ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই একটি দর্শণীয় স্থান উত্তরাখন্ডের আউলি।
মনে করা হয়, বিখ্যাত আদিগুরু শঙ্করাচার্য এখানে অষ্টম শতাব্দীতে এসেছিলেন। যোশীমঠ মন্দিরটি শুধুমাত্র তাঁর দ্বারা নির্মিত যা এখনও পর্যন্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এছাড়াও, এটি স্থানীয় উপজাতিদের জন্য পরিচিত খাতাউলি যা মূলত একটি আধা যাযাবর উপজাতির নাম ভোটিয়া উপজাতি যা মঙ্গোলিয়া থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
আউলি, ভারতের উত্তরাখণ্ডে অবস্থিত একটি হিল স্টেশন থেকে স্কি গন্তব্যস্থল, চারপাশে ওক গাছ, আপেল অর্কিড এবং পাইন গাছে ঘেরা। বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল ছাড়াও, এটি স্কিইং, ট্রেকিং, ক্যাম্পিং এবং আরও অনেক কিছুর মতো দুঃসাহসিক কার্যকলাপের আবাসস্থল।
আউলির উত্তরে, বদ্রীনাথ মন্দির রয়েছে যা হিন্দুদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র তীর্থস্থানগুলির মধ্যে একটি। আরেকটি আকর্ষণ হল ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স জাতীয় উদ্যান যা আলপাইন উদ্ভিদ এবং বন্যপ্রাণী তুষার চিতা এবং লাল শেয়ালের জন্য বিখ্যাত। পর্যটকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে, আউলি পর্যটন ভারত সরকারের জন্য প্রচুর রাজস্ব যোগ করে।
আউলি যেখান থেকে ভারতের উত্তরাখণ্ডের নীলকণ্ট, মানা পর্বত, নন্দা দেবীর ‘ধবল শিখর’-এর সৌন্দর্যে নিজেকে বুঁদ করে রাখতে পারবেন। বরফ মোড়া পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের হাতছানি। আউলি সাধারনত শীতকালে পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয় তার শীতকালীন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের কারনে। আউলি ভ্রমনের আরেকটি সেরা আকর্ষন এখানকার ক্যাবল কার। রোপওয়ে চেপে আউলি ভ্রমণ যেন একটা ম্যাজিক। ৫ নম্বর টাওয়ারের পর থেকে হিমালয় উন্মুক্ত হয়ে আছেন। আস্তে আস্তে টাওয়ার নম্বর যত বাড়বে ততই চোখের সামনে আসবেন নন্দাদেবী, দ্রোণাগিরি, ত্রিশূল, নন্দাকোট, পঞ্চচুল্লি। চোখের সামনে একের পর এক পিক উন্মুক্ত হতে দেখে আছন্ন হয়ে পড়েতে হয়, এ যেন স্বপ্নের থেকেও অনেক সুন্দর। সকালে-বিকালে অলস পায়ে পাহাড়ি পথের আঁকেবাঁকে ঘুরে বেড়ানো, ভোরবেলা লজের বারান্দা থেকে দিনের প্রথম আলোয় পাহারচুড়োর রংবদল আর সন্ধ্যায় সোনাঝরা সূর্যাস্তের মায়াবি আলোয় পাখিদের ঘরে ফেরা দেখতে দেখতে কেটে যাবে দুদিন।
GMVN লজের পাশেই একটা হনুমানজির মন্দির আছে। চেয়ার লিফট পয়েন্টের সামনের গেট দিয়ে গেলে কম সিঁড়ি ভাঙতে হয়। এখান থেকে নন্দাদেবি, ত্রিশুল, কামেট, দুনাগিরি, গৌরি আর হাতি পর্বত, নিলকান্ত পিকগুলো দেখা যায়।
আউলির রোপওয়ে হচ্ছে গিয়ে এশিয়ার দীর্ঘতম (৩.৭৫কিমি) তথা উচ্চতম আর গোটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় উচ্চতম। এক থেকে দশ এই ১০টি টাওয়ার, আউলিতে যাঁরা থাকবেন তাঁরা ৮নম্বর টাওয়ারে নেমে যেতে পারেন, কারণ এখানেই আউলির রিসোর্ট। আরো দুটো টাওয়ার পেরোলে আউলির বিখ্যাত ‘গরসন বুগিয়াল’। এই অলি শীতকালে স্কিইং ও আইস স্কেটিংয়ের ideal destination. এমনকি এখানে স্কেটিং শেখানোর স্কুলও আছে। ভাড়া পাওয়া যায় শীতের পোশাক, স্কিইংয়ের সরঞ্জাম আর গাইড।
আউলিতে দেখার বিশেষ জায়গা—
আউলি অন্যতম উত্তরাখণ্ডে দেখার সেরা জায়গা. আপনি যদি আউলিতে ভ্রমণ করেন তবে আউলির এই পর্যটন স্থানগুলি পরীক্ষা করে দেখুন।
১) গর্সন বুগিয়াল
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০৫৬ উচ্চতায় অবস্থিত, এটি একটি মনোরম অবস্থান যেখানে কেউ নন্দা দেবী এবং ত্রিশূলের দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। এই সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে আউলি হিল স্টেশন থেকে এই গন্তব্যে মাত্র ৩ কিলোমিটার ট্রেকিং করতে হবে।
২) কোয়ানি বুগিয়াল—
এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। গরসন বুগিয়াল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে, এই জায়গাটিকে ট্রেকারদের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। এটি জোশিমঠ-আউলি-গুরসো বুগিয়াল-কোয়ানি বুগয়ালের ট্রেকিং রুটের মধ্যে আসে। এটি ক্যাম্প করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা এবং প্রকৃতির কোলে উপভোগ করে।
৩) চেনাব হ্রদ—-
কম লোক সমাগমের সাক্ষী, সুন্দর জায়গাটি আপনাকে বিস্ময়ে রাখার জন্য দুর্দান্ত সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশের ঋণী। সবুজ গাছ-গাছালির মাঝে সুন্দর গ্রামগুলো পর্যটকদের জন্য লোভনীয়।
৪) ত্রিশূল চূড়া—
সবচেয়ে জনপ্রিয় আউলি পর্যটন স্থানগুলির মধ্যে একটি হল ত্রিশুল পাইক যা পশ্চিম কুমায়ুনে তিনটি হিমালয় পর্বত শৃঙ্গ দ্বারা গঠিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭১২০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।
৫)জোশিমাঠ—
যোশীমঠ অবিচ্ছেদ্য এক ভারতের তীর্থস্থান যেটি আদি গুরু শঙ্করাচার্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দির নিয়ে গর্বিত। যদিও এটি প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় গুরুত্বের, জোশিমঠ একটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যও।
৬) ট্রেকিং–
কুয়ানি বুগয়াল ট্রেকিংয়ের জন্য সেরা গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি। আপনি যখন কুয়ানি বুগিয়ালের দিকে ট্র্যাক করছেন, তখন আপনি সুন্দর তৃণভূমিগুলি অন্বেষণ করতে পারবেন যেগুলি তুষারাবৃত পর্বত শৃঙ্গে ঘেরা।
৭) স্কিইং–
আউলি স্কিইং কার্যকলাপের জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তুষার-ঢাকা এলাকাগুলি আপনাকে স্কিইং উপভোগ করতে এবং কিছু মজা এবং দুঃসাহসিক সময় কাটাতে দেয়। যদিও, পর্যটকরা মাউন্টেন বাইক ট্রেইলও উপভোগ করতে পারেন।
৮) ক্যাবল কার রাইড–
স্থানীয়ভাবে ক্যাবল কার রাইডিং নামে পরিচিত গন্ডোলা. একটি ক্যাবল কার যাত্রার অভিজ্ঞতা লালন করার জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত হতে পারে। যোশিমঠ থেকে শুরু করে ৪ কিলোমিটারের দূরত্ব জুড়ে গুলমার্গের পরে আউলি এশিয়ার সর্বোচ্চ এবং দীর্ঘতম কেবল কার রাইড রয়েছে।
৯) ক্যাম্পিং—
আউলি লেকের পাড়ে ক্যাম্পিং করাই সবকিছু। বনফায়ারের চারপাশে বসে থাকা, আপনার বন্ধু এবং প্রিয়জনদের সাথে বিশেষ মুহূর্তগুলি উপভোগ করার সময় সুস্বাদু খাবার খাওয়া এখানে করা সেরা জিনিস।
আউলি রোপওয়ে পয়েন্ট—-
আউলি গেলে অনেকেই রোপওয়ে চেপে, ঘুরে ফিরে আসেন। কিন্তু যদি সম্ভব হয় এক রাত থাকুন। বরফ না পেলেও থাকুন, অন্য কোন অধরা রূপ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
বদ্রীনাথ যাওয়ার পথে অথবা হেমকুন্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস যাওয়ার পথে আউলি দেখে নেওয়া যায়। কেবল কারে চেপে আকাশপথে আউলি ভ্রমণ চিরকাল মনে থেকে যাবে।
ভ্রমণের সেরা সময়—
আউলি সাধারনত শীতকালীন এক্টিভিটির জন্যে সেরা গন্তব্য। শীতকালীন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস এবং বরফের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার জন্যে এখানে সাধারনত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ভ্রমণের সেরা সময় ধরা হয়। তুষারাবৃত পর্বত উপভোগ করার জন্য ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেও কেউ তার ভ্রমণের সময়সূচী করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি যদি ভারতের আর্দ্র গ্রীষ্ম এড়িয়ে যেতে চান, তবে আপনি মে এবং জুন মাসে এখানে যেতে পারেন। আউলিতে শরৎকালও খুব সুন্দর ও মনোরম। তাই, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আউলি ট্রিপের জন্য আপনার টিকিট বুক করা সবচেয়ে ভালো হবে।
কিভাবে আউলি পৌঁছাবেন—
আউলি ভারতের সবচেয়ে মনোরম হিল স্টেশনগুলির মধ্যে একটি, তাই, আপনার জীবনে অন্তত একবার এটি পরিদর্শন করা উচিত। এখানে এই গন্তব্যে পৌঁছানোর বিভিন্ন উপায় রয়েছে।
আকাশ পথে–
নিকটতম বিমানবন্দর হল জলি গ্রান্ট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেরাদুন বিমানবন্দর ২৩৭ কিমি দূরে অবস্থিত।
এছাড়াও রেল যোগে, সড়কপথে যাওয়া যেতে পরে।
কোথায় থাকবেন——
যোশিমঠ থাকতে চাইলে রোপওয়ে পয়েন্টের কাছে তিন-চারটে হোটেল আছে। সাধারণ মানের। তবে পরিষ্কার ঘর, লাগোয়া বাথরুম, গীজার ইত্যাদি আছে। আউলিতে থাকার জন্যে GMVN এর স্কি রিসোর্ট ছাড়াও কয়েকটি রিসোর্ট ও লজ আছে।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।