জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ ও গন সচেতনতা – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ দিবস প্রতি বছর  বিদ্যুৎ মন্ত্রকের অধীনে ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি (BEE) দ্বারা আয়োজিত হয়। জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য হল শক্তি দক্ষতা এবং সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।শক্তি সংক্রান্ত সংকট যে হেতু কোনও রাজনৈতিক বা ভৌগোলিক ক্ষেত্রের মধ্য‌ে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বের সংকট, তাই শক্তি সংরক্ষণের চিন্তাটি আজ বিশ্বে সব চেয়ে আলোচিত বিষয়। উদ্বেগেরও বটে। শক্তি সংরক্ষণ বলতে সারা বিশ্বে চিরাচরিত শক্তির উৎস অর্থাৎ জীবাশ্ম জ্বালানি ও হাইড্রোকার্বন সংরক্ষণের কথা ভাবা হচ্ছে। দু’ভাবে এই শক্তি সংরক্ষণ সম্ভব বলে মনে করছেন শক্তিবিজ্ঞানীরা। প্রথমত, চিরাচরিত শক্তির উৎস, মূলত কয়লা, খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্য‌াসের উপর যথাসম্ভব নির্ভরতা কমিয়ে অপ্রচলিত ও পুনর্নবীকরণযোগ্য‌ শক্তির ব্য‌বহারের উপর জোর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রত্য‌ক্ষ ভাবে প্রচলিত শক্তি ন্যূনতম ব্য‌বহার করে আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটিয়ে ফেলতে হবে। কারন, আসলে আমরাও প্রগতির নামে আসল সুখ স্বাচ্ছন্দ্য‌ের মোহিনী মায়ায় নির্বিচারে অকৃপণ ভাবে খরচ করে চলেছি পৃথিবীর বুকে সঞ্চিত শক্তিভাণ্ডার। এতে শক্তিভাণ্ডার তো নিঃশেষ হতে চলেছে বটেই, এর সঙ্গে প্রকৃতির উপর এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে যে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। বিশ্বে সঞ্চিত শক্তিভাণ্ডার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা বলছেন চিরাচরিত শক্তির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে এখনই বিকল্প শক্তির সন্ধান না করলে অচিরেই সভ্য‌তার গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে। কারণ বর্তমান বিশ্বে যে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভর করে আমাদের প্রগতির রথচক্র সচল, সেটাই তো তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর পরিবেশবিদরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির যথেচ্ছ ব্য‌বহার এবং তজ্জনিত দূষণের ফলে আমাদের এই গ্রহটি এগিয়ে চলেছে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে।

শক্তি সংরক্ষণের পদ্ধতি

নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে শক্তি সংরক্ষণ করা সম্ভব —

১) বাড়ি নির্মাণের সময় তার জানলা, দেওয়াল, মেঝে এমন ভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে শীতের সময় সৌরশক্তির সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং পরিচালন এবং গ্রীষ্মে সৌর উত্তাপ নিবারণ সম্ভব। যথাযথ সৌর নির্মাণ নকশার মাধ্য‌মেই এটা সম্ভব। এতে শক্তির খরচ কম হবে।

২) পেট্রোলিয়াম চালিত গাড়ির ব্য‌বহার কমিয়ে তেল সাশ্রয় সম্ভব। এর জন্য‌ এক দিকে যেমন জ্বালানিহীন যানের ব্য‌বহারে উৎসাহ জোগানো দরকার, অপর দিকে ব্য‌ক্তিগত গাড়ি ব্য‌বহারে নিয়ন্ত্রণ এনে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্য‌বহারে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। সরকারি কর্তাব্য‌ক্তি এবং সমাজের গণ্য‌মান্য‌রা এ ব্য‌াপারে রোল মডেল হয়ে উঠতে পারেন।

৩) ‘ফ্য‌ান্টস লোড’ কমানো অর্থাৎ প্রয়োজনের সময় ছাড়া সমস্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামে প্লাগ খুলে রাখলে বিদ্য‌ুৎ বাঁচে।

৪) বেশি দক্ষতাসম্পন্ন বৈদ্য‌ুতিক সরঞ্জাম এবং বেশি মাইলেজে শক্তিচালিত যানবাহন ব্য‌বহার করে শক্তি সাশ্রয় করা যায়।

৫) বাড়িতে প্রচলিত বালবের পরিবর্তে কমপ্য‌াক্ট ফ্লুরোসেন্ট লাইট ল্য‌াম্প ব্য‌বহার।

৬) ঘরের দেওয়াল এমন ভাবে রঙ করতে হবে, যাতে প্রাকৃতিক আলোতেই কাজ চলে যায়।

৭) বাড়ির বাইরে কম আলোর ব্য‌বহার।

৮) জলের অপচয় বন্ধ করতে হবে।

৯) বাড়িতে যথাসম্ভব গাছপালা লাগালে দূষণরোধ এবং রোদের তাপ রোধ করা সম্ভব।

১০) অল্প অল্প রান্না না করে এক সঙ্গে বেশি পরিমাণ রান্না করলে জ্বালানি খরচ কমে।

১১) রান্নার পরিমাণ অনুযায়ী রান্নার পাত্র ব্য‌বহার করতে হবে।

১২) রেফ্রিজারেটর যথাসম্ভব ভর্তি রাখলে বিদ্য‌ুৎ খরচ কমবে। এ ছাড়া খালি থাকলে প্লাগ খুলে রাখতে হবে। বিদ্য‌ুৎসাশ্রয়ী তারকাচিহ্নিত বৈদ্য‌ুতিক সরঞ্জাম ব্য‌বহার করতে হবে।

১৩) ওয়াশিং মেশিনে ৩০-৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাপড় কেচে রোদে শুকোতে হবে।

১৪) বাইকের পরিবর্তে হেঁটে অথবা বাইসাইকেল ব্য‌বহার করে শক্তি বাঁচানো যায়।

১৫) বিভিন্ন সামগ্রী মোড়ক ছাড়া অথবা পুনর্ব্য‌বহারযোগ্য‌ মোড়কে বাজারজাত করতে হবে।

১৬) বৈদ্য‌ুতিক এবং শক্তিচালিত সরঞ্জামের ব্য‌বহার কমাতে হবে।

১৭) বাড়িতে যথাসম্ভব একই আলো এবং পাখার তলায় সকলে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারলে আলাদা আলাদা আলো-পাখার সাশ্রয় হয়।

১৮) সরকারি অফিসে কিংবা রাস্তায় প্রয়োজনাতিরিক্ত আলোর ব্য‌বহার কমানো দরকার।

১৯) শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পিরবর্তে প্রাকৃতিক হাওয়া কিংবা ফ্য‌ানের উপর নির্ভরতা বাড়ানো প্রয়োজন।

২০) রান্নার সময় প্রেশার কুকার ব্য‌বহার এবং দানাজাতীয় শস্য‌ আগে থেকে ভিজিয়ে রাখলে জ্বালানি খরচ বাঁচে। সমস্ত রান্নাবান্নাই ঢেকে করাটা স্বাস্থ্য‌সম্মত ও জ্বালানি সাশ্রয়কারী।

National Energy Conservation Day শক্তি সংরক্ষণ যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শুধু সংরক্ষণ নয়, শক্তির ব্যবহার ও শক্তি উদ্ভাবনের অপর সামগ্রিক গণ সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন। সেই জন্যই ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় শক্তি সংরক্ষণ দিবস (National Energy Conservation Day )হিসেবে দিনটিকে উদযাপন করে ভারত সরকার। বর্তমানে শুধু জাতীয় স্তরে নয়। আন্তর্জাতিক সরেও সোলার অ্যালায়েন্স সহ অন্যান্য যৌথ শক্তি উন্নয়ন কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছে ভারত। এবং ভবিষ্যতের পথ সুরক্ষিত করতে সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। সাশ্রয় ও সংরক্ষণ ক্ষেত্রে ভারতের সাফল্যগুলিকে তুলে ধরার পাশাপাশি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে জাতীয় স্তরে যে কর্মযজ্ঞ চলছে সেগুলি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা।

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *