আমাদের এই মূল্যবান সুন্দর মনুষ্য জীবনে সাধারণত ১২ মাসে ১২টি পূর্ণিমা পালিত হয়। আজ 23.05.2024. বৃহস্পতিবার বুদ্ধ পূর্ণিমা। ২২ মে সন্ধ্যা ৬/৪/৩১ -এ পূর্ণিমা শুরু হবে এবং ২৩ মে সন্ধ্যা ৬/৪৮/২৮ পর্যন্ত থাকবে। পুরাণ অনুযায়ী বৈশাখ পূর্ণিমায় গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। আবার এই তিথিতেই বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করেন তিনি। গৃহত্যাগের পর রাজকুমার সিদ্ধার্থ সত্যের সন্ধানে সাত বছর পর্যন্ত বনে ঘুরতে থাকেন। কঠোর তপস্যা করেন, অবশেষে বৈশাখ পূর্ণিমার দিনে বোধগয়ায় বোধি বৃক্ষের নীচে বুদ্ধত্ব জ্ঞান লাভ করেন। জ্ঞান লাভের পর বুদ্ধ পায়েস খেয়ে নিজের ব্রতভঙ্গ করেন। তাই বুদ্ধ পূর্ণিমায় পায়েস রান্না করা হয়। বুদ্ধদেবকে পায়েসের প্রসাদ নিবেদন করা হয়। শুধু তাই নয়, বৈশাখ পূর্ণিমায় কুশীনগরে বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ হয়।
বুদ্ধ পূর্ণিমা বা বৈশাখী পূর্ণিমা হল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব। এই পুণ্যোৎসব বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। বৈশাখী পূর্ণিমা দিনটি বুদ্ধের ত্রিস্মৃতি বিজড়িত। এই পবিত্র তিথিতে বুদ্ধদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বোধি বা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন। বুদ্ধ পূর্ণিমা তিথিকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এদিন যে কোনও নতুন শুরু অত্যন্ত শুভ। এই পবিত্র দিনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীগণ স্নান করেন, শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকেন। ভক্তগণ প্রতিটি মন্দিরে বহু প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেন, ফুলের মালা দিয়ে মন্দিরগৃহ সুশোভিত করে বুদ্ধের আরাধনায় নিমগ্ন হন। এছাড়া বুদ্ধগণ এই দিনে বুদ্ধ পূজার পাশাপাশি পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা করে থাকেন।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি হিন্দুদের কাছেও এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হিন্দু ধর্ম অনুসারে শ্রী বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে গণ্য করা হয় গৌতম বুদ্ধকে। স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ ও বললেন বুদ্ধের পর হইতে সঙ্ঘ কি বস্তু তাহা মানুষ ভুলিয়া গিয়াছে। আমার সঙ্ঘ হইবে দ্বিতীয় বুদ্ধের সঙ্ঘ, আমি সমগ্র দেশ ও জাতিকে বুদ্ধ, শঙ্কর, চৈতন্যের মত নতুন আদর্শ ও তপঃশক্তিতে সঞ্জীবিত করিতে চাই। একদিন লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি তৃষিত ও যাপিত নরনারী যেমন বৌদ্ধ সঙ্ঘের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া শান্তি ও নির্বাণের অধিকারী হইয়াছিল; তেমনি এমন একদিন আসিবে যখন ভারতের তথা জগতের কোটি কোটি নরনারী এই মহাসঙ্ঘের
শরণাগত ও শরণাপন্ন হইয়া শান্তি ও মুক্তি লাভে ধন্য হইবে।
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে পবিত্র নদীতে স্নান করে বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজো করা উচিত। সন্ধ্যাবেলা চন্দ্রোদয়ের পর চাঁদকে দুধের অর্ঘ্য দিন। মনে করা হয় পূর্ণিমা তিথিতে চন্দ্রকে অর্ঘ্য দিলে মানসিক শান্তি লাভ করা যায়। সবাইকে বুদ্ধপূর্ণিমার শুভেচ্ছা।
ওঁ বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।
ওঁ সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি।
ওঁ ধর্মং শরণং গচ্ছামি।
ওঁ প্রণবং শরণং গচ্ছামি।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ।
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক) l