পূর্ব বর্ধমান, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীঃ- বর্ধমানে সেই সময় কংগ্রেসের দূর্গ টিকিয়ে রেখেছিলেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাঁই পরিবার। সাঁইরা ছিল বর্ধমানের বড় জোতদার এবং পুরোনো কংগ্রেসি। সেই সময় বর্ধমানে যখন সিপিএম প্রায় একাধিপত্য স্থাপন করে ফেলতে চাইছে তখন সাঁইবাড়ি একরকম শেষ কংগ্রেসি দূর্গ ছিল বলা যায়। সাঁইরা ছিল সাত বোন পাঁচ ভাই- প্রণব, মলয়, নবকুমার, উদয় এবং বিজয়। অভিযোগ, বর্ধমানের আলমগঞ্জে কংগ্রেসের সক্রিয় সমর্থক ইন্দ্রভূষণ গড়িয়াকে সিপিএম সমর্থকরা বোমা মেরে খুন করে। সেই হত্যামামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল সাঁই পরিবার। আর তারপরেই ঘটে যায় দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা।
সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম একটি ক্ষত-স্বরূপ। আজও পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীদের কাছে এটি বিব্রতকর একটি ঘটনা বলা যেতেই পারে। ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শোকাহতদের স্বান্তনা জানাতে বর্ধমানে ছুটে আসেন।
এই ঘটনার পর থেকে সাঁই-ভাইদের মা মৃগনয়না দেবী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, যা থেকে মৃত্যুর আগেও তিনি সেড়ে উঠতে পারেন নি। সাঁই-ভাইদের মৃত্যুর এক দশক পর তাদের মা পরলোক গমন করেন। যেসব কমিউনিস্ট-ক্যাডার-রা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলো বলে অভিযোগ করা হয়, জড়িতদের কাউকেই আইনের আওতায় যায় নি।
উল্লেখ্য:১৯৭০ সালের ১৭ মার্চ বর্ধমান শহরের প্রতাপেশ্বর শিবতলা লেনে খুন হন দুই ভাই, মলয় সাঁই ও প্রণব সাঁই। তাঁদের সঙ্গে নিহত হন সেই সময়ের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছাত্র জিতেন রায়। ওই বাড়িতে পড়াতে যেতেন তিনি।
মামলায় নাম জড়ায় প্রয়াত নিরুপম সেন, বিনয় কোঙার-সহ সিপিএমের বহু নেতা-কর্মীর। কংগ্রেসের সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই তারাপদ মুখোপাধ্যায় কমিশন গড়ে তদন্ত শুরু করেন। পাঁচ বছর পরে, ১৯৭৭ সালে সিপিএম ক্ষমতায় এসে ওই কমিশন বন্ধ করে দেয়। সাঁই পরিবারের অভিযোগ, মুখোপাধ্যায় কমিশন তদন্ত-রিপোর্ট দিলেও বিচার মেলেনি। আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অরুণাভ বসুকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিশন গঠন করেন।
প্রতি বছরই অভিশপ্ত ১৭ মার্চে সাঁইবাড়িতে শহিদদের স্মরণ করা হয়। আগে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে স্মরণ অনুষ্ঠান করা হলেও, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই অনুষ্ঠান করে আসছে তৃণমূলই। রবিবার পুর্ব বর্ধমান জেলার শহর বর্ধমানের সাঁইবাড়িতে শহিদদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপণ দেবনাথ, বর্ধমান পুর্ব লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শর্মিলা সরকার, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস সহ আরও অন্যন্য তৃণমুল কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা। শহীদ বেদিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদনের শেষে সাঁইবাড়ি ঘুরে দেখেন উপস্থিত সকলে।