মূল্যবান মনুষ্য জীবনে ছটপূজা : স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)।

0
17

আমাদের মূল্যবান মনুষ্য জীবনে *ছট পুজো* এমনই এক পার্বণ‚ যেখানে‚ যে দেবতাকে পুজো করা হয়‚ তাঁর উল্লেখ উৎসবের নামে সাধারণত করা হয় না। এই পুজো আসলে সূর্যদেব এবং তাঁর স্ত্রীর পূজা তবে তার নাম কেন হল ছট? আসলে ছট শব্দটা প্রাকৃত এসেছে সংস্কৃতের ষষ্ঠ শব্দ থেকে। দীপাবলীর ঠিক ৬ দিন পরে কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে পুজো করা হয় সূর্যদেবকে তাই এর নাম ছট পুজো। সূর্যের সাথে এই ছট পূজার সময় যে দেবীকে পূজা করা হয় তাকে ছঠি মাইয়া বলা হয়। ছাঠি মাইয়া বেদে উষা নামেও পরিচিত এবং তিনি সূর্য দেবতা সূর্যের প্রিয় কনিষ্ঠ স্ত্রী বলে মনে করা হয়। মিথিলাঞ্চল অঞ্চলে তাকে “রানা মাই” নামেও পূজা করা হয়। সূর্য্যোপাসনার এই অনুপম লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে এই পার্বণ প্রবাসী ভারতীয়দের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত হয়েছে। ভারতের বিহার‚ ঝাড়খণ্ড এবং পড়শি দেশ নেপালের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল ছট।

বিশ্বাস করা হয়‚ বৈদিক যুগের আগে থেকেই ছট পুজো বা সূর্য উপাসনার চল ছিল, মহাভারতে পঞ্চ পাণ্ডব এবং দ্রৌপদী পালন করেছিলেন এই উৎসব। রামায়ণেও আছে রাম সীতার ছট পুজোর কথা। অর্ঘ্য অর্পণ করে কৃতজ্ঞতা জানানো হয় সূর্যদেব এবং তাঁর স্ত্রীকে(ছটী মাঈ)। রামের কুলদেবতা সূর্য্যের জন্য রাম এবং সীতা এই পূজা করেছিলেন। মহাভারতে উল্লেখ থাকা মতে, দ্রৌপদী ধম্য ঋষির উপদেশ মতে সূর্য্যকে আরাধনা করে অক্ষয় পাত্র লাভ করেছিলেন। সঙ্গে মহাবীর কর্ণের কোমর পর্যন্ত জলে নেমে সূর্য্যের উপাসনা করা উল্লেখ আছে। আজও ছট পূজা উদ্‌যাপন করা সকল মানুষকে কোমর পর্যন্ত জলে নেমে সূর্য বন্দনা করতে দেখা যায়। অন্য এক আখ্যান মতে, পাণ্ডু ঋষি হত্যার পাপের প্রায়শ্চিত্তের কারণে পত্নী কুন্তীর সঙ্গে বনে থাকায় পুত্র প্রাপ্তির জন্য সরস্বতী নদীর পারে সূর্য্য উপাসনা এবং ব্রত করেছিলেন।

পুরাণ মতে, প্রথম মনু প্রিয়বতের কোনো সন্তান ছিল না। তাই তার পিতা কাশ্যপ মুনি পুত্রেষ্ঠী যজ্ঞ করতে পরামর্শ দেন। এর ফলে তার পত্নী মালিনী একটি মৃত পুত্র জন্ম দিলেন। মৃত শিশু দেখে তারাও বিলাপ করতে থাকায় আকাশ থেকে এক দিব্য কন্যা প্রকট হলেন। তিনি নিজকে ব্রহ্মার মানস পুত্রী বলে পরিচয় দিলেন এবং মৃত পুত্রকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে সে জীবিত হয়ে উঠল। এখনও ঊষা দেবী বা ছটি মায়ের মূর্তি কোলে কিছু থাকা অবস্থায় কল্পনা করা হয় এবং পুত্র প্রাপ্তির জন্য ব্রত উপাসনা করা হয়।

দীপাবলির চারদিন পর শুরু হয় মূল ছট পুজোর প্রাক পার্বণ। যাঁরা ব্রত রাখেন তাঁরা এদিন নদীতে অবগাহন (মূলত ভারতের গঙ্গা এবং নেপালের কোশী) করেন। তারপর শুদ্ধ ঘিয়ে রান্না করেন খিচুড়ি আর কুমড়ো সেটাই এদিনের খাবার। এর পরের দিন খেতে হয় ক্ষীর আর চাপাটি। সারাদিন উপবাসের পরে রাতে খেতে হয় সেটি। এ বার শুরু দীর্ঘ উপবাস। তৃতীয় দিন অর্থাৎ দীপাবলীর পর থেকে ষষ্ঠ দিন হল উৎসবের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। ছট ব্রতীরা উপবাসে থেকে নদীতে দাঁড়িয়ে সূর্যদেবতার উদ্দেশে ফল এবং অন্যান্য অর্ঘ্য উৎসর্গ করেন। প্রণাম করা হয় উদয়গামী আর অস্তগামী সূর্যদেব ও তাঁর স্ত্রীকে। চতুর্থ দিন একইভাবে অর্ঘ্য উৎসর্গ করার পরেই ব্রতীরা ভঙ্গ করেন উপবাস। ছট ব্রতীদের বিশ্বাস‚ ছটপুজোয় সব মনোকামনা পূর্ণ করেন সূর্যদেব। এমনকী‚ কুষ্ঠরোগীও নাকি সুস্থ হয়ে যায়। সংসারের মঙ্গলকামনায় গৃহিণীরাই এই পুজো করে থাকেন। কলা-সহ বিভিন্ন ফল‚ ঠেকুয়া‚ ক্ষীর আর মিষ্টি হল পুজোর প্রসাদ। চলতি বছরে এই ছটপুজোর তিথি পড়েছে ৭ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর পালিত হবে ছট পুজো।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্. ।
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here