আজ বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় ও গুরুত্ব।

0
213

প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালিত হয়।  ভারতে, মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুবার্ষিকীর সাথে মিল রেখে প্রতি বছর ৩০শে জানুয়ারী পালন করা হয়। কুষ্ঠ একটি অবহেলিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগ (NTD) যা এখনও ১২০ টিরও বেশি দেশে দেখা যায়, প্রতি বছর ২০০০০০ এরও বেশি নতুন কেস রিপোর্ট করা হয়।
বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালনের লক্ষ্য হল এই রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা, সাধারণ জনগণকে সচেতন করা যে এটি এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ছড়ানো রোগ এবং এটি সহজেই নিরাময় করা যায়। এক সময় ভুল ধরনা ছিল যে, অসংখ্য মানুষের কাছে এই রোগ হচ্ছে পাপের ফল। মানুষ মায়ের গর্ভের সন্তান অপারেশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ঠ করছে। এক জনের দেহ থেকে কিডনি অন্য জনের দেহে স্থাপন করে মৃত্যুপথযাত্রীকে জীবন দিচ্ছে। অথচ সেই অভিশপ্ত রোগ বলে প্রচার পাওয়া নিরীহ রোগ কুষ্ঠের কুসংস্কার কাটছে না কিছুতেই। কুষ্ঠের চিকিৎসা আছে, কুষ্ঠ ভালো হয়; তার পরও পৃথিবী জুড়ে কুষ্ঠ রোগীরা বড়ই অস্পৃশ্য।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে মহামারীর মধ্যেও কুষ্ঠ রোগকে ভুলে না গিয়ে সতর্কতার সঙ্গে এর চিকিৎসার বিষয়টিকে নজরে এনেছেন। তারা সচেতনতামূলক একটি প্রচার শুরু করেছেন। যাতে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অবহেলিত না হয় সেই আর্জিও জানানো হয়েছে।
একথা অজানা নয়, স্বয়ং মাদার টেরেসা নিজেও কুষ্ঠ রোগীদের সেবা করেছেন। চিকিৎসক অরবিন্দ বলছেন, অনেকেই মনে করেন কুষ্ঠ ছোয়াচে তবে এত সহজ নয়। হাত ধরলে কিংবা সংস্পর্শে এলেই যে আপনিও রোগটি দ্বারা আক্রান্ত হবেন, সেটি কিন্তু ভুল। তারা একেবারেই অচ্ছুত নন, তাদের সমানভাবে বেঁচে থাকার সকলের সঙ্গে থাকার অধিকার রয়েছে।

 

মাইকোব্যাকটেরিয়াল লেপ্রি নামের একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই রোগ হয়। কুষ্ঠ রোগ মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের বাইরের দিকের স্নায়ু, ত্বক, অণ্ডকোষ এবং নাকের মিউকাস মেমব্রেনের ক্ষতি করে। আক্রান্ত ব্যক্তির নাক-মুখের সর্দির মাধ্যমে এই রোগ সাধারণত অন্য সুস্থ মানুষে ছড়ায়। তবে বেশির ভাগ মানুষেরই কুষ্ঠ প্রতিরোধক ক্ষমতা দেহে থাকায় সাধারণত তা আক্রমণ করতে পারে না।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে এই রোগ ছড়ায় না। এই রোগের উপসর্গগুলো হচ্ছে – চামড়ায় সাদা সাদা দাগের মতো দেখা দেয়। দেহের যে সব স্থানে এমন সংক্রমণ দেখা দেয়, সেখানে পিণ্ডাকার হয়ে ফুলে যায়। এই রোগের ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি একেবারেই কম। তাই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার দু-তিন বছর পর আস্তে আস্তে তা প্রকাশ পেতে থাকে। সরকারি বহু প্রতিষ্ঠানেই বিনা মূল্যে কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা হয়। তাই কুষ্ঠ দেখে রুষ্ট হওয়ার কোনওই কারণ নেই। কুষ্ঠ হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হবে, কারণ কুষ্ঠের দরুন অন্ধত্ব, বন্ধ্যাত্বসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে, কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে, পায়ের নীচে ক্ষত হতে পারে, নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে পারে। তাই যে রোগ ভালো হয়, তা-ও আবার বিনা পয়সায়, তাকে নিয়ে কেন বসে থাকবে? কুষ্ঠ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সারা বিশ্বে ৩০ জানুয়ারি কুষ্ঠ দিবস পালিত হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখ্য ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণ দিবস। কুষ্ঠ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলার ডাক প্রথম দিয়েছিলেন গান্ধীজি। কুষ্ঠরোগীকে যে সমাজ অবাঞ্ছিত, উপেক্ষিত, অবহেলিত করে রাখতে পারে না, তা প্রথম শিখিয়েছিলেন মহাত্মা।

 

বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস কুষ্ঠ বা হ্যানসেনস রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবার আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হয়। এই তারিখটি ফরাসি মানবতাবাদী রাউল ফোলেরেউ মহাত্মা গান্ধীর জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন, যিনি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ১৯৫৪ সালে দিবসটি পালন করা শুরু হয়।  কুষ্ঠ রোগ বিশ্বের প্রাচীনতম নথিভুক্ত রোগগুলির মধ্যে একটি। এটি একটি সংক্রামক দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা স্নায়ুতন্ত্রকে কাবু করে, বিশেষ করে শরীরের শীতল অংশের স্নায়ুগুলি: হাত, পা এবং মুখের। পোপ ফ্রান্সিস এই উদযাপনের সমর্থনে কথা বলেছেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here