ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল বহু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। হিন্দু মুসলিম সকল শ্রেণীর মানুষ এই মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিলেন। আর তাঁদের সেই বলিদনের ইতিহাসে অনেকের কথাই অজানা। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে আসফাকুল্লাহ খান প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। আসফাকুল্লাহ খান ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
আসফাকুল্লাহ খান ছিলেন একজন সাহসী ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী যিনি রামপ্রসাদ বিসমিলের সাথে শহীদ হয়েছিলেন। তাঁদের দুজনকে একই দিনে পৃথক কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়।আসফাকউল্লা খান ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভারতীয় মুসলিম যাকে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হয়।
আশফাক ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম এবং মাতৃভূমির প্রতি তাঁর স্নেহ ছিলো অতুলনীয়। আশফাকুল্লা খান ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের শাহজাহানপুরে খাইবার উপজাতির এক মুসলিম পাঠান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ২২ অক্টোবর ১৯০০।তার পিতা শফিক উল্লাহ খান পাঠান পরিবারের সদস্য ছিলেন এবং তাঁর পরিবার সামরিক বাহিনীর জন্য বিখ্যাত ছিল। তাঁর মায়ের পক্ষ থেকে পরিবারটি উচ্চ শিক্ষিত ছিল এবং অনেক আত্মীয় ব্রিটিশ ভারতে পুলিশ ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মা মাজহুর-উন-নিসা একজন ধার্মিক মহিলা ছিলেন। চার ভাইয়ের মধ্যে আসফাকুল্লাহ ছিলেন সবার ছোট।
১৯২৪ সালে, আশফাকুল্লা খান সমমনা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি সংগঠন গঠন করেন যার নাম ছিল হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন। এই সমিতির উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন ভারত অর্জনের জন্য সশস্ত্র বিপ্লব সংগঠিত করা।
তাঁদের আন্দোলনকে উৎসাহিত করতে এবং তাঁদের কার্যক্রম চালানোর জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনতে, রাম প্রসাদ বিসমিল সহ HSRA-এর বিপ্লবীরা ৯ আগস্ট, ১৯২৫ সালে লখনউয়ের কাছে কাকোরিতে ব্রিটিশ সরকারের অর্থ বহনকারী ট্রেনটি লুট করে। বিসমিলকে ধরা পড়ে। পুলিশ এবং আশফাকুল্লা খানের একমাত্র সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং বিহার থেকে বেনারসে চলে আসেন, যেখানে তিনি ১০ মাস একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে কাজ করেন।
পরে তিনি দিল্লি গিয়েছিলেন দেশের বাইরে যাওয়ার উপায় খুঁজতে। তিনি তার এক পাঠান বন্ধুর সাহায্য নেন যিনি অতীতে তাঁর সহপাঠীও ছিলেন। এই বন্ধুটি, ১৯২৬ সালের ১৭ জুলাই সকালে বালির বিষয়ে পুলিশকে জানিয়ে তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, পুলিশ তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
কাকোরি ডাকাতের মামলাটি বিসমিল, আশফাকুল্লা খান এবং আরও কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে শেষ করা হয়েছিল। আশফাকুল্লা খানকে ১৯২৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর ফৈজাবাদ কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। যখন তাঁকে শিকল থেকে মুক্ত করা হয়, তিনি ফাঁসির দড়ির কাছে যান এবং সেটিকে চুমু খেয়ে বলেন : “আমার হাত কোনো মানুষকে হত্যা করেনি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। আল্লাহ্ আমাকে ন্যায়বিচার দেবেন।” মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা, স্বচ্ছ চিন্তাভাবনা, অদম্য সাহস, দৃঢ়তা ও আনুগত্যের কারণে এই বিপ্লবী মানুষটি শহীদ ও জনগণের মধ্যে কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।
Leave a Reply