মেঘ মুলুকের দেশ ‘দাওয়াইপানি’ ভ্রমণ।

0
790

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। কেউ চায় বিদেশে ভ্রমণে, আবার কেউ চায় দেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণে। এমনি এক ভ্রমণ এর জায়গা হলো  দাওয়াইপানি।

 

আপনি যখন গ্রীষ্মের তাপ থেকে বাঁচতে চান, তখন আপনার মাথায় সবচেয়ে বেশি চিন্তা আসে কী?  শহর খাদ এবং একটি হিল স্টেশনের দিকে রওনা, তাই না?  যাইহোক, আমাদের নিজস্ব দার্জিলিং-এর দিকে রওনা হওয়া লক্ষাধিক লোকে আপনি যদি হতাশ হয়ে পড়েন, তাহলে হারাবেন না।  আশেপাশে অনেক বিচিত্র ছোট অফ-ট্র্যাক পর্যটন গন্তব্য রয়েছে যা আপনার অবস্থানকে স্মরণীয় করে তুলতে পারে।

যারা দার্জিলিং  এ ঘুরতে যান তারা অবশ্যই দার্জিলিং এ পর্যটকদের ভিড় সম্পর্কে জানেন,তাই অনেকে  দার্জিলিং এর কাছাকাছি অফবিট লোকেশান এর খোজ করেন যেখানে তারা শান্ত মনে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে পারবেন ও তার সাথে রাজকীয় কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার দর্শন পাওয়া গেলে তো কোন কোথায় হয় না । হ্যাঁ ঠিক এমনি একটি ভ্রমণ স্থান দাওয়াইপানি।দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে অবস্থিত একটি অখ্যাত গ্রাম হল এই দাওয়াইপানি, দাওয়াইপানি গ্রামটির উচ্চতা হল ৬৫০০ ফিট । প্রায় ৬ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে যে সাদায় মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখা যাবে তা বলা বাহুল্য। বরং বলা চলে, দাওয়াইপানি থেকে ধরা দেবে হিমালয়ের এক প্যানোরমিক ভিউ। তার মধ্যে নেপাল ও ভুটান হিমালয়ের নামজাদা শৃঙ্গও রয়েছে।

দাওয়াইপানি কথাটির মানে হোল ঔষধের জল , এই গ্রামে একটি স্থানিয় নদি আছে যেটির নাম হোল ‘খোলা’ এই নদীর জল খনিজ পদার্থে পরিপুষ্ট , কোন ক্ষত স্থানে এই জল লাগালে সেটি নিরাময় হয়ে যায়। বহু কাল পূর্বে এক ইংরেজ অফিসার এই গ্রামে এই ঔষধীয় জলের আবিস্কার করেন তারপর থেকে এই স্থানটির নাম হয় দাওাইপানি।

দাওয়াইপানির নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি খরস্রোতা নদী। সেখানে ব্রিটিশদের তৈরি করা একটি সেতুও রয়েছে। ইচ্ছা হলে পাহাড়ি গ্রামের রাস্তা ধরে ঘুরে নিতে পারেন। যদিও দাওয়াইপানি শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশ আপনাকে এই গ্রামের প্রেমে ফেলতে বাধ্য। প্রকৃতির মাঝে কটা দিন কাটিয়ে যাওয়ার এক দুরদান্ত ঠিকানা।

চারিদিকে সবুজ অরণ্যে ঘেরা ,মেঘমুক্ত আকাশ, পাখিদের কোলারব এবং তার সাথে কাঞ্চজঙ্ঘার হাতছানি যা প্রকৃতি প্রেমিদের কাছে সর্গ থেকে কিছু কম নয় এইসব হোল এই দাওয়াইপানির মুল বৈশিষ্ট্য । এখানে দরকার পরবে না কোন Alarm Clock এর পাখিদের মিষ্টি কুঞ্জন আপনাদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে তুলবে।
দাওাইপানির হমস্তে রুম থেকেই আকাশ পরিস্কার থাকলে দেখতে পাবেন কাঞ্চজঙ্ঘার গোটা পর্বতশৃঙ্খলা ও তার সাথে পাহাড়ি উপত্যকার এবং তার মাঝ দিয়ে খেলা করা মেঘেদের অসাধারন ভিউ ।

দাওয়াইপানি আউটডোর কার্যকলাপ:

ট্রেকিং – যাযাবর হোমস্টে – দাওয়াইপানি থেকে পেশোক রোড পর্যন্ত এক ঘন্টার একটি জনপ্রিয় হালকা ট্রেক।  গুরুতর ট্রেকারদের জন্য মাঝারি থেকে উচ্চ অসুবিধার স্তরের আরও কয়েকটি ট্রেকিং ট্রেইল রয়েছে।
জঙ্গলে হাইক – এই জায়গাটিকে ঘিরে ঘন হিমালয় বনাঞ্চল।  তাই একটি হাইকিং অ্যাডভেঞ্চারে যান এবং প্রকৃতির রহস্যগুলি আবিষ্কার করুন।
পাখি পর্যবেক্ষন – ঘন জঙ্গল হল বিভিন্ন ধরণের পাখির প্রাকৃতিক আবাস।
খামার পরিদর্শন – সবজি এবং ফলের স্থানীয় খামার পরিদর্শন উপভোগ করুন।
ঐতিহ্যবাহী নৃত্য – স্থানীয়দের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের সাক্ষী হয়ে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপে নিমগ্ন হন।

দাওয়াইপানি কাছাকাছি আকর্ষণ:

রিসোর্টটি দার্জিলিং শহর থেকে অল্প দূরত্বে এবং তাই এখান থেকে বেশ কয়েকটি জায়গায় পৌঁছানো সহজ।
দার্জিলিং – পাহাড়ের রাণী রাজকীয় টাইগার হিল ভিউপয়েন্ট থেকে শুরু করে, টয় ট্রেন রাইড, মল এরিয়া শপিং থেকে শুরু করে বিশ্ব বিখ্যাত দার্জিলিং চায়ের সূক্ষ্ম স্বাদ গ্রহণের জন্য সমস্ত ধরণের পর্যটন আকর্ষণ অফার করে।
রিসোর্টটি লামাহাট্টা, সিটং বা ‘কমলা গ্রাম’, কালিম্পং ইত্যাদির মতো অন্যান্য শহরের কাছাকাছিও।

 

কিভাবে যাবেন:
ট্রেনে: হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে চড়ুন, NJP-এ নামুন।  দাওয়াইপানি গ্রাম থেকে ৭৬ কিমি দূরে।  রাস্তার অবস্থার উপর নির্ভর করে দাওয়াইপানি পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘন্টা, ৫০ মিনিট সময় লাগে।
ফ্লাইটে: বাগডোগরা বিমানবন্দরটি গ্রাম থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং বিমানবন্দর থেকে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে।

শিলিগুড়ি থেকে দাওয়াইপানির দূরত্ব প্রায় ৭০ কিমি এবং এনজেপি রেল স্টেশন থেকে দূরত্ব প্রায় ৭৬কিমি ও বাগদোগরা বিমানবন্দর থেকে দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিমি. ।দার্জিলিং থেকে এক ঘণ্টার পথ দাওয়াইপানি। আর শিলিগুড়ি দিয়ে গেলে গাড়িতে সময় লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টা। দার্জিলিং থেকে বেশ উঁচুতে অবস্থিত হলেও ঘুম স্টেশন থেকে মাত্র কুড়ি মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন দাওয়াইপানি।

 

যেহেতু দাওয়াইপানি উচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত, তাই সারা বছরই এখানে শীতল আবহাওয়া থাকে।  বর্ষা এখানে বিশ্বাসঘাতক কারণ দাওয়াইপানিতে জুলাই এবং আগস্ট মাসে খুব ভারী বৃষ্টিপাত হয়।  সুতরাং, এই মাসগুলি ব্যতীত, আপনি বছরের যে কোনও সময় আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন।  একটি সতর্কীকরণ: দাওয়াইপানি পরিদর্শন করার সময় ভারী পশমের সাথে নিজেকে বন্ধন করতে ভুলবেন না।

 

শান্ত, নিরিবিলি, ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। হাওয়া-জল বদল করতে ঘুরে আসতে পারেন দাওয়াইপানি। ‘দাওয়াই’ কথাটার অর্থ ওষুধ। আর ‘পানি’ মানে জল-হাওয়া। সুতরাং উত্তরবঙ্গের এই গ্রামে এলে আপনার শরীর আর মন দুটোই ভাল হয়ে যাবে নিমেষে।যারা দৈনিক জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিতে চান তাদের কাছে এই স্থানটি একটি আদশ স্থান হতে পারে, হাতে দু-দিন সময় থাকলে তা অনায়াসে এখানে কেটে যাবে ।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here