স্মরণে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, সাহিত্যিক এবং শ্রমিক-সংগঠক সত্যেন সেন।

0
2637

সত্যেন সেন প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, সাহিত্যিক ও শ্রমিক-সংগঠক।

সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের ২৮ মে বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলা) টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামের সেন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর ছোটবেলার ডাক নাম ছিল লস্কর।  তাঁর পিতার নাম ধরনিমোহন সেন এবং মায়ের নাম মৃণালিনী সেন। চার সন্তানের মধ্যে সত্যেন ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবী দল যুগান্তরে যোগ দেন।  ১৯৩১ সালে একজন ছাত্র হিসাবে, তিনি একটি ষড়যন্ত্রের শিকার হন এবং প্রথমবারের মতো কারাবরণ করতে বাধ্য হন।  বহরমপুর জেল ক্যাম্প থেকে তার বন্দিজীবন শুরু হয়।  এ সময় তিনি তিন মাস কারাগারে ছিলেন।  ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য তিনি দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন।  এ সময় তার ৬ বছরের জেল হয়।  ১৯৩৮ সালে সত্যেন সেন জেল থেকে মুক্তি পান। সেই বছর তাকে শান্তিনিকেতন থেকে ‘গবেষণা বৃত্তি’ দেওয়া হয়।  ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী কবি সোমেন চাঁদ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক সমাবেশে শহীদ হন।  সে সময় সত্যেন সেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।  ‘কৃষক সমিতি’র মাধ্যমে ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য।  দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় কৃষক সমিতির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।  ১৯৪৬ সালে, কমিউনিস্ট নেতা ব্রজেন দাস ঢাকা থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন।  সত্যেন সেন ব্রজেন দাসের পক্ষে প্রচারণা চালান।  তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারত সৃষ্টি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়।  ১৯৪৯ সালে, তিনি বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক গ্রেফতার হন।  আবার দীর্ঘ কারাবাস।  সে সময় কমিউনিস্টদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা ছিল অনেক বেশি।

১৯৬৯ সালে বিপ্লবী কথাশিল্পী সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লা কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ উদীচী গঠন করেন। জন্মলগ্ন থেকে উদীচী অধিকার, স্বাধীনতা ও সাম্যের সমাজ নির্মাণের সংগ্রাম করে আসছে। উদীচী ’৬৮, ’৬৯, ’৭০, ’৭১, সালে বাঙালির সার্বিক মুক্তির চেতনাকে ধারণ করে গড়ে তোলে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম। এ সংগ্রাম গ্রামবাংলার পথেঘাটে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় উদীচীর কর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী এদেশে সুস্থ সাংস্কৃতিক ধারার সংস্কৃতি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সত্যেন সেনের সৃষ্টিকর্ম ও সাহিত্য হলো সমাজ বাস্তবতার স্পষ্ট প্রকৃতি-স্বরূপের প্রতিচ্ছবি।

ছোটদের জন্য লিখিত গল্প— পাতাবাহার (১৯৬৮) অন্যতম।

উপন্যাস—–

ভোরের বিহঙ্গী (১৯৫৯), রুদ্ধদ্বার মুক্ত প্রাণ (১৯৬৩), অভিশপ্ত নগরী(১৯৬৯), পাপের সন্তান (১৯৬৯), সেয়ান (১৯৬৯), পদচিহ্ন (১৯৬৯), পুরুষমেধ(১৯৬৯), আলবেরুনী(১৯৭০), সাত নম্বর ওয়ার্ড(১৯৭০), বিদ্রোহী কৈর্বত(১৯৭০), কুমারজীব(১৯৭০), অপারেজয়(১৯৭০), মা(১৯৭০), উত্তরণ(১৯৭০), একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে (১৯৭১)।

ইতিহাস আশ্রিত গল্প-উপন্যাস-সাহিত্য——–

গ্রামবাংলার পথে পথে (১৯৬৬), আমাদের পৃথিবী (১৯৬৮), মসলার যুদ্ধ (১৯৬৯), এটোমের কথা(১৯৭০), অভিযাত্রী (১৯৭০), মানবসভ্যতার উষালগ্ন (১৯৭১), মনোরমা মাসিমা (১৯৭১), প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ (১৯৭১), বিপ্লবী রহমান মাষ্টার (১৯৭৩), সীমান্ত সূর্য আবদুল গাফফার (১৯৭২), জীববিজ্ঞানের নানা কথা (১৯৭৭) ইত্যাদি।

পুরস্কার—–

১৯৬৯ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮৬ সালে সাহিত্য মরণোত্তর একুশে পদক।

শান্তি নিকেতনের গুরুপল্লীতে ১৯৮১ সালে ৫ জানুয়ারি তিনি মারা যান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here