হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া প্রচেষ্টায় একদল নারী শক্তি।

0
2907

হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া প্রচেষ্টায় একদল নারী শক্তি। প্রকৃতপক্ষে লোক সংস্কৃতি বাঙালি সংস্কৃতির মূলধারা, এর মর্ম মূলেই আবহমান বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য- সভ্যতার প্রকৃত পরিচয়। কানু ছাড়া যেমন গীত নেই তেমনি লোকসংস্কৃতির অস্তিত্ব ভিন্ন বাঙালির জীবন- সমাজ ঐতিহ্য- ইতিহাসের মর্মদ্ধার অসাধ্য ও অর্থহীন। বাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ হল যাত্রাপালা। আমরা সকলেই অবগত আছি একটা সময় ছিল যখন গ্রামের দুর্গাপুজো, কালীপুজো, গাজন উপলক্ষে গ্রামের শিল্পীদের নিয়ে যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হতো। বর্তমানে সেই চিত্র আর দেখা যায়না বলাই চলে, লুপ্ত হতে বসেছে যাত্রা শিল্প।

তবে এখনো অনেকেই আছেন তারা যাত্রা প্রেমী মানুষজন, আর তাঁদের কথা মাথায় রেখেই লোকসংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ যাত্রাশিল্পকে আঁকড়ে ধরে লুপ্ত হতে না দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ ব্লকের পুনশুর গ্রামের বিনোদিনী নাট্য সংস্থা। গ্রামের ১৮ জন মহিলা দারা যাত্রা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিনোদিনী নাট্য সংস্থা। রীতিমতো মঞ্চ বেঁধে নিত্যদিন চলছে যাত্রার মহড়া। পুজো উপলক্ষে বিনোদিনী নাট্য সংস্থার দুটি নিবেদন, একটি হল নটী বিনোদিনী অপরটি সোনাই দীঘি। দুটি যাত্রাপালা তেই অভিনয় করছে গ্রামের ১৮ জন মহিলা। শিশু থেকে গৃহবধূ সকলেই অভিনয় করছে যাত্রা পালাতে। শুধু তাই নয়, অভিনয়ে আছে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও। পুরুষদের চরিত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটিয়ে তুলতে দিনরাত মহড়ায় অংশগ্রহণ করছে পুনশুর গ্রামের ১৮ জন মহিলা। নিজেদের গ্রাম ছেড়ে দূর-দুরান্তে গিয়ে যাত্রাপালা করে তাদের প্রতিভা সকলের সামনে মেলেও ধরেছে তারা। “আমি ভাবি একা, দাও হে দেখা, প্রানো সখা রাখো পায়ে” নটী বিনোদিনীর সেই অসাধারণ গান নিজের কন্ঠ স্বরের মাধ্যমে মহড়া মাতাচ্ছে কলেজ পড়ুয়া মহিলা।

নটী বিনোদিনী নাট্য সংস্থার এক মহিলা শিল্পী মৈত্রী ঘোষাল বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমার অভিনয় করতে ভালো লাগে। আমার বাবা ঠাকুরদাও খুব ভালো অভিনয় করত, আমি তাদের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছি। মানুষের মনের অভিব্যক্তি সমস্ত আর্টেই প্রকাশ করা যায়, কিন্তু অভিনয় এমন একটা মাধ্যম যেখানে অতি সহজেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করা সম্ভব। অভিনয়ের মাধ্যমে অচিরেই মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে পাড়া প্রতিবেশিদের কাছে কিছু কেমন কথা ও শুনতে হয়েছে, কিন্তু সেই সব কথা কর্ণপাত না করেই যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

নিজেদের গ্রামের মহিলা, নিজেদের সুর পার্টি, নিজেদের লাইট দ্বারা পরিচালিত নটী বিনোদিনী নাট্য সংস্থা। ইতিমধ্যেই শক্তিগড়, দুর্গাপুর,কোতুলপুর ইন্দাস, গুইর,সরঙ্গার যাত্রাপালা পরিবেশন করেছে আঠারো জন নারী শক্তি। পড়াশোনার ফাঁকে হারিয়ে যেতে বসে যাত্রাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে মহুয়া ঘোষাল, মৈত্রী ঘোষাল, তিতলি চট্টোপাধ্যায়, স্নেহা ব্যানার্জি, প্রিয়া দাস,মধুমিতা দাস সহ বাকি সকলে।

সর্বযুগে তথা সর্বকালে এবং  পৌরাণিক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার হিসাবে মানুষের মনে  নারীশক্তি একটি স্থায়ী  স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে ।রূপ ,গুণ , কর্মদক্ষতা ও সহনশীলতায় সবেতেই অদ্বিতীয়া নারী  হল সকল শক্তির আধার ; মানবজাতির স্রষ্টা। কথায় আছে, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। ঘরে -বাইরে সব জায়গায় একাহাতেই নারী  সুষ্ঠুভাবে সামলাতে পারে কারও সাহায্য না নিয়েই। আধুনিক সমাজে নারী আজ আর পিছিয়ে নেই। শিক্ষা, কর্তৃত্বে ,গুণে, মানে সব ক্ষেত্রেই পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে মহুয়া, মৈত্রী, স্নেহারা যাত্রা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পুরুষদের চরিত্রে ধারালো অভিনয় করে আজ প্রমাণ করে দিয়েছে যে তারাও কোনো অংশে কম নয়।

।।কলমে : রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী,  পূর্ব বর্ধমান।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here