ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে বিমল দাশগুপ্ত ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। বিমল দাশগুপ্ত ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। বিমল দাশগুপ্ত একজন ভারতীয় সশস্ত্র বিপ্লববাদী।
প্রারম্ভিক জীবন——–
তিনি বাংলাদেশের বরিশাল জেলার ঝালকাঠিতে ১৯১০ সালের ২৯ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কবিরাজ অক্ষয় কুমার দাশগুপ্ত। তাঁর বাবা মেদিনীপুরে এসে কবিরাজীর চিকিৎসার ভিত্তিতে জীবনযাপন শুরু করেন। বিমল দাশগুপ্ত ১২/১৩ বছর বয়স থেকে বিপ্লবী আন্দোলনের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণের আগে ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি মেদিনীপুর হিন্দু স্কুলের ছাত্র ছিলেন।
পেডি ও ভিলিয়ার্স হত্যা———
১৯২৮ সালে, সুভাষ চন্দ্র বসু বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তকে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের মেদিনীপুর শাখার দায়িত্ব দেন। দীনেশ গুপ্তের অক্লান্ত পরিশ্রমে মেদিনীপুর জেলার বিপ্লবী আন্দোলন অন্য মাত্রা পেল। দীনেশ গুপ্তের মন্ত্র শিষ্য হয়ে ওঠেন বিমল দাশগুপ্ত। লবণ আইনের অমান্য করার সময়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেমস পেডি, দিঘা সৈকতে সত্যাগ্রহীদের উপর নির্মমভাবে নির্যাতন করেছিলেন। প্রতিশোধ নিতে বিপ্লবীরা পেডিকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। জ্যোতিজীবন ঘোষের সঙ্গে এই দায়িত্ব পান বিমল দাশগুপ্ত। 1931 সালের 7 এপ্রিল, পেডি সাহেব মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে প্রদর্শনী দেখতে এসে পেডি সাহেব এই দুই বিপ্লবীর গুলিতে নিহত হয়।। দুজনেই পালাতে সক্ষম হয়। বিমল দাশগুপ্ত আত্মগোপনে যান এবং ঝরিয়া এলাকায় একটি কয়লা খনিতে চাকরি পান এবং পরে কলকাতার মেটিয়াবুরোজে থাকতেন, পুলিশ তার সন্ধান করতে পারেনি।
আবার বিমল দাশগুপ্তকে ক্লাইভ স্ট্রীটে ভিলিয়ার্স সাহেবের হত্যার ভার দেওয়া হয়। ২৯ জুলাই, ১৯৩১ সালে তিনি ভিলিয়ার্সকে গুলি করেন তার অফিসে ঢুকে। কিন্তু ধরা পড়ে যান পকেট থেকে সায়ানাইড বের করার আগেই।
পুলিশ অবশেষে তাকে হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে ট্র্যাক করে। কারণ বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য গার্লিককে হত্যা করেন এবং বিমল দাশগুপ্ত (বা বিমল গুপ্ত) নামে শহীদ হন যাতে পুলিশ আসল বিমল দাশগুপ্তের সন্ধান ছেড়ে দেয়। শহীদ কানাইলাল ভট্টাচার্যের আত্মত্যাগ এবং পুলিশের হাত থেকে আরেক বিপ্লবীকে বাঁচাতে নাম-পরিচয় হীন আত্মত্যাগ ইতিহাসে বিরল।। সুভাষ চন্দ্রের উদ্যোগে তিনজন ব্যারিস্টার বিপ্লবীদের পক্ষে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। জ্যোতিজীবন ঘোষকে খালাস দেওয়া হয় এবং জেরা করার সময় প্রধান সাক্ষী সুশীল দাস বলেন, ‘পেডি খুনি বিমল দাশগুপ্ত নন’। বিমল দাশগুপ্তকে বাঁচাতে মেদিনীপুরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান সুশীল দাসকে এই কথা বলার নির্দেশ দেন। তিনি পেডি হত্যা মামলা থেকে খালাস পেলেও ভিলিয়ার্স হত্যা মামলায় দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন।
১৯৩২ সালের মাঝামাঝি তাকে আন্দামান সেলুলার জেলে পাঠানো হয়। ১৯৩৬ সালে, তিনি রাজনৈতিক বন্দীর মর্যাদা দাবিতে অনশন করেন। সুভাষ চন্দ্র ও মুজাফফর আহমদের মধ্যস্থতায় অনশন প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৩৮ সালে তাকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছিল কিন্তু মুক্তি দেওয়া হয়নি। বিমল দাশগুপ্ত বাংলার বিভিন্ন কারাগারে চার বছর কারাভোগ করেন।
শেষ জীবনে তিনি ১৯৪২ সালে মুক্তিলাভ নিজ বাড়ি মেদিনীপুরেই জমিজমা দেখাশোনা করতেন। স্বাধীনতার পরে আনন্দবাজার পত্রিকার সেলস ইনস্পেকটর হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছেন।
মৃত্যু——
অগ্নিযুগের এই বিপ্লবী ৩ মার্চ ২০০০ সালে মারা যান ।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।