আলিপুরদুয়ার জেলার দর্শনীয় কিছু ভ্রমণ স্থান।

0
363

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়।  আসুন পশ্চিমবঙ্গেরই  আলিপুরদুয়ার জেলার  কয়েকটি দর্শণীয় স্থান-

স্থানগুলি হলো— .

(১) বক্সা ফোর্ট, (২) জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, (৩) বক্সা টাইগার রিজার্ভ।

আসুন এই স্থানগুলির প্রতিটি বিস্তারিতভাবে দেখি…

বক্সা ফোর্ট—–

বক্সা দুর্গ হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আলিপুরদুয়ার জেলায় অবস্থিত একটি অধুনা-পরিত্যক্ত দুর্গ। বক্সা জাতীয় উদ্যানে ৮৬৭ মিটার (২,৮৪৪ ফু) উচ্চতায় এই দুর্গ অবস্থিত। জেলাসদর ও নিকটবর্তী শহর আলিপুরদুয়ারের থেকে এই দুর্গের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার (১৯ মা)। ভারত ও তিব্বতের মধ্যে যে রেশম বাণিজ্য পথটি ভুটানের মধ্যে দিয়ে যেত, সেটির একাংশ রক্ষার জন্য ভুটান রাজারা এই দুর্গটি ব্যবহার করতেন। ১৯৫০ সালে চীন তিব্বত দখল করে নিলে, বহু শরণার্থী এই অঞ্চলে উপস্থিত হন। সেই সময় পরিত্যক্ত দুর্গটি শরণার্থী আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। বক্সা টাইগার রিজার্ভের দিয়ে ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে বক্সা দুর্গে যাত্রা করা যায়। এই দুর্গ পূর্ব ভারতের প্রাচীনতম দুর্গগুলির মধ্যে একটি।  পূর্বে দুর্গটি একটি বাঁশ কাঠের কাঠামো ছিল যা পরে উচ্চ নিরাপত্তা কারাগার সহ একটি পাথরের কাঠামো হিসাবে পুনর্গঠন করা হয়েছিল। ব্রিটিশরা এই দুর্গটিকে বন্দীশিবির হিসেবে ব্যবহার করত। অনেক জাতীয় বিপ্লবী, ব্লক নেতা ও কবি এখানে বন্দী ছিলেন। দুর্গটি সবুজে ঘেরা এবং বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধ। আপনি যদি ভাগ্যবান হন তবে আপনি দুর্গের ঘন জঙ্গলের এর আড়ালে কালো ডোরাকাটা বাঘ ঘুরতে দেখতে পাবেন। এছাড়াও, দুর্গে হাতি, হরিণ, চিতাবাঘ, মহিষ, হরিণ এবং হিমালয় পাখি রয়েছে।

বক্সা দুর্গ থেকে নিম্নলিখিত ট্রেকিং পথগুলি গিয়েছে:

সান্তালাবাড়ি থেকে বক্সা দুর্গ ৫ কিলোমিটার (৩.১ মা)

বক্সা দুর্গ থেকে রোভার্স পয়েন্ট ৩ কিলোমিটার (১.৯ মা)

সান্তালাবাড়ি থেকে রুপাং উপত্যকা ১৪ কিলোমিটার (৮.৭ মা)

বক্সা দুর্গ থেকে লেপচাখা ৫ কিলোমিটার (৩.১ মা)

বক্সা দুর্গ থেকে চুনাভাতি ৪ কিলোমিটার (২.৫ মা)

জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ——–

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান (আগে ছিল জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য) পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলায় পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। সমুদ্রপৃষ্ঠ ৬১ মিটার উচ্চতায় তোর্সা নদীর তীরে অবস্থিত এই অভয়ারণ্যের সামগ্রিক আয়তন ১৪১ বর্গ কিলোমিটার। জলদাপাড়া মূলত নদীকেন্দ্রিক বনাঞ্চলময় একটি সুবিস্তৃত তৃণভূমি। জৈব ও উদ্ভিজ্জ প্রকৃতির বৈচিত্রময় সমাবেশ দেখা যায় এই অভয়ারণ্যে। এগুলির মধ্যে অবলুপ্তপ্রায় একশৃঙ্গ গণ্ডার বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এইসব প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৪১ সালে জলদাপাড়া একটি অভয়ারণ্য ঘোষিত হয়। জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পূর্ব হিমালয়ের নিম্নবর্তীস্থানে অবস্থিত এবং এটি বিস্তৃত বন্যপ্রাণী এবং সবুজ পাতার আবাসস্থল। এখানে প্রবাহিত মালঙ্গী নদীও একটি বিস্ময়কর আকর্ষণ। এই বনের মধ্য দিয়ে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হাতির পিঠে এবং জিপ সাফারি। বেশিরভাগ বনভূমি সাভানা এবং লম্বা ঘাসে আচ্ছাদিত। এশিয়াটিক এক-শিংওয়ালা গন্ডার অভয়ারণ্যের প্রধান আকর্ষণ। বাঘ, হাতি, হরিণ, সম্ভার, বার্কিং ডিয়ার, স্পটেড ডিয়ার, হগ ডিয়ার, বন্য শূকর এবং বাইসন এখানে পাওয়া অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে। জলদাপাড়াও এভিয়ান উত্সাহীদের আশ্রয়স্থল।
এটি ভারতের কয়েকটি স্থানের মধ্যে একটি যেখানে বেঙ্গল ফ্লোরিকান দেখতে পাওয়া যায়, যা সাধারণত বেঙ্গল বাস্টার্ড নামে পরিচিত। এর সাথে লেস পাইড হর্নবিল, জঙ্গল ফাউল, ময়ূর, তিতির এবং ক্রেস্টেড ঈগলের এখানে দেখতে পাবেন।
খুব সকালে, আপনি অভয়ারণ্যের প্রাণবন্ত উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগত দেখার জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ হাতি সাফারির পরিকল্পনা করতে পারেন। ১৫ জুন থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কাল বাদে বছরের অন্যান্য সময় জলদাপাড়া অভয়ারণ্য পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। অক্টোবর-মে মাসে, বিশেষত মার্চ-এপ্রিল মাসে বনে নতুন ঘাস গজায়। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে এলিফ্যান্ট সাফারির ব্যবস্থা আছে। হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গলের গভীরে যাওয়া যায় এবং বন ও তৃণভূমিতে গন্ডার, হাতির পাল ও অন্যান্য জীবজন্তুর বন্যজীবন প্রত্যক্ষ করা যায়। এলিফ্যান্ট সাফারি ছাড়াও বনে কার সাফারিও করা যায়।

টোটোপাড়া—-

অভয়ারণ্য সংলগ্ন টোটোপাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক পর্যটনস্থল। টোটোপাড়া বিশ্বে টোটো উপজাতির একমাত্র আবাসস্থল। বর্তমানে টোটোদের জনসংখ্যা ১০০০ জনের কাছাকাছি। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি স্তরে অনেক উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। যাই হোক, টোটোদের গ্রামে তাদের উপজাতীয় রীতিনীতি প্রত্যক্ষ করা পর্যটকদের কাছে এক বিরল অভিজ্ঞতা।

বক্সা টাইগার রিজার্ভ—

বক্সা জাতীয় উদ্যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। এটি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিকে বক্সা পাহাড় এলাকায় অবস্থিত। জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ৭৬০ বর্গ কিলোমিটার। জাতীয় উদ্যানের মধ্যে একটি বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র বা টাইগার রিজার্ভ রয়েছে। এই জাতীয় উদ্যানে বাঘ, সিভেট ও রেড জাঙ্গল ফাউল দেখা যায়। বক্সা টাইগার রিজার্ভ একটি উল্লেখযোগ্য গন্তব্য যা বাঘ রক্ষার জন্য ১৯৮২-১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
টাইগার রিজার্ভকে ১৯৯২ সালে একটি জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। রিজার্ভের প্যানোরামিক পাহাড়ি ল্যান্ডস্কেপ ৭৫৯ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং ৮টি স্বতন্ত্র বনের ধরন, অসংখ্য নদী এবং তাদের উপনদীগুলি এই রিসারভের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। টাইগার রিজার্ভ ভুটান এবং ভারত থেকে হাতিদের অভিবাসনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক দরজা হিসেবে কাজ করে। জাতীয় উদ্যানটি ঔষধি গাছ এবং অর্কিড দ্বারা সমৃদ্ধ। আপনি এখানে খুঁজে পেতে পারেন বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রানী যেমন চীনা প্যাঙ্গোলিন, রিগাল পাইথন এবং ক্লাউডেড চিতাবাঘ সহ অসংখ্য প্রজাতি এই অঞ্চলে অনন্য।
আশ্চর্যজনক প্রাণীর বৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে ২৩০টিরও বেশি স্বীকৃত প্রজাতি, ৬৭টি স্তন্যপায়ী প্রজাতি এবং ৩৬টি সরীসৃপ প্রজাতি, যার মধ্যে আদিবাসী এবং পরিযায়ী উভয় প্রজাতি রয়েছে। ব্ল্যাক-নেকড ক্রেন ভারতের বিরল পাখিদের মধ্যে একটি, এবং শীতের শুরুতে রিজার্ভে দেখা যায়। ৩০০ টিরও বেশি গাছের প্রজাতি, ২৫০টি ঝোপঝাড় প্রজাতি, ৪০০টি উদ্ভিদ প্রজাতি, ৯টি বেতের প্রজাতি এবং ১০টি বাঁশের প্রজাতি এখানে পাওয়া যায়। বক্সায় যেসব প্রজাতির প্রাণীদের দেখা যায় তাদের মধ্যে অনেকগুলি বিপন্ন প্রজাতির ; যেমন – বাঘ, এশীয় হাতি, লেওপার্ড ক্যাট, বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান, রিগাল পাইথন, চাইনিজ প্যাঙ্গোলিন, হিসপিড হেয়ার, হগ হরিণ। এছাড়াও কিছু বিপন্ন প্রজাতির পাখিও এখানে দেখা যায়।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here