আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ হাইপ্রোফাইল ইন্টারনেট যুগেও বিভিন্ন দেব-দেবীকে ঘিরে উৎসবের রীতিনীতি যে এখনো অটুট আছে এই বাংলা তথা দেশের তারই এক উজ্জ্বল নিদর্শন রাখল বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের ঠাকুরাণী, পুষ্করিণী, বড় গোবিন্দপুর, শিমুলিয়া ও দশরথবাটি এলাকার মানুষজন।
শতাব্দী প্রাচীন মনসা পূজাকে ঘিরে সয়লা,, উপস্থিত প্রতিটি মহিলাদের হাতে ঝাঁপি বা ডালি যাতে আছে পঞ্চশস্য, সিঁদুর, খই- দই- মিষ্টি, বাতাসা, পান, মালা। উৎসবে উপস্থিত মহিলারা একে অপরের কপালে হলুদের ফোটা, মাথায় সিঁদুরের টিপ, গলায় মালা ও মাথার উপরে খই ছড়িয়ে, মাথায় ঝাঁপি ঠেকিয়ে সমবেত মহিলাদের তিনবার একসঙ্গে উচ্চারণ উপরে খই নিচে দই তুমি আমার জন্মের সই। পুরুষ মানুষরা একে অপরের গলায় সোলার মালা পরিয়ে কোলাকুলি তারপর মিষ্টিমুখ, তৈরি হয় এক নতুন বন্ধন, স্যাঙ্গাত।
এভাবেই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন সম্পর্কের যা এক মানববন্ধন হিসাবও গণ্য করা যেতে পারে।
উল্লেখিত চার পাঁচটি গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন উৎসব, পৌরাণিক মতে মহাদেব কন্যা মনসার বিশেষ রীতিনীতি অনুযায়ী পূজো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভক্তকুল মা মনসা কে সাক্ষী রেখে আমৃত্যু বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকেই সহেলা বা সয়লা বলে। এই উৎসবকে ঘিরে পুষ্করিণী, ঠাকুরাণী, বড় গোবিন্দপুর শিমুলিয়া দশরথবাটীর বাড়িতে বাড়িতে রীতিমতো প্যান্ডেল বেঁধে উৎসব পালনের আয়োজন বাইরে থেকে হঠাৎ করে কেউ এসে বুঝে উঠতে পারবে না উল্লেখিত এলাকাগুলিতে কোন পুজো বাড়ি হচ্ছে না বিয়ে বাড়ি!
জমজমাট আয়োজন, প্রাণ খোলা আনন্দ, একে অপরে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ , সব নিয়ে উল্লেখিত গ্রামগুলির আকাশে বাতাসে খুশির ঝিলিক।
উৎসবের শুরুর মুহূর্তে গ্রামের কয়েকজন যুবক মনসা মন্দিরের সামনে একটি বটগাছ রোপন করে যা উৎসবের চেহারাতে অন্য মাত্রা এনে দেয়।