স্মরণে, বাঙালি লেখিকা ও ঔপন্যাসিক শান্তা দেবী (নাগ)। ।

0
151

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন——–

শান্তা দেবীর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে এপ্রিল বৃটিশ ভারতের কলকাতায়। পিতা প্রখ্যাত সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা মনোরমা দেবী। এঁদের আদি নিবাস ছিল বাঁকুড়ার পাঠকপাড়ায়। শান্তার প্রথম পনেরো বৎসর কাটে এলাহাবাদে। সেসময় সেখানে মেয়েদের ভালো স্কুল না থাকায় তার ও তার কনিষ্ঠা ভগিনীর লেখাপড়া শুরু হয় গৃহশিক্ষক পিতৃবন্ধু নেপালচন্দ্র ও ইন্দুভূষণ রায়ের কাছে। ব্রাহ্মসমাজ-নেতা পিতার গৃহে উদার স্বাধীনতা এবং ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকার সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক পরিবেশের মধ্যে বড়ো হয়ে ওঠেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে পিতা কলকাতায় ফিরলে তিনি কলকাতার বেথুন স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়ে বি.এ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ্মাবতী স্বর্ণপদক লাভ করেন। বাংলা, ইংরাজী, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষায় এবং অর্থনীতি ও গণিতে বিশেষ পারদর্শিনী ছিলেন।

সাহিত্যকর্ম——–

কলেজে পড়ার সময় ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে দুই বোন মিলে শ্রীশচন্দ্র বসুর Folk Tales of Hindustan গ্রন্থটি “হিন্দুস্থানী উপকথা” নামে অনুবাদ করে খ্যাতি অর্জন করেন। বইটির চিত্তাকর্ষক ছবিগুলি উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর আঁকা। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রায় দুই বছর পিতার সঙ্গে শান্তিনিকেতনে থাকার সময় তিনি নন্দলাল বসুর কাছে অঙ্কন শিক্ষা করেছেন। দেশে বিদেশে তার আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। দুই বোন মিলে সংযুক্তা দেবী নামে প্রথম উপন্যাস “উদ্যানলতা” রচনা করেন ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে। উপন্যাসটিতে কলকাতায় নারীজাগরণের প্রথম উন্মেষের ছবি পরিস্ফুট হয়েছে। এটি পরে The Garden Creeper নামে অনূদিতও হয়েছে। বিবাহের পর স্বামীর সঙ্গে বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতার বিষয় ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় লিখেছেন। যেমন ‘মহেঞ্জাদড়োর কথা’, জাপানের ডায়েরি’ প্রভৃতি। আমেরিকা প্রবাসে তিনি মিনেসোটার ম্যাকালেস্টর কলেজে বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে বক্তৃতা দেন। তিনি “প্রবাসী” র সম্পাদকীয় বিভাগে নানা দায়িত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। “ভারত-মুক্তিসাধক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও অর্ধ শতাব্দীর বাংলা” গ্রন্থটির জন্য তিনি ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণপদক লাভ করেন। তার গল্প উপন্যাসে বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবনের , বিশেষকরে নারীজীবনের অন্তরঙ্গ অভিজ্ঞতা ও আধুনিক চিন্তার ইতিহাসের উন্মেষ পর্বের নানা চিহ্ন দেখা যায়। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল –

শিশুপাঠ্য –

সাত রাজার ধন (সীতা দেবীর সাথে), হুক্কা হুয়া (১৯২০), কেমন জব্দ।

উপন্যাস —-

স্মৃতির সৌরভ (১৯১৮), জীবনদোলা (১৯৩০), অলখ ঝোরা (১৯৩৪), দুহিতা (১৯৩৪), চিরন্তনী।

গল্প ও অন্যান্য রচনা—-

ঊষসী (১৯১৮), সিঁথির সিঁদুর (১৯১৯), বধূবরণ (১৯৩১), দেওয়ালের আড়াল, পঞ্চদর্শী

ভ্রাতার মৃত্যুর পরে তার লেখা “শোক ও সান্ত্বনা” বইটি মৃত্যুচিন্তার এক অসাধারণ দলিল। “পূর্বস্মৃতি” নামে এক স্মৃতিমূলক রচনা করেছেন। তার ও সীতা দেবীর অনেক গল্প ইংরাজীতে সীতা দেবী অনুবাদ করেছেন। সেই গল্পগুলি টেলস অব বেঙ্গল নামে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

পারিবারিক জীবন——

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক কালিদাস নাগের সঙ্গে তার বিবাহ হয়।

জীবনাবসান———

সুলেখিকা শান্তা দেবী ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে মে পরলোক গমন করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here