স্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভারতের ইতিহাসে প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ এক স্মরণীয় নাম। প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ একজন ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবিদ স্বাধীনতা সংগ্রামী। ব্রিটিশ ভারতের ঢাকার মালিকান্দায় জন্ম।  তিনি স্বাধীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি এরপর দুই বার নিয়ে মোট তিনবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের জন্ম

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের জন্ম ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের তৎকালীন ঢাকা জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম মালিকান্দার এক যাদব পরিবারে।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের পিতা ও মাতা

পিতা পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ছিলেন এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং মাতা বিনোদিনী দেবী ছিলেন গৃহিণী। তার মাতাপিতা দুজনেই ছিলেন সহজ সরল ও ধার্মিক মানুষ।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

প্রফুল্লচন্দ্র অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনায় আগাগোড়া অত্যন্ত ভালো ফল করতেন এবং স্কলারশিপ পেতেন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ রসায়নে স্নাতকপরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। তেমনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর পরীক্ষাতেও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। ১৯২০ সালে ডি.এসসি ডিগ্রী অর্জন করেন। অল্পসময় অধ্যাপনা করেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। পরে তিনি কলকাতার টাঁকশালে ডেপুটি অ্যাসেস মাস্টার নিযুক্ত হন। এই পদে তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়।

১৯২১ সালে টাঁকশালের ডেপুটি এসেস মাস্টারের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। মোট আট বছর কারারুদ্ধ ছিলেন তিনি। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অভয় আশ্রম নির্মাণ করেন এবং ঢাকার বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের সংস্পর্শে আসেন। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্রীয় সমিতির সম্পাদক হন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লবণ সত্যাগ্রহে যোগ দেন। প্রফুল্লচন্দ্র ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহে যোগ দেন।

তাঁর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকা

প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারের ব্যাপক পরিকল্পনা এবং দু-বছরের মধ্যে বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষারূপে পশ্চিমবঙ্গে প্রবর্তিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

বাংলা পরিভাষা কমিটি

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের উদ্যোগে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই অক্টোবর রাজশেখর বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ শিক্ষাব্রতীদের নিয়ে বাংলা পরিভাষা কমিটি গঠিত হয়।

রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি

সুরেশচন্দ্র মজুমদারের উদ্যোগে এবং তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -এর জোড়াসাঁকোর বাড়িটি রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির হাতে অর্পণ করা হয়।

প্রখ্যাত ব্যক্তির সান্নিধ্য লাভ

আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট ওপেনহেইমার, অটো হান প্রমুখ বিশ্বের বিজ্ঞান জগতে বহু যুগন্ধর ব্যক্তির তিনি সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন।

গ্রামীণ শিল্প পরিষদের সদস্য

সারা ভারত গ্রামীণ শিল্প পরিষদের  তিনি প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন।

প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের রচিত গ্ৰন্থ

আজীবন গান্ধীবাদী, অকৃতদার প্রফুল্লচন্দ্র শেষজীবন কাটিয়েছেন নিঃসঙ্গ অবস্থায়, শ্রীঅরবিন্দচর্চায় এবং গ্রন্থ রচনায়। ফ্রম নাগপুর টু লাহোর, ওয়েস্ট টু-ডে, প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাস, বিজ্ঞানের কথা, জীবনস্মৃতি, মহাত্মা গান্ধী, জগৎগুরু বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ প্রভৃতি গ্ৰন্থ তিনি রচনা করেন।

১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ পরলোক গমন করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *