ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ছিলেন বাংলা গানের জগতে এক যুগান্তকারী কণ্ঠশিল্পী। সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল। শ্যামা সঙ্গীতে একজন অসামান্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ১০ ই সেপ্টেম্বর ১৯২২ সালে ব্রিটিশ ভারতের বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বালির বারেন্দ্র পাড়ায় অত্যন্ত রক্ষণশীল শাক্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। মাতা অন্নপূর্ণা দেবী সুন্দর গান গাইতেন। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য বিবাহ করেন রেখাদেবীকে। তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যই পিতার সঙ্গীত-ধারার একমাত্র উত্তরাধিকারী। প্রবাদপ্রতিম শ্যামা সঙ্গীত শিল্পী অকালপ্রয়াত পান্নালাল ভট্টাচার্য ছিলেন তার সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা।
পড়াশোনা করেছেন বালির রিভার্স টম্পসন স্কুলে। আর পারিবারিক ও ধর্মীয় ভাবেই তার সঙ্গীত শিক্ষা ও সাধনা শুরু হয়েছিল। সঙ্গীতের তালিম নেন গোকুল নাগ, পণ্ডিত সত্যেন ঘোষাল প্রমুখের কাছে।
আধুনিক বাংলা ও হিন্দি গান দিয়ে সঙ্গীত জীবন শুরু করেন তিনি। হিন্দি ছবি ‘ মহাপ্রভু চৈতন্য’ তে তার গাওয়া গানগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। দীর্ঘ পাঁচ দশকের সঙ্গীত জীবনে তিনি প্রায় ৫০০টি গানের রেকর্ড করেন। নিজে লিখেছেন প্রায় ৪০০ টি গান। গীতিকার হিসাবে তিনি “শ্রীপার্থ” ও “শ্রীআনন্দ” ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রণব রায়ের কথায় ও সুবল দাশগুপ্তর সুরে পায়োনিয়ার রেকর্ডে গাওয়া তার প্রথম গান “যদি ভুলে যাও মোরে, জানাবো না অভিমান” অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। ‘শহর থেকে দূরে’ ছবিটিতে ‘রাধে ভুল করে তুই চিনলে না তোর প্রেমিক শ্যাম রায়’ গানটি গেয়ে তিনি পাদপ্রদীপের সামনে চলে আসেন। বাংলা গান থেকে শুরু করে নজরুলগীতি, শ্যামা সঙ্গীত, উচ্চাঙ্গ সংগীতের সব শাখাতেই তার সমান দক্ষতা ছিল। বহু জনপ্রিয় গানের তিনি সুরকার ছিলেন। ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ চলচ্চিত্রে তার দেওয়া সুর এক ইতিহাসের সৃষ্টি করেছিল।তিনি বহু বাংলা চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক গায়ক ছিলেন। তিনি ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাধক রামপ্রসাদ’ ছবিতে ২৪ টির মধ্যে ২৩ টি গান গেয়েছিলেন।
‘পাশের বাড়ি’ ছবিতে সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে “ঝির ঝির ঝির ঝিরঝিরি বরষায়” গানটি জনপ্রিয় হয়। সমানভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল মাটিতে জন্ম নিলাম, এই ঝির ঝির বাতাসে, অন্তবিহীন এই অন্ধ রাতের, ঝনন ঝনন বাজে প্রভৃতি গান গুলি।
নেপথ্য গায়ক হিসাবে—
বাবলা, বাদশা, শহর থেকে দূরে, সাহেব বিবি গোলাম, সাড়ে ৭৪, সতী কঙ্কাবতী, শ্রীবৎস চিন্তা, স্বামীজি, তমসা, তানসেন, যত মত তত পথ, যাত্রিক, বন্ধন, বাঁকা লেখা, বড়দিদি, বেহুলা লখিন্দর, ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণ, আবীরে রাঙানো, অদৃশ্য মানুষ, আদ্যাশক্তি মহামায়া, আলেয়া, অর্ধাঙ্গিনী, অসমাপ্ত, বালক গদাধর, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য, বীরেশ্বর বিবেকানন্দ, চৈতালি, চলাচল, চন্দ্রনাথ, দেবীতীর্থ-কামরূপ, দেবীতীর্থ কালীঘাট, ঢুলি, গোধূলি, জয় মা তারা, কালো, মহাপ্রস্থানের পথে, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র, মীরাবাঈ, মেজদিদি, নববিধান, নষ্টনীড়, রানী রাসমণি, রূসসী, শচীমাতার সংসার, সাধক বামাক্ষেপা, সাধক রামপ্রসাদ।
‘নববিধান’, ‘পাশের বাড়ি’, ‘লেডিজ সিট’ সহ পাঁচটি ছবিতে অভিনয় করেছেন।
সংগীত পরিচালক হিসাবে— জয় মা তারা, লেডিজ সিট।
২৭ ডিসেম্বর, ১৯৯২ সালে তিনি প্রয়াত হন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।