রামমোহন রায়ের উক্তিগুলি তার চিন্তাভাবনা ও দর্শনের প্রতিফলন ঘটায়। রামমোহন রায়ের উক্তিগুলি আজও প্রাসঙ্গিক। তার উক্তিগুলি আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষের মর্যাদা ও অধিকার সর্বোচ্চ, ধর্ম ও নারী শিক্ষার গুরুত্ব এবং শিক্ষার মাধ্যমেই জাতির উন্নতি সম্ভব। তাঁর ধারণাগুলি আমাদের সমাজকে আরও সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করতে পারে। তার উল্লেখযোগ্য উক্তি ও উদ্ধৃতি গুলি হল:
(ক) ঈশ্বর মানুষকে যে বােধ (মনন) শক্তি প্রদান করেছেন, তার অভিপ্রায় হলাে এই যে, স্বজাতীয় অন্যান্য অধিকাংশ মানুষের মতাে সে পশুবৎ অনুকরণ না করে নিজের অর্জিত জ্ঞানের সহায়তায় প্রত্যেক ব্যাপারে শুভ-অশুভ বিবেচনায় নিজের বােধশক্তিকে প্রয়ােগ করবে। (বস্তুতঃ) তখনই এই ঈশ্বরদত্ত (ক্ষমতা) বােধশক্তি সার্থকতা লাভ করবে।
(খ) এক জাতীয় লােক আছে, যারা অন্যদের সমর্থন আকর্ষণ করতে আপন ইচ্ছানুযায়ী ধর্মের নাম দিয়ে মতবাদ তৈরি করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লােকের মধ্যে উত্তেজনা ও বিবাদের সৃষ্টি করে। অপরদিকে আর এক ধরনের লােক আছে যারা কোনরকম বিবেচনা না করেই পূর্বোক্ত লােকেদের আনুগত্য স্বীকার করে। তৃতীয় আর এক দল লােক আছে যারা অন্যদেরও নিজেদের দলে (জোর করে) টানতে চায়। চতুর্থ শ্রেণীতে আছেন তাঁরা যারা মহামহিম ঈশ্বরের করুণায় প্রতারক নন, প্রতারিতও নন।…সংস্কারমুক্ত ও ন্যায়সঙ্গত দৃষ্টিভঙ্গীসহ বিচার করে চলাই শ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ।
(গ) আত্মা এক। তার মায়াভাবে (বিভিন্ন দেহরূপ) প্রপঞ্চেও নানাবিধ চেতনাত্মক জীব পৃথক পৃথক রূপে আচরণ ও কর্মফলভােগ করে, পুনরায় (দেহ) প্রপঞ্চ ভঙ্গ হলে প্রতিবিম্বের ন্যায় আর ক্ষণমাত্রও পৃথকরূপে থাকে না। জীব যদিও (স্বরূপতঃ) একক আত্মা হতে ভিন্ন নয়, তথাপি জীবের ভােগে আত্মার ভােগ হয় না।
(ঘ) মিথ্যা ও প্রবঞ্চনার বেশি অধর্ম আর নেই। মিথ্যাবাদী যদি কখনো সত্যও বলে, তাহলেও কেউ তা বিশ্বাস করে না। আবার এক মিথ্যাকে বজায় রাখতে আরও মিথ্যা দিয়ে তা সাজাতে হয়। এর বেশি প্রবঞ্চনা আর কী আছে।
(ঙ) কোনাে বিষয়ের দুই দিক দেখে কদাচ বিরােধ করাে না। বাদী, প্রতিবাদী এই উভয়ের যথার্থ অভিপ্রায় না বুঝে একপক্ষের প্রশংসা ও অন্যপক্ষের নিন্দা করা মহতের কাছে কেবল হাস্যাসম্পদের লক্ষণ হয়।
(চ) এই জগতে বিদ্যমান প্রতিটি বস্তু পৃথক পৃথকভাবে কয়েকটি কারণ, পরম্পরা ও নিয়মের অনুবর্তী। এমনকি প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ সেই কারণ, পরম্পরা ও নিয়মগুলি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, প্রতিটি পদার্থের অস্তিত্ব একটি অখণ্ড পরিকল্পনায় বাঁধা।
(ছ) কৃত (লােকাচার ও দেশাচার) অনুষ্ঠানকে যদি কোনাে মানুষ পালন করে, তার (মানসিক অবস্থানের) প্রতি পণ্ডিত (জ্ঞানী)-গণ ‘গড্ডালিকা প্রবাহ’ শব্দের প্রয়ােগ করে থাকেন।….(এখন বিশেষ ভাবে) প্রয়ােজন কুসংস্কার ও গোঁড়ামিকে আক্রমণ।
।।সংগৃহীত।।