বিজেপির মহিলা মোর্চার কর্মীকে নগ্ন করে মারধরের অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।

কোচবিহার, নিজস্ব সংবাদদাতা ২৭ জুনঃ রুইডাঙ্গায় বিজেপির মহিলা মোর্চার কর্মীকে নগ্ন করে মারধরের অভিযোগ স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের মাথাভাঙা ২ নম্বর ব্লকের রামঠেঙা বাজার সংলগ্ন এলাকায়। ওই ঘটনায় ঘোকসাডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের লোকজন। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গিয়েছে।
অভিযোগ, ২৫ জুন ওই মহিলা যখন মাঠে কাজ করতে যাচ্ছিলেন সেই সময় তাঁকে আটক করে কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূলের কর্মীরা। পরে তাকে টানতে টানতে ওই মহিলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে জলে চুবিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। পরে প্রায় এক ঘণ্টা অজ্ঞান থাকার পর তাকে প্রথমে ঘোকষডাঙ্গা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরবর্তীতে কোচবিহার মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কোচবিহার মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ওই ঘটনার পর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিন এবিষয়ে নির্যাতিতা বিজেপির মহিলা মোর্চার কর্মী বলেন, বাড়ির পাশে নদীর পাড়ে গরু বাধার জন্য গিয়েছিলাম। যখন ফিরে আসছিলাম সেই সময় একজন মহিলা হাতে কাঁচি নিয়ে আমার দিকে আসছিল। আমি ভাবলাম ঘাস কাটতে যাচ্ছে। সেই সময় ওই মহিলা সাথে থাকা অন্যান্য মহিলাদের আসতে বলে এবং তারা আমাকে ধরে ফেলে। এরপর আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকে জলে চুবাচ্ছিল এবং আমার সমস্ত কাপড় খুলে উলঙ্গ করে দেয়। এবং আমার মাথার সব চুল ছিঁড়ে নেয়। আমি বিজেপি করি আর ওরা টিএমসি করে এই জন্যই আমার এই অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, যারা আমাকে মারধর করছিল তারা বলেছে মুসলিম হয়ে কেন বিজেপি করেন। মুসলিম পাড়ায় থেকে বিজেপি করেন আজকে জলে চুবিয়ে মেরে ফেলবো। এরপর পুরুষদের দেখিয়ে বলে ওকে ধর্ষণ কর। এরপর যখন আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর আমি জানি না তারপর হয়তোবা আমার বাড়িতে আমাকে ফেলে রেখেছিল উলঙ্গ অবস্থায়। পরে পুলিশ গিয়ে ছবি তুলে তারপর ঘোকসাডাঙ্গা হাসপাতাল ও পরে কোচবিহারে রেফার করে।
তিনি আরও বলেন এলাকার তৃণমূলের লোকজন তাকে প্রতিদিন হুমকি দেয়। তারা হুমকি দেয় বিজেপি করে ঘর থেকে বের হোক দুনিয়া থেকে গায়েব করে দেব তাহলে বিজেপি ধ্বংস হয়ে যাবে। গত চার তারিখ থেকে ঘর থেকে বের হই না গতকালই বের হয়েছিলাম। আমার স্বামী বাইরে গেছে আমার ছেলে কেরলে গেছে। আমার একটা আট বছরের বাচ্চা রয়েছে, বাড়িতে আছে সেই স্কুল পর্যন্ত যেতে পারে না। যারা আমার সাথে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আমি ফাঁসি চাই।
এদিন এবিষয়ে নির্যাতিতার বাবা বজলে রহমান বলেন, আমার মেয়ে মহিলা মোর্চার সদস্যা। কোচবিহারের বিজেপির সাংসদ হেরে যাওয়ার পর থেকেই বাড়ি থেকে বের হতে দেয় না। পাট ক্ষেত থেকে ফেরার সময় কয়েকজন দাঁড়িয়েছিল। তারাই চুলের মুঠি ধরে ছ্যাচরাতে ছ্যাচরাতে নিয়ে আসে এবং কাপড়-চোপড় খুলে জলে চুবিয়ে মারধোর করেন। আমরা বিজেপি করি জন্যই এই ঘটনা। তিনি আরও বলেন, আমাকেও বাড়ি ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি দেয়। বাড়ি থেকে বের হতে দেবে না।
এবিষয়ে কোচবিহার জেলা বিজেপির সহ সভাপতি দীপা চক্রবর্তী জানান, গত পরশুদিন রুইডাঙ্গা গ্রামের এক বিজেপি মহিলার বিবস্ত্র করে মারধোর করেন। সেই সময় গুটিকয়েক মহিলা ছিল। বাকি সবাই ছিল পুরুষ মানুষ। ওই মহিলার পরিবারের পক্ষ থেকে লোকজন থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও পুলিশ নির্দোষ লোকজন গ্রেপ্তার করছে, যারা প্রকৃত দোষী তাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। আমি কোচবিহার জেলার মানুষের কাছে আবেদন আপনার এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন। নয়তো আরও কত কি দেখতে হবে কোচবিহার জেলাতে। এটা শুধু কোচবিহারে নয়, গোটা রাজ্য জুড়ে একই অবস্থা করে রেখেছে মমতাময়ী সরকার।
যদিও এই প্রসঙ্গে কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান গিরীন্দ্রনাথ বর্মন জানান, দল এসব পাশবিক ঘটনা সমর্থন করে না। তবে এটাও ঠিক বিজেপি কোচবিহার জেলায় পরাজিত হওয়ার পর খবরের কাগজে আসার জন্য তারা নাটক করেন। সেটাও আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। কোন মহিলা বিজেপি করতে পারে, তার উপর পাশবিক অত্যাচার তৃণমূল দল সমর্থন করে না বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *