে অবস্থিত, টিটোস গোয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত নাইটক্লাবগুলির মধ্যে একটি। ১৯৭১ সালে টিটো হেনরি ডি সুজা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, পাবটি গোয়ার নাইটলাইফের সমার্থক। বগায় পুরো লেনটি, যেখানে পাবটি অবস্থিত তা জনপ্রিয়ভাবে টিটো লেন নামে পরিচিত। টিটো লেনের যে কোনও বিশেষ রাতে, আপনি টিটো পাব এবং রেস্তোরাঁর বাইরে বিশাল সারি দেখতে পাবেন, এর দুর্দান্ত পরিবেশ এবং ডিজেগুলির একটি দুর্দান্ত নির্বাচনের কারণে।
ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক ডিজে-এর একটি দুর্দান্ত নির্বাচনের মাধ্যমে নাচের মঞ্চে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এবং অফারে দুর্দান্ত খাবার ও পানীয়, টিটো’স গোয়ার অন্যতম ল্যান্ডমার্ক নাইটক্লাবের অবস্থান তৈরি করেছে। গোয়ার রাজধানী শহর পানাজি থেকে মাত্র ১৮ কিমি দূরে অবস্থিত, নাইটক্লাবটি সরকারী এবং ব্যক্তিগত উভয় পরিবহন দ্বারা সহজেই অ্যাক্সেসযোগ্য। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে টিটো’স শুধুমাত্র একটি নাইটক্লাব থেকে প্রসারিত হয়েছে এখন দ্য কোর্টইয়ার্ড নামে একটি নিজস্ব ওপেন-এয়ার রেস্তোরাঁ এবং ম্যাম্বো ক্যাফে নামে একটি নতুন ক্যাফে চালাচ্ছে৷ টিটোর নাইটক্লাবটি তার প্রথম তলায় প্রাইভেট পার্টিগুলি হোস্ট করার সুযোগও দেয় যা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত পার্টিগুলির জন্য উৎসর্গীকৃত৷অবসর কাটানোর জন্য উৎকৃষ্ট স্থান হলো নাইটক্লাব। তাই, টিটোস নাইটক্লাব গোয়ার অন্যতম বিখ্যাত নাইটক্লাব। পর্যটকদের কাছে এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। তবে নাইটক্লাবটিতে তরুণদের অনেক বেশি দেখা যায়।
৮. বুঙ্গি জাম্পিং
এটি একটি জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত। এখানে প্যারাসাইক্লিংসহ রয়েছে বিনোদনের আরও অনেক কার্যক্রম। বুঙ্গি জাম্পিং ভারতের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় জায়গা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি পছন্দের জায়গা।
৯. ক্যাসিনো
গোয়ায় অবস্থিত একটি সমুদ্রসৈকত এটি। মানদোভি নদীর তীরে অবস্থিত ক্যাসিনো সমুদ্রসৈকত। এটি পর্যটকদের কাছে খুব পছন্দের জায়গা। প্রতি বছর এখানে শয়ে শয়ে মানুষ এসে থাকেন।
১০. ক্যান্ডোলিম বিচ–
গোয়ার দীর্ঘতম সৈকতগুলির মধ্যে একটি, ক্যান্ডোলিম বিচকে কখনও কখনও রাজ্যের অন্যান্য জনপ্রিয় সৈকতের প্রবেশদ্বারও বলা হয়। ফোর্ট আগুয়াদা থেকে শুরু হওয়া সৈকতটি তুলনামূলকভাবে শান্ত এবং ল্যাজিংয়ের জন্য উপযুক্ত, যদিও ওয়াটার স্পোর্টস প্রেমীদের জন্য, প্যারাসেলিং এবং ওয়াটার স্কিইং এর মতো কিছু কার্যক্রম রয়েছে।
পুনের রজনীশ আশ্রমের লোকেদের মধ্যে সৈকতটি বেশ জনপ্রিয় যারা এখানে অল্প বিরতিতে আসেন। ক্যান্ডোলিম-ক্যালাঙ্গুট রোড পর্যটকদের কেনাকাটা এবং আড্ডা দেওয়ার জন্য অনেকগুলি দোকান এবং রেস্তোঁরা দিয়ে ঘেরা। যারা গোয়াতে একটি নিরিবিলি থাকার জায়গা খুঁজছেন তারা সাধারণত ক্যান্ডোলিম বিচের কাছে তাদের হোটেল বুক করেন।
তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ।