“জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” – বালুরঘাটের তানিয়া পঞ্চানন এর মানবিক উদ্যগ।

0
56

নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট:- “জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” আর্থিক সচ্ছলতার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে টানা সাত বছরের অধিক ধরে পথপশুদের দুবেলা খাবার দানে ব্রতী হয়ে রয়েছেন বালুরঘাটের তানিয়া পঞ্চানন। উল্লেখ্য মহামারী করোনা সময়কালের আগে থেকে তানিয়া পঞ্চানন এই কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছেন। করোনার জেরে শুধু মানুষ নয়, পশুরাও চরম বিপাকে পড়েছিল। লকডাউন চলাকালীন বিভিন্ন দোকান বন্ধ থাকায় তাদের ক্ষুধা নিবারণ প্রশ্নচিহ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছিল। সেই সময়ের আগে থেকে শুরু করে টানা সাত বছর ঘুরে গেলেও পথপশুদের খাবার দিয়ে চলেছেন বালুরঘাটের সাহেব কাছারি এলাকার যুবতি তানিয়া পঞ্চানন। প্রতিদিন নিয়ম করে দিনে দুবার সাইকেলের দু’দিকে পশুদের জন্য খাবার বিলি করছে সে শহর জুড়ে। এই খাবার তার মা বাড়িতেই রান্না করে দিচ্ছে। প্রতিদিন দশ কেজির উপরে চালের ভাত রান্না করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ থেকে ৬০ টি রুটি সঙ্গে বিস্কুটের প্যাকেট থাকে। এমনকি অসুস্থ পথকুকুরদের চিকিৎসার জন্য ওষুধপত্রও সে সঙ্গে রাখে। ইতিমধ্যেই তার এই প্রচেষ্টা শহরবাসীর নজর কেড়েছে। পশুসেবায় নিয়োজিত তার এই কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন শহরের সব শ্রেণীর মানুষ।

পথপশুদের খাবার দানের বিষয়ে পশুপ্রেমী তানিয়া পঞ্চানন জানান, আমি বিগত সাত বছরের বেশি সময় ধরে পশুদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। একপ্রকার প্রচারে আলোতে না এসেই কাজ করতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করি। প্রথম অবস্থায় শহরের ২০ থেকে ২৫ টি কুকুরের চিকিৎসা থেকে শুরু করে সেবা-শুশ্রূষার দায়িত্ব নিয়ে ছিলাম। আমি হোমিওপ্যাথি পড়াশোনা করে কুকুরদের আজও সেবা করছি এবং তার ভালো সুফলও মিলছে। লকডাউনের মধ্যে কুকুরদের দুর্দশা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। দোকানপাট বন্ধ থাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পাচ্ছিল না তারা। তাই লকডাউনের শুরু থেকেই শেষ পর্যন্ত আমি বাড়িতে খাবার রান্না করে সকাল-সন্ধে পশুদের খাওয়াতে বের হয়েছি। লকডাউন শেষ হওয়ার পরেও আজ পর্যন্ত এক নাগাড়ে তাদের খাবার দিয়ে চলেছি। কোনদিন ভাত, খিচুড়ি ও কোনোদিন মাছ বা মাংসও থাকে। পথপশুদের পাশাপাশি যদি কোন বুভুক্ষ মানুষ নজরে পড়ে, তাদের আহারের ব্যবস্থা করি। লকডাউনের প্রথম দিকে শহরের কিছু পশুপ্রেমী কয়েকদিন খাবার দিয়েই সেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু আমি শহরবাসীর কাছে গিয়ে পশুদের খাবারের জন্য অর্থদানের আবেদন জানিয়ে আসছিলাম এবং অনেক জায়গা থেকে সাড়া মিলেছিল। অসুস্থ কুকুরদের চিকিৎসার জন্য বিস্কুটের সঙ্গে উপযুক্ত ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ায় এবং অনেক কুকুর বর্তমানে সুস্থ হয়ে উঠেছে। তবে বৃষ্টিতে ভিজে বিভিন্ন লোকের কাছে গিয়ে অর্থ সাহায্যের জন্য গিয়ে নিজে অসুস্থ হয়ে যেতে পারি ভেবেও কাজ থামাইনি। কোনদিন এমন দেখা গিয়েছে সারাদিন ঘুরেও মাত্র ৫০ টাকা জোগাড় হয়েছে। সেই দিয়ে পশুদের খাওয়ানো খুব সমস্যা হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, অবলা পথপশুদের খাওয়াতে গিয়েও নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু সেসব সামলে আজও আমি এই কাজ করে চলেছি। এককথায় প্রচুর লড়াই করেই এই পথপশুদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়া থেকে আজ পর্যন্ত একদিনও তাদের খাওয়ানো আমার বাদ যায়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here