এপ্রিল ফুল দিনটি আমাদের সকলের কছে এক অতি পরিচিত দিন। আমরা মজার ছলে এই দিনটিতে চেনা জানা আমাদের পরিচিত দের মজা করে বোকা বানিয়ে থাকি।
এপ্রিল ফুল দিবস প্রতিবছর এপ্রিল মাসের প্রথম দিন পালিত হওয়া একটি দিবস। মাঝে মাঝে একে সকলকে বোকা বানানোর দিন বলে উদ্যাপন করা হয়। মাসের প্রথম দিনটিতে সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় ‘এপ্রিল ফুল’। অনেক বছর ধরেই এটি পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু কীভাবে এটি শুরু হয়েছিল, সেটি অনেকেরই জানা নেই। এই দিন প্রতিবেশীদের উপর কৌতুক করার জন্য একটি দিন হিসাবে সর্বত্র স্বীকৃত। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৫৬৪ সালে ফ্রান্সে নতুন ক্যালেন্ডার চালু করাকে কেন্দ্র করে এপ্রিল ফুল ডে’র সুচনা হয়। ঐ ক্যালেন্ডারে ১লা এপ্রিলের পরিবর্তে ১লা জানুয়ারীকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণনার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে কিছু লোক তার বিরোধিতা করে। যারা পুরনো ক্যালেণ্ডার অনুযায়ী ১লা এপ্রিলকেই নববর্ষের ১ম দিন ধরে দিন গণনা করে আসছিল, তাদেরকে প্রতি বছর ১লা এপ্রিলে বোকা উপাধি দেয়া হতো। ফ্রান্সে পয়সন দ্য আভ্রিল পালিত হয় এবং এর সাথে সম্পর্ক আছে মাছের। এপ্রিলের শুরুর দিকে ডিম ফুটে মাছের বাচ্চা বের হয়। এই শিশু মাছগুলোকে সহজে বোকা বানিয়ে ধরা যায়। সেজন্য তারা ১ এপ্রিল পালন করে পয়সন দ্য এভ্রিল অর্থাৎ এপ্রিলের মাছ। সে দিন বাচ্চারা অন্য বাচ্চাদের পিঠে কাগজের মাছ ঝুলিয়ে দেয় তাদের অজান্তে। যখন অন্যরা দেখে তখন বলে ওঠে পয়সন দ্য আভ্রিল বলে চিৎকার করে। কবি চসারের ক্যান্টারবারি টেইলস(১৩৯২) বইয়ের নানস প্রিস্টস টেইল এ এই দিনের কথা খুজে পাওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যে এপ্রিল ফুলের দিন প্রাপককে অর্থাৎ যিনি এপ্রিলের বোকা হন তাকে “এপ্রিল ফুল!” বলে হাসি তামাশা ও চিৎকার করে প্রকাশ করা হয়।
তাই বছরের পর বছর ধরে ১ এপ্রিল বন্ধু-বান্ধব, ভাইবোন এবং সহকর্মীরা আমাদের বোকা বানায়। জীবনে কমপক্ষে একবার বোধ হয় আমরা সকলেই ‘এপ্রিল ফুল’ (April Fool) হয়েছি। এদিন যে কোনও বয়সের মানুষ উৎসাহের সঙ্গে একে অপরকে বোকা বানানোর খেলায় অংশ নেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বোকা হওয়ার পরেও কেউ রাগ করেন না, বরং নিজেই সেই খেলায় জড়িয়ে পড়েন।
তবে এই ‘এপ্রিল ফুলস ডে’ -র পিছনের রয়েছে ইতিহাস। জানেন কীভাবে এটি শুরু হয়েছিল?
এই দিনটি চালু হওয়ার পিছনে এক এক রকম সংস্কৃতির সঙ্গে যোগ রয়েছে এই কাহিনির। দেখে নেওয়া যাক, সেগুলি কী কী।
কথিত আছে যে ১৩৮১ সাল থেকে এই দিনটি উদযাপন শুরু হয়। আসলে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড এবং বোহেমিয়ার রানী অ্যান বাগদানের ঘোষণা করেন। বাগদানের তারিখ রাখা হয়েছিল ৩২ মার্চ। মানুষ উদযাপন শুরু করেন। পরে, তারা বুঝতে পারেন যে, ক্যালেন্ডারে ৩২ মার্চ কোনও তারিখ নেই। তখন তারা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, তারা বোকা হয়েছেন। এরপর থেকে এপ্রিল ফুলস ডে উদযাপন শুরু হয়।
রোমান তত্ত্ব: রোমান দেবতা প্লুটো যখন তার স্ত্রী পারসিফনকে অপহরণ করে আনেন, তখন পারসিফনের মা সেরিস মেয়েকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু পান না। মেয়ে তখন মাটির নীচে। কিন্তু তাঁর মা ‘বোকার মতো’ মাটির উপরে খুঁজতে থাকেন। সেই ‘বোকামি’র কথা ভেবেই নাকি রোমানরা এই দিনটিতে বোকামি দিবস পালন করত।
ক্যালেন্ডার বদল: এই দিনটি ঘিরে আরও একটি বিশ্বাসও রয়েছে যে, আগে ফ্রান্সে এপ্রিলেই নববর্ষ উদযাপিত হত। ১৫৮২ সালে চার্লস পোপ গ্রেগরি দ্বাদশ ফ্রান্সে পুরনো ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করে, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করেন। তা সত্ত্বেও অনেকে পুরনো ক্যালেন্ডার অনুসরণ করতে থাকেন। এরপর থেকে ১ জানুয়ারিতে নতুন বছরের সূচনার দিন হিসাবে পালন হওয়া শুরু হয়। তবে, অনেকে এটি মানতে অস্বীকার করেন এবং এপ্রিল মাসেই বর্ষারম্ভের দিন পালন করতে থাকেন। যারা নতুন ক্যালেন্ডারকে সমর্থন করেছেন তারা এপ্রিলে নতুন বছর সমর্থনকারীদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা শুরু করেছিলেন। এই ব্যক্তিদের ‘এপ্রিল ফুল’ বলা শুরু হয় এবং এজন্য এপ্রিলের প্রথম দিনেই ‘এপ্রিল ফুলস ডে’ হিসাবে প্রচলিত হয়। নতুন ক্যালেন্ডারের পক্ষ যাঁরা, তাঁদের ডাকা হত এপ্রিল ফিশ বলে। সেই থেকেই এপ্রিল ফুলের গল্প শুরু হয়। ‘এপ্রিল ফুল’-এর ইতিহাস নিয়েই এটিই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রচলিত গল্প।
ব্রিটিশ কাহিনি: ব্রিটিশ লোককথা বলে, নটিংহ্যামশায়ারের ‘গথাম’ শহর নাকি ছিল বোকাদের শহর। ত্রয়োদশ শতকের নিয়ম ছিল, সে দেশের রাজা যেখানে যেখানে পা রাখবেন, তা হয়ে যাবে রাষ্ট্রের সম্পত্তি। যখন গথামবাসীরা শুনলেন, রাজা আসছেন, তাঁরা নাকি বললেন, ঢুকতে দেবেন না। রাজা সৈন্য পাঠালেন। সৈন্য এসে দেখল সারা শহরে ভয়াবহ কাণ্ড! সবাই বোকার মতো কাজ করছে। তারা ফিরে গিয়ে রিপোর্ট দিল। রাজা বললেন, এমন বোকাদের শাস্তি দেয়া যায় না। তাই তিনি মাফ করে দিলেন। গথাম স্বাধীন থাকল। সেই থেকে দিনটি ‘বোকা দিবস’।
নেদারল্যান্ডসের কাহিনি: ১৫৭২ সালের ১ এপ্রিল। এদিন নেদারল্যান্ডসের ডেন ব্রিয়েল শহরটি স্প্যানিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়। এই দিন বিদ্রোহীরা স্পেনের শাসকদের বোকা বানিয়ে ছাড়ে। তার পর থেকেই নাকি এপ্রিল ফুল পালন করা হয়।
জার্মান লোককথা: ১৫৩০ সালের ১ এপ্রিল, জার্মানির অগসবারগ শহরে একটি আলোচনাসভা বসার কথা ছিল। আলোচনার ফলের কথা ভেবে অনেকে বিপুল টাকা বাজি ধরেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই সভা বসেই না। বহু মানুষের টাকা গচ্চা যায়। এই বোকামি থেকেই এপ্রিল ফুলের শুরু।
ব্রিটিশরা ভারতে ১৯ শতকে এই দিনটি উদযাপন শুরু করে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব যতই যতই বাড়ছে ততই, এই সম্পর্কিত মিম মারাত্মকভাবে ভাইরাল হচ্ছে। তবে মজা করার সময় মাথায় রাখা জরুরি, আপনার কোনও কথা যেন অপর মানুষটিকে কষ্ট না দেয়। আমাদের এই মজা যেন অন্যকে কষ্ট না দেয়ে সে বিষয়েও সচতং থাকতে হবে। আননদ টুকু যেন এই মজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবেই দিনটি প্রকৃত সার্থক ভাবে রূপায়িত হবে।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।।