পূর্ব গাজীপুর ‘ মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম ‘ কমিটির পরিচালনায় ‘ মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম ‘ র ৭ ম বার্ষিক মায়ের পূজা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২০২৪ অনুষ্ঠিত হল।

0
1459

অভিজিৎ হাজরা , আমতা, হাওড়া :- ‌‌ ‌ গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভার অধীন আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত পূর্ব গাজীপুর ‘ মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম ‘ র ৭ ম বার্ষিক মায়ের পূজা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২০২৪ অনুষ্ঠিত হল পূর্ব গাজীপুর ‘ মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম ‘ কমিটির পরিচালনায়। ‌দু ‘ দিন ব্যাপী এই পূজা ও বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ডালিতে ছিল শীতলা মায়ের পূজা,কালী মায়ের পূজা। এই উপলক্ষে ছিল অঙ্কন, নৃত্য,যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা। ছিল অতিথি বরণ,স্বাগত ভাষণ,বস্ত্র বিতরণ,আতস বাজির আলোকমালা, পূজা পাঠ,হোম যজ্ঞ, দেবারতি, অন্নকূট উৎসব। স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সৃজনশীল নৃত্যানুষ্ঠান, সংগীতানুষ্ঠান,বিচিত্রানুষ্ঠান। ‌ ‘ মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম ‘ এর চর্তুসীমার মধ্যে চারিদিকে আছে ৺ নারায়ণ মন্দির,৺ শীতলা মাতার মন্দির,৺ কালী মন্দির,৺ শিব মন্দির,৺শনি মন্দির। আছে কৃষ্ণ -সারথী ,কালীয় দমন দৃশ্য। শিশুদের জন্য বিভিন্ন বিনোদন মূলক রাইড‌। ‌ দুই দিন ব্যাপী মায়ের পূজা ও বাৎসরিক অনুষ্ঠান ২০২৪ এ উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক নির্মল মাজী, সমাজসেবী বিমল দাস, তুষার কর সিনহা,স্বপন মন্ডল, দীনবন্ধু মন্ডল,গৌর মাইতি,সঞ্জীত মন্ডল প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ‌’ মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম ‘ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে আশ্রম প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক স্বপন মন্ডল বলেন, ” আমতা – বাগনান সড়ক পথের ধারে পূর্ব গাজীপুরের এই জায়গাটি জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল।মৃত মানুষের শবদাহ করার জন্য প্রয়োজন মত জায়গায় জঙ্গল কেটে শবদাহ করা হতো।এটি তখন শ্বশানে পরিণত হয়। ছোটবেলা থেকে এই দৃশ্য দেখতে দেখতে মনের মধ্যে ইচ্ছা জাগে ঐ জায়গায় কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ করার । আমি যত বড় হতে থাকি সেই বাসনা প্রকট হতে থাকে।বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একদিন গভীর রাতে একটি ব্যানারে কোন নাম না দিয়ে শুধুমাত্র ফোন নাম্বার দিয়ে ” মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম ও মন্দির নির্মাণ কল্পে মুক্ত হস্তে দান করুন ” । সেই ব্যানার টাঙ্গিয়ে দিই। সেই ব্যানার দেখে অনেক সহৃদয় ব্যক্তি ও মায়ের ভক্তবৃন্দ ফোন করে যোগাযোগ করেন।তারপর সেই সমস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একদিন সভা ডেকে আমার পরিকল্পনার কথা জানালে সকলেই রাজী হন।যে যার সাধ্যমত অর্থ সহায়তা করেন। সেই অর্থে আস্তে আস্তে জঙ্গলাকীর্ণ শ্নশান এর জায়গা পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন করে এই ৺ কালী মন্দির সহ অন্যান্য মন্দির,চিল্ডেন পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ‌আগামী দিনে পরিকল্পনা আছে অতিথি নিবাস নির্মাণ,খেলার মাঠ তৈরি, কতকগুলো প্রসাবাগার ও শৌচাগার নির্মাণ, সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ সহ অন্যান্য উন্নয়ন মূলক কাজ করার ” । ‌প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় দশ বছর বয়স পর্যন্ত ” ক ” বিভাগে ” যেটা তুমি পারো ” অংকনে পঁয়তাল্লিশ জন প্রতিযোগীর মধ্যে দেবাঘ্য দে,ইষা সামুই , কৃষ্ণেন্দু প্রধান ,সৌশ্রী ভুক্ত,সোহন পাঁজা যথাক্রমে প্রথম থেকে পঞ্চম স্থান অর্জন করে । দশ বছর একদিন থেকে চোদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত ‘খ ‘ বিভাগে ‌” ছেলে বেলার খেলা ” অংকনে আটত্রিশ জন প্রতিযোগীর মধ্যে স্নেহা পাঁজা,মোনালী পাড়ূই,শুহান অধিকারী,প্রীয়াংশু মাইতি,স্নেহা মান্না প্রথম থেকে পঞ্চম স্থান অর্জন করে।চোদ্দ বছর একদিন থেকে সর্বসাধারণ বিভাগে ” চৈত্র উৎসব” বা “বণ্যপ্রাণ সংরক্ষণ” অংকনে বারো জন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রীতম রীত,অন্ধীক্ষা করাতি,পায়েল সেনাপতি যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে। সর্বসাধারণ বিভাগে ” যেমন খুশি সাজো ” বারো জন প্রতিযোগীর মধ্যে অরিত্রিকা মেউর, অঙ্কিতা মেউর, সঞ্চিতা সাউ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে। নৃত্য প্রতিযোগিতায় নয় বছর পর্যন্ত ” ক ” বিভাগে রবীন্দ্র নৃত্য/ নজরুল নৃত্য এ পঁচিশ জন প্রতিযোগীর মধ্যে স্বর্ণালী ঘাঁটা, শোভা পাঁজা, স্মৃতি সাউ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে।নয় বছর একদিন থেকে চোদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত ” খ ” বিভাগে ” যে কোনো নজরুল নৃত্য/ ভক্তিগীতি নৃত্যে আরার্ধা কাঁড়ার,সহেলী ঘাঁটা,অনন্যা মান্না যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন।চোদ্দ বছর একদিন থেকে সর্বসাধারণ বিভাগে ” যে কোনো আধুনিক সৃজনশীল নৃত্য – এ ষোল জন প্রতিযোগীর মধ্যে স্নেহা আদক,ত্রিতাশা চক্রবর্তী,অনন্যা মান্না প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হন।এই বিভাগে স্নেহা রায় ও দিয়া সাউ এর নৃত্য ভালো হোয়ার জন্য এদের বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।সমস্ত প্রতিযোগিতা স্থানাধিকারীদের যেমন পুরষ্কৃত করা হয় এর পাশাপাশি সমস্ত প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিযোগীদের উৎসাহ পুরষ্কার প্রদান করা হয়। ‌ অন্নকূট উৎসবে পূর্ব গাজীপুর, গাজীপুর,সোনামুই, ফতেপুর,উদং,খড়দহ,গোবিন্দ্রচক,ভগবতীপুর,দেওড়া,রাণাপাড়া,আমতা সহ ষোল থেকে সতেরো টি গ্ৰামের বারো হাজার এর অধিক মানুষ অংশ নেন। সকাল দশটা থেকে আশ্রমের মূল প্রবেশ পথ সহ সড়ক পথে মানুষ অন্নকূট উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য লাইন দেন। অন্নকূট উৎসব উপলক্ষ্যে জনতার ঢল নামে।‌ ‌এলাকার অসহায় দুস্থ একশত সত্তর জন মানুষকে বস্ত্র উপহার দেন “পূর্ব গাজীপুর মা সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম কমিটি ” । ‌দুই দিন ব্যাপী সমস্ত অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবে সঞ্চালনা করেন বাচিক শিল্পী ও অভিনেতা সুশান্ত চক্রবর্তী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here