উত্তর কোরিয়ার রহস্যময় নেতা কিম জং ইল – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

0
321

কিম জং-ইল  গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া বা উত্তর কোরিয়ার শাসক ও প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। শৈশবে তার নাম ছিল ইউরি ইরসেনোভিচ কিম। তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব ছিলেন। দলটি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অদ্যাবধি উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীন রয়েছে। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে স্বীয় পিতা কিম ইল সাংয়ের মৃত্যুর পর ঐতিহ্যবাহী স্তালিনপন্থী সমাজতান্ত্রিক এই দেশটির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

উত্তর কোরিয়া নামে পরিচিত ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়ার শীর্ষ নেতা ছিলেন কিম জং ইল। তিনি দ্বিতীয় কিম জং নামেও পরিচিত। কিম জং ইলের পিতা কিম ইল সাং-কে উত্তর কোরিয়ার জনক বলা হয়। তার জন্ম হয় ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ এপ্রিল পিয়ং ইয়ংয়ে। পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর থেকে সাংয়ের জন্মদিনকে দ্য ডে অব সান হিসেবেই পালন করে আসছে উত্তর কোরিয়ার জনগণ। এই রাষ্ট্রনায়কের ঔরসেই কিম জং ইলের জন্ম। সে সময় গেরিলা যুদ্ধ চলছিল। কোরিয়ার মাউন্ট পেকতু নামীয় সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ায় একটি তাঁবুতে তার জন্ম হয়। পর্বত শিখরে প্রসূত শিশুটিই পরবর্তীকালে উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন। তবে তার জন্ম তারিখ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী প্রচলিত রয়েছে।
বিদ্যালয় চলাকালীন সময়েই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি চিলড্রেনস্‌ ইউনিয়নের সক্রীয় কর্মী ছিলেন।এছাড়াও, স্টাডি গ্রুপে মার্কসবাদ এবং অন্যান্য সাহিত্যের সাথে জড়িত ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ লীগের সমর্থক ছিলেন তিনি। সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ লীগের সহঃ সভাপতি নির্বাচিত হন।

পিতার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থেকে তিনি হাতে-কলমে রাজনীতি শিখে নিয়েছিলেন। পিতা কিম ইল সাং ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শুধু উত্তর কোরিয়ার জন্য এই দল গঠন করেন। সে সময়ই তিনি উত্তর কোরিয়াকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন উত্তর কোরিয়া পৃথক হওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর আক্রমণ চালায়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুলাই সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া পৃথক দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়ে আসছে। শুরু থেকেই উত্তর কোরিয়া সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন কিম জং ইল। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ নেতা হিসাবে তার আসনটি পাকাপোক্ত হয়ে যায়। তিনি উত্তর কোরিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। সেই সময় থেকেই তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি কিম জং তৃতীয়বারের মতো পিতা হন। এই পুত্র সন্তানের নাম কিম জং উন। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর কিম জং ইল উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর নামকরণ করেন সুপ্রিম কমান্ডার অফ দ্য কোরিয়ান পিপিলস্‌ আর্মি। ঐ সময় জাতিসংঘও দ্বি-খণ্ডিত কোরিয়াকে পৃথক দুটি দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে কিম দেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুলাই পিতা কিম ইল সাং মারা গেলে তার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতাসীন হন কিম জং ইল। এরপর থেকে উত্তর কোরিয়ার শাসক হিসেবে দেশ পরিচালনা করেছেন। দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে নানা বাধা-বিপত্তি সবসময় সাহস ও ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে। ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১ শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে কিম জং ইল-কে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে। সাময়িকী কর্তৃপক্ষের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ৩১তম স্থান দখল করেছিলেন তিনি।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here