নিজস্ব সংবাদদাতা, গঙ্গারামপুর: প্রতিবারের মতো এবারেও জিন্দাপীর সৈয়দ করম আলী শাহ টাটশাহী ফকিরের ওরস উৎসব অনুষ্ঠিত হল গঙ্গারামপুরের ধলদীঘিতে। ওরস উৎসব উপলক্ষে মাজারে সিন্নি চড়ালেন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। পীরের মাজারে মুসলিমরা পড়লেন নামাজ আর মাজারের পাশে হরিনাম সংকীর্তনে মাতেন হিন্দুরা। শনিবার এমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির দেখা মিলল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরের ধলদীঘিতে।
প্রসঙ্গত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মাজার গুলির মধ্যে অন্যতম ঐতিহাসিক গঙ্গারামপুরের ধলদিঘি জিন্দাপির সৈয়দ করম আলি শাহ টাটশাহি ফকিরের মাজার। এই মাজার কে ঘিরে রয়েছে বহু জানা অজানা ইতিহাস। কথিত আছে,সৈয়দ করম আলী শাহ টাটশাহী ফকির ছিলেন একজন ইসলামিক ধর্ম প্রচারক। বখতিয়ার খিলজি কর্তৃক দখলকৃত দেবীকোট বৌদ্ধ বিহারে আস্তনা গাড়েন তিনি। তাঁর প্রভাবে স্থানীয় মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি জিন্দাপীর নামে মর্যাদা পান। সৈয়দ করম আলি শাহ টাটশাহি ফকির বিয়ে করেছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের পদ্মমণি ঠাকুরানী দেবীকে। শোনা যায়,সারা বছর আস্তানা থেকে বের হতেন না টাটশাহি ফকির। ২৫শে মাঘ ভোরে তিনি আস্তানা থেকে বেরিয়ে ধলদিঘিতে স্নান করতেন। স্নান শেষে চটের জামাকাপড় পরে আবার এক বছরের জন্য আস্তানায় প্রবেশ করতেন। তিনি দেহ রাখার পর ধলদিঘির পারে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। যেহেতু ২৫শে মাঘ তিনি আস্তানা থেকে বেরিয়ে স্নান সারতেন,তাই প্রতিবছর এই দিনটিতে ওরস উৎসব পালন করা হয়। সৈয়দ করম আলি শাহ টাটশাহি ফকিরের স্ত্রী পদ্মমণি ঠাকুরানী দেহ রাখলে মাজারের পাশেই তাঁর সমাধি করা হয়। তাই প্রতিবছর ২৫শে মাঘ একই দিনে হরিনাম সংকীর্তনে মাতেন হিন্দুরাও। প্রতিবছর উরস উৎসবে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ মাজারে পোলাও,মুড়কি,বাতাসা নিবেদন করেন। প্রতিবারের ন্যায় এবারেও অনুষ্ঠিত হলো উরস উৎসব। এদিন উরস উৎসব উপলক্ষ্যে প্রচুর ভক্তদের ঢল নামে ধলদীঘি এলাকায়।ওরস উৎসব উপলক্ষ্যে এলাকায় বসেছে বিশাল মেলা।যা চলবে আগামী ১০দিন পর্যন্ত। মেলাতে বসেছে খাবারের দোকান থেকে শুরু করে রকমারি জিনিসের দোকান।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির দেখা মিলল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরের ধলদীঘিতে।

Leave a Reply