আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস এলাকায় সহেলা স্থানীয় ভাষায় ‘সয়লা’ উৎসবের প্রচলন হয় আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে। জানা যায় তৎকালীন সময়ে এলাকায় বর্ণভেদ প্রথা খুব প্রচলন ছিল। এই প্রথা কে কেন্দ্র করে এলাকায় অশান্তিও ছড়াত। তৎকালীন বর্ধমানের রাজার এক সজ্জন নায়েব এলাকায় খাজনা আদায় করতে এসে তা দেখে খুবই ব্যথিত হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি এলাকায় বিভিন্ন পুজোয় সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ করার বিষয়ে উদ্যোগ নেন। সেই থেকে বর্ধমান সীমানায় বাঁকুড়ার ইন্দাস এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সর্বধর্মের মিলন মেলা আরম্ভ হয়। যার নাম হয় ‘সয়লা’। তবে এই উৎসব স্থান ভেদে ৪,৫,৭, ৯ ও ১২বছর অন্তর হয়। এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘ অপেক্ষার পর ওই মেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন।
একইভাবে মঙ্গলবার ইন্দাস ব্লকের আকুই গ্রামে পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে এই দিনেই ‘সয়লা’র মেলা বসেছিল। মঙ্গলবার তা পুনরায় ওই উৎসব শুরু হয়। পাঁচ বছর বাদে বন্ধুত্বের মিলন উৎসব ‘সয়লা’য় মাতলেন এলাকার বাসিন্দারা। পছন্দের সই বেছে নেওয়ার অভিনব এই উৎসব উপলক্ষে আকুই হাইস্কুল প্রাঙ্গনে এদিন দুপুর থেকেই হাজার হাজার নারী ও পুরুষ জড়ো হন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিলনের এই মেলায় অধিকাংশই তাঁদের পছন্দের বন্ধুকে মাল্যদান, কপালে সিঁদুর, চন্দনের টিপ, বরণডালা দিয়ে বরণ করে নেন। তবে এই উৎসবে পুরুষরা পুরুষকে এবং মহিলারা মহিলাদেরকেই বন্ধু হিসাবে বরণ করেন। এবং বালক বালিকা থেকে শুরু করে প্রবীনরাও উৎসবে সামিল হন। প্রত্যেকেই বরণের পর আলিঙ্গনবদ্ধ হয়ে বন্ধুত্বকে স্বীকার করেন। সম্প্রীতির ওই উৎসবে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।
সয়লার প্রস্তুতি শুরু হয় একমাস আগে থেকেই। প্রথা অনুযায়ী গ্রামের সমস্ত দেবদেবীদের মন্দিরে গিয়ে পান, সুপারি ও গোটা হলুদ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিমন্ত্রণ করা হয়। স্থানীয় ভাষায় ওই লোকাচারকে ‘গোয়া চালানো’ বলে।