নিজস্ব সংবাদদাতা, দক্ষিন দিনাজপুর, বালুরঘাট, ১২ মার্চ: দূরপাল্লার ট্রেন যাত্রায় অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে সিট পাইয়ে দেওয়া, মোবাইলে লুডু খেলা, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে সখ্যতা। তারপরেই আবেদন,’ আমার মোবাইল হারিয়ে গিয়েছে, বাড়িতে ফোন করার জন্য আপনার মোবাইলটা দেবেন?’ মোবাইল অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে তুলে দিতেই ঘটে বিপত্তি। কয়েক ধাপে দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৭ হাজার টাকা খোয়া গেল বালুরঘাটের এক পরিযায়ী শ্রমিকের। এমনকি তার মোবাইলের সিম খুলে নিয়ে ফোনের পাসওয়ার্ড বদলে দিয়েছে দুষ্কৃতী। সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে বুধবার বিকেলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হলেন সুকুমার হালদার নামের ওই প্রতারিত।
দিল্লির গুড়গাঁওতে একটি কল সেন্টারে সাফাইয়ের কাজ করেন পরানপুর এলাকার বাসিন্দা সুকুমার। দিল্লিতেই কাজ করেন তার শ্যালক। গত সোমবার রাতে তারা দুজন ফারাক্কা এক্সপ্রেস ধরে বালুরঘাটে ফিরছিলেন। সেদিনই তার একাউন্টে কোম্পানির তরফে বেতন বাবদ ১৫ হাজার ঢুকেছিল। প্রতি মাসের বেতন তার সেই মাসেই খরচ হয়ে যায়। যা নিয়েই তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। মাঝপথে তার কামরায় এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি ওঠেন। যিনি তার বাড়ি কালিয়াচক বলেন। ট্রেনের সিট পেতে সমস্যা হচ্ছিল সুকুমারের। তিনি তাকে সিট করে দিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে একাধিক গল্প শুরু করেন। তার সঙ্গে ট্রেনে খাওয়া দাওয়া চলে বিস্তর। সময় কাটাতে লুডো খেলার প্রস্তাব আসে অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছ থেকে। কিন্তু সেই অ্যাপ না থাকায় তিনি ওই ব্যক্তির হাতে মোবাইল তুলে দেন। তিনজনে মিলে লুডু খেলাও চলল ট্রেনের কামরায়। মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে ফোন করার নাম করে সুকুমারের কাছ থেকে মোবাইল নেন ওই প্রতারক। তার মোবাইলে ফোনপে অ্যাপে একটি সামান্য টাকা থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করা ছিল। সেখান থেকে প্রায় দুই হাজার টাকা নিয়ে নেয় দুষ্কৃতী। পরে সেই অ্যাপে তার আরও দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক লিঙ্ক করে নেয় প্রতারক। যেখানে একটি ব্যাংক থেকে তিন ধাপে ৫০০০ টাকা করে মোট ১৫ হাজার টাকা ও আরেকটি ব্যাংক থেকে তিন ধাপে ১২০০০ হাজার টাকা লোপাট করে ওই দুষ্কৃতি। বিষয়টি তখনও বুঝতে পারেননি সুকুমার। মালদা স্টেশনে ট্রেন থেকে প্রতারক নামার পরেই মোবাইল হাতে নিয়ে দেখেন তার ফোনের পাসওয়ার্ড কাজ করছে না। এমনকি নেটওয়ার্ক নেই। পরে দেখেন মোবাইলের সিমও খুলে নিয়ে গিয়েছে ওই দুষ্কৃতী। পাশাপাশি, তার শ্যালকের মোবাইল থেকেও কয়েক হাজার টাকা গায়েব করা হয়েছে। অবশেষে প্রতারিত ব্যক্তি এদিন সাইবার থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন।
সাইবার প্রতারণার শিকার সুকুমার হালদার বলেন, ‘বাড়ি থেকে অনেক দূরে দিল্লিতে সাফাইয়ের কাজ করি। সামান্য বেতন আমার।ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি আমার সিট কনফার্ম না হওয়ায় তার সিটে জায়গা দেন। ট্রেনে যা উঠছিল তাই তিনি খাওয়াচ্ছিলেন, সবাই মিলে লুডো খেলেছি। পরে তার মোবাইল হারিয়ে গিয়েছে জানায়। বিপদে পড়েছে বুঝে আমার ফোন তাকে দিই। তারপরেই আমার কষ্টার্জিত ২৭ হাজার টাকা ইউপিআই মাধ্যমে লোপাট করেছে ওই দুষ্কৃতী। প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে আমার টাকা ফেরত দেওয়া হোক।’
Leave a Reply