তীর্থযাত্রী ভ্রমণার্থী দুয়ের কাছেই পুরী আজও একই রকম আকর্ষণীয়।

0
389

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। আমাদের দেশের একটি রাজ্য  উড়িষ্যার পুরী একটি বিশেষ ভ্রমণ স্থান। যাননি এমন মানুষ খুব কম। আসুন জেনে নেই পুরীর একটি দর্শণীয় স্থান-

উড়িষ্যার রাজধানী ভুবনেশ্বর হলেও অধিকাংশ পর্যটক ভ্রমণ শুরু করে পুরী দিয়ে, সাধারন পর্যটক, প্রকৃতিপ্রেমী এবং পুর্নাথীদের এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র পুরী। তীর্থযাত্রী ভ্রমণার্থী দুয়ের কাছেই পুরী আজও একই রকম আকর্ষণীয়। পুরী বিখ্যাত উত্তাল সমুদ্র, মনোরম সমুদ্র সৈকত এবং জগন্নাথ দেবের মন্দিরের জন্য। এখানকার মূল কেন্দ্র বিন্দু স্বর্গদ্বার।
পুরীতে দর্শনীয় স্থান গুলো হলো-

১। সমুদ্র—

ভারত বর্ষের ২৯ টি প্রদেশের মধ্যে ওড়িশা অন্যতম। বঙ্গোপসাগরের পাশে অবস্থিত এই রাষ্ট্র বিবিধ হিন্দু মন্দির ও উপজাতীয় সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। এর রাজধানী ভুবনেশ্বরকে একশত মন্দিরের বাড়ী বলা হয়। পুরী, ওড়িশার একটি শহর। বহু বাঙালি ও দেশ-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা এখানে। সমুদ্র সৈকত হল পুরীর প্রধান আকর্ষণ।সমুদ্র সৈকত কে না ভালবাসে? কত দূর থেকে ঢেউয়ের গর্জন শোনা যায়। বঙ্গোপসাগরের তীরে এই সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার ইচ্ছে যে কোন বাঙ্গালীর হৃদয়ে বিদ্যমান। পুরী রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে ২ কিলো মিটার দূরে এই সমুদ্র সৈকত। বীচের পাশে ও এলাকা জুড়ে রয়েছে অনেক হোটেল যেখানে থাকা ও খাওয়ার সুবন্দোবস্ত আছে।

২। পুরীর জগন্নাথ মন্দির—

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন রাজা চোড়গঙ্গাদেব। নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল দ্বাদশ শতাব্দীর শেষভাগে তাঁর নাতি অনঙ্গভীমদেবের সময়ে। ভারতের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির অন্যতম এই মন্দির। প্রাচীনত্য়ের পাশপাশি ধর্মীয় মাহাত্যেও এই মন্দির ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্দির, অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থল।

৩। জগন্নাথ দেবের মাসী বাড়ি–

রথযাত্রা । এই দিন দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে মাসির বাড়ি যান জগন্নাথ । মাসির বাড়ি অর্থাত্‍ ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী গুন্ডিচার বাড়ি । সেখান থেকে আবার সাতদিন পর মন্দিরে ফিরে আসেন জগন্নাথ । এটাকেই মাসির বাড়ি যাওয়া হলে । পরপর তিনটি সুসজ্জিত রথে চেপে মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে যান জগন্নাথ । এই যাওয়াকে সোজা রথ আর ফিরে আসাকে উল্টো রথ বলে । মনে করা হয়, পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রা থেকেই বাংলায় রথযাত্রার সূচনা । চৈতন্য মহাপ্রভু নীলাচল থেকে এই ধারাটি বাংলায় নিয়ে আসেন । চৈতন্যভক্ত বৈষ্ণবরা বাংলায় পুরীর অনুকরণে রথযাত্রার প্রচলন করেন। এখন বাংলার বহু জায়গাতেই এই রথযাত্রা অত্যন্ত জনপ্রিয়7।

৪। ইস্কনের মন্দির ( কাকাতুয়া খাজার দোকানের কাছে)
৫। হরিদাস এর সমাধি আশ্রম( ইস্কনের মন্দির এর বিপরীতে)
৬। ভারত সেবাস্রম সঙ্ঘ ও তার মিউজিয়াম
৭। শঙ্করাচার্জের মঠ (গোবর্ধন মঠ)
৮। গম্ভীরা বা শ্রী রাধাকান্ত মঠ (শ্রী চৈতন্য দেব এখানে থাকতেন)
৯। সিদ্ধ বকুল
১০। গৌরবিহার আশ্রম (মাতাজির আশ্রম)
১১। কুলদানন্দ ব্রমহচারির আশ্রম

১২। বিজয়কৃষ্ণ ব্রমহচারির সমাধি আশ্রম

১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২ আগস্ট নদিয়া জেলার শিকারপুরের নিকট দহকুল গ্রামে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি অদ্বৈতাচার্যের বংশধর ছিলেন। বিজয়কৃষ্ণ শান্তিপুরে গোবিন্দ গোস্বামীর টোলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনা করেন। তারপর কিছুদিন তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়ন করেছিলেন।বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী গয়াতে সাধুদের সংস্পর্শে এসে বৈষ্ণবধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। ফলে তার সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের মতবিরোধ হয় এবং তিনি ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মধর্ম ত্যাগ করে বৈষ্ণব সাধনায় মগ্ন হন। তিনি যে বৈষ্ণবধর্ম প্রচার করেন তা নব্যবৈষ্ণবধর্ম নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন নব্যবৈষ্ণব আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিত্ব। নারীর উন্নতি ও স্ত্রীশিক্ষার পক্ষপাতী আধুনিক মানুষ ছিলেন তিনি। অশ্বিনীকুমার দত্ত, বিপিনচন্দ্র পাল, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ‍্যায় প্রমুখ ব‍্যক্তি এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। সন্ন‍্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় অচ‍্যুতানন্দ সরস্বতী।
১৩। চন্দন সরোবর (জগন্নাথ দেবের পিসি বাড়ি)
১৪। লোকনাথ
১৫। ভার্গবি নদীর মোহোনা
১৬। সোনার গৌরাঙ্গ

পুরীর সোনার গৌরাঙ্গ মন্দির তীর্থস্থানের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।  এটি পুরী জগন্নাথ মন্দিরের কাছে, মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে এবং সৈকতের কাছাকাছি অবস্থিত।  মন্দিরটিতে শ্রী রাম, ভগবান জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার উপাসনালয় রয়েছে, পাশাপাশি ভগবান বিষ্ণুর অন্যান্য অবতারও রয়েছে।  চক্রতীর্থ রোডে অবস্থিত, মন্দিরের মধ্যে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ।

১৭। তোতাপুরি আশ্রম–

অদ্বৈত ব্রহ্ম আশ্রমটি ত্রি-শতাব্দীর অদ্বৈত সাধক দ্বারা গঠিত হয়েছিল, নগ্ন সন্ন্যাসী যিনি পুরীতে প্রায় ৪০ – ৫০ বছর যোগিক জীবন কাটিয়েছিলেন।  তিনি শ্রী শ্রী যোগেশ্বর ব্রহ্মবীত বরিস্তা দিগম্বর পরমহংস মহারাজ এবং সংক্ষেপে নাঙ্গা বাবা তোতাপুরী বা লাঙ্গুলী বাবা নামে পরিচিত।  সাধু ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেঁচে ছিলেন বলে মনে করা হয়।  নাগা-অবধুত সম্প্রদায়ের একজন ভক্ত, তিনি এখন পাঞ্জাব রাজ্যের লুধিয়ানায় নাগা মঠের (নাগা মঠ) প্রধান ছিলেন।  তিনি ব্যাপকভাবে ভারতের প্রধান অংশ এবং ব্রহ্মদেশের কিছু অংশ এবং এমনকি হিমালয়ের ওপারে শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেছিলেন।  এই ব্যাপকভাবে ভ্রমণকারী ত্রি-শতাব্দীর সন্থ তুলসী দাস (১৬৪৬-১৭৩৭) মহাযোগী গোর্খানাথ মহাবতার বাবাজি মহাশয়ের সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে জানা যায়,  তাইলং স্বামী (১৬০৭ -১৮৮৭) বামখেপা (১৮৩৭-১৮৮৭), এবং সিরিডির শ্রী সাই নাথ (১৮৩৬-১৯১৮), স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী এবং শ্রী রাম কৃষ্ণ পরমহংস হংসজি প্রমুখ  দাক্ষিণাত্যের মালভূমিতে সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্পুত্র, নরমন্দা এবং গোদাবরী এবং কৃষ্ণা নদীর দীর্ঘ গতিপথকে কভার করেছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়াও পুরীর জগন্নাথ মন্দির এর চত্বরে অনেক কিছু দেখার আছে।

।।তথ্য সংগৃহীত : উইকিপিদিয়া ও ইন্টারনেট ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here