জৈবিক বৈচিত্র্যের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস প্রতি বছর 22শে মে পালিত হয়। আজ (বুধবার) আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস। প্রকৃতিতে, পাখি ও জন্তু থেকে শুরু করে ফুল, পাখি, মাছ ও কীটপতঙ্গ, রঙিন গাছপালা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র জীবাণু পর্যন্ত সবকিছু নিয়েই আমাদের এই রঙিন এবং সুন্দর পৃথিবী। জীববৈচিত্র্য বিষয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার জন্য এটি পালন করা হয়। এই তারিখটি ২২শে মে ১৯৯২ সালে নাইরোবিতে জৈবিক বৈচিত্র্য সংক্রান্ত সম্মেলনের সম্মত পাঠ গ্রহণের তারিখকে স্মরণ করে।
বন্যপ্রাণীর পরিবেশে দারুন প্রভাব রয়েছে। বাস্তুতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এদেরকে বাদ দিয়ে জীবণ সম্পূর্ন্য হয় না। আমরা সকলেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে একে অপরের ওপরে নির্ভরশীল। এদের ছাড়া জীবন বৃত্ত যে অসম্পূরান তা আজ আমরা ওনেকটাই উপলব্ধি করতে পারছি। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কোটি কোটি মানুষ খাদ্য, শক্তি, উপকরণ, ওষুধ, চিত্তবিনোদন, অনুপ্রেরণা এবং মানুষের কল্যাণে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বন্য প্রজাতির ব্যবহার থেকে প্রতিদিন উপকৃত হয়। ত্বরান্বিত বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য সংকট, এক মিলিয়ন প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিলুপ্তির মুখোমুখি। এর ফলে প্রকৃতি তার বৈষম্য হারিয়ে ফেলছে।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ডে (ডব্লিউডব্লিউডি) হল অনেক সুন্দর এবং বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদ উদযাপনের একটি সুযোগ এবং তাদের সংরক্ষণ মানুষের জন্য যে উপকারিতা প্রদান করে সে সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে। একই সময়ে, দিবসটি আমাদেরকে বন্যপ্রাণী অপরাধ এবং মানব-প্ররোচিত প্রজাতির হ্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইকে জোরদার করার জরুরি প্রয়োজনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যার ব্যাপক অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব রয়েছে। মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সেবার উৎস হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন জীবের জীন, প্রজাতি ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা তথা ইকোসিস্টেম সমূহের প্রকারভেদ। পৃথিবীর জৈব-বৈচিত্র্য জেনেটিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক, বিনোদনগত ও সৌন্দৰ্য্যগত বিভিন্ন দিক থেকে অতি মূল্যবান। প্রাণের ক্রম বিবর্তন এবং পৃথিবীতে জীবের বিকাশ লাভের ক্ষেত্রে জৈব-বৈচিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য, ঔষধ ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার অতি গুরুত্বপূর্ণ অথচ জীববৈচিত্রের প্রতি মানুষেরই বিরূপ কর্মকাণ্ড যেভাবে অবাধে চলছে তাতে আশংকা হচ্ছে যে, ২০২৫ সালের মধ্যে ২০-২৫% প্রাণী ও উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। তাই জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে ও যথার্থ ব্যবহারে তৎপর হওয়ার আহবানেই হচ্ছে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস পালন। বিশ শতকের ৭০-এর দশক থেকে খাদ্য-বস্ত্রসহ মানুষের নানান ধারার চাহিদার পরিসর বিস্তৃত হওয়ার কারণে লাখ লাখ প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ১৫ হাজার তথ্য সূত্র নিয়ে ৩ বছরের গবেষণা শেষে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ‘সামারি ফর দ্য পলিসিমেকার’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনের সারমর্ম। ৪০ পৃষ্ঠার সেই সংক্ষেপ হাজির করতে গিয়ে বলা হয়েছে, মানবজাতি কীভাবে নিজেদের ‘একমাত্র বাড়ি’-কে ধ্বংস করছে; এটাই তার সবচেয়ে শক্তিশালী দলিল।
প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, স্থল, জল কিংবা আকাশ; সবখানেই মানুষের কারণে বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতি। জাতিসংঘের ইন্টার গভর্নমেন্টাল সায়েন্স পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিসের ১৮০০ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে বিশ্বের ১০ লাখ প্রাণী বিলুপ্তির হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়, প্রাণী জগতের ২৫ ভাগ প্রজাতিই মানুষের কারণে বিপন্নতার মধ্যে রয়েছে।
তাই জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে ১৯৯৩ সালের শেষদিকে দিবসটি পালনের জন্য ২৯ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশ এ দিবস পালন বন্ধ করে দিলে ২০০২ সালের ২২ মে দিবসটি পুনর্নির্ধারণ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। তখন থেকে প্রতিবছর ২২ শে মে এ দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে।
মূলত ১৯৯২ সালের ২২ মে কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত জীববৈচিত্র্য বিষয়ক কনভেনশনে দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
মানুষের অপরিণামদশী কর্মকাণ্ডের ফলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য উল্লেখযোগ্য হারে অবাধে সংকুচিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাসীর উদ্বেগের প্রেক্ষিতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং তার টেকসই ও সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির উদ্যোগে ১৯৯২ সালে জীববৈচিত্র্য কনভেনশন নামে একটি আন্তর্জাতিক দলিল চূড়ান্ত করা হয়। বর্তমানে এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ১৯৫ টি।
দিন দিন রুক্ষ হচ্ছে প্রকৃতি। সময় ও সময়ের গতি ক্রমশ ভিন্ন খাতে বহিছে। আগের সেই প্রকৃতির ধারা সম ভাবে প্রবাহমান নয়। চারদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, নদীভাঙন, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, বহু বন্য প্রাণীর সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে যাওয়া—সব মিলিয়ে এবার দিবসটি বাড়তি গুরুত্ব বহন করছে। সেই শূন্যতা যাতে ভবিষ্যতে আর বৃদ্ধি না ঘটিয়ে বিপর্যয় না ডেকে আনে তার গুরুত্ব তুলে ধরতে দিনটি পালিত হচ্ছে এই লক্ষে।জীব বৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতেই জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ২২ মে দিনটি বিশ্ব জীব বৈচিত্র্য দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে।
।।তাত্থ্য ও ছবি : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।