চলতি মাসের শেষেই নাসিকে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের তাইকোন্ড চ্যাম্পিয়নশিপে খেলবে বালুরঘাটের তরুণ প্রিয়াংশু মন্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা, , বালুরঘাট, ২৩ ফেব্রুয়ারি: এ যেন স্বপ্নপূরণ! নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায় থাকলে আর্থিক অনটন যে অন্তরায় হতে পারে না তার উদাহরণ সৃষ্টি করল বালুরঘাটের খেলোয়াড় প্রিয়াংশু। সুদূর মহারাষ্ট্রে পাড়ি দিতে চলেছে ওই টোটো চালকের ছেলে। চলতি মাসের শেষেই নাসিকে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের তাইকোন্ড চ্যাম্পিয়নশিপে খেলবে বালুরঘাটের তরুণ প্রিয়াংশু মন্ডল। গত বছর রাজ্য তাইকণ্ড চ্যাম্পিয়নশিপে সফলতার পরেই তার এই সুযোগ লাভ।

ছোট থেকেই খেলাধুলার প্রতি গভীর আগ্রহ প্রিয়াংশুর। কিন্তু অর্থাভাবে ছোটবেলায় কোচিং নেওয়া সম্ভব হয়নি। মাত্র সাত বছর আগে থেকে তাইকোন্ড খেলার প্রথাগত কোচিং শুরু করেছে প্রিয়াংশু। আর তাতেই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তাইকোন্ডো খেলার কিরোগী ফাইট বিভাগে খেলতে চলেছে প্রিয়াংশু। যেখানে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের খেলোয়াড়রা অংশ নেবে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা থেকে একমাত্র প্রিয়াংশু এই সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ কলেজে ভূগোল বিষয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করছে সে। কলকাতায় থাকলে একাই তাইকোন্ডোর অনুশীলন করে। বালুরঘাটে যখন আসে, তখন কোচের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে। তার বাবা প্রণব মন্ডল টোটো চালান। পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলেকে তাইকন্ড শেখাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তাকে। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে ছেলেকে তার স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার যোগ্য সহযোগী হিসেবে প্রিয়াংশুর মা পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আশা কর্মী হিসেবে নিযুক্ত। কিন্তু বাইরে খেলতে গেলে যাতায়াতের খরচ শুনে আক্ষেপ প্রকাশ করছেন তারা। গত বছর প্রথম সে রাজ্য প্রতিযোগিতায় খেলেছিল। আর তাতেই সে জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগ পেয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের নাসিকের ডিভিশনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে তৃতীয় সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজিত হবে। যেখানে সিনিয়র কিরোগী মেন অনূর্ধ্ব ৫৪ কেজিতে অংশ নিতে চলেছে প্রিয়াংশু।

প্রিয়াংশু জানান, ‘রাজ্য স্তরে নির্বাচিত হয়ে জেলা থেকে একমাত্র আমি জাতীয় পর্যায়ে যাচ্ছি। উত্তমাশা এলাকার মাঠে মৌলি ম্যাম ও তনু স্যারের কাছে কোচিং নিই। বাড়িতে মা বাবা আমাকে পূর্ণ সমর্থন করেন। খেলার সরঞ্জাম ও যাতায়াতে অনেক খরচ লাগে। পরিবারের পক্ষে তা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। ভবিষ্যতে তাইকোন্ডো নিয়ে এগোতে চাই। জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত হলে এশিয়ান গেমসে সুযোগ হবে। বর্তমানে অনুশীলনে পরিশ্রম অনেকটা বাড়িয়েছি।’

তার মা লিপি মন্ডল জানান, ‘খেলাধুলার প্রতি আমার আগ্রহ আছে। তাই ওকে ছোটতেই সাঁতার ও তাইকোন্ডতে ভর্তি করিয়েছিলাম। পরে তাইকোন্ডতে তার আগ্রহ থেকে সে উঠে এসেছে। অভাবের মধ্যে টাকা জোগাড় করে তাকে খেলাতে হয়। আর্থিক সহায়তা পেলে তার খেলার আরও উন্নতি সম্ভব।’

তাইকোন্ডো কোচ তনু দাস বলেন, ‘নর্থ বেঙ্গল স্বামী বিবেকানন্দ তাইকোন্ড অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে প্রিয়াংশু রাজ্যে খেলেছিল। সেখান থেকেই সে সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সুযোগ পেয়েছে। যা জেলার ক্ষেত্রে গর্বের বিষয়। ওর কঠোর পরিশ্রমের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *