যাদবপুরে ওয়েবকুপার সভাপতি তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপর আক্রমণ ছিল পূর্ব পরিকল্পিত খুনের ছক ও মদতদাতাদের কলকে পাওয়ার প্রচেষ্টা।

ড. মহীতোষ গায়েন ,রাজ্য সহ সভাপতি,ওয়েবকুপা:- গত ১ মার্চ শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন এয়ার থিয়েটার হল ভাড়া নিয়ে বহু আগে থেকেই প্রেস রিলিজ করে ওয়েবকুপার রাজ্য কমিটি একটি জাতীয় স্তরের সেমিনার ও বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করে,আয়োজক কমিটির মূল দায়িত্বে ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবকুপা ইউনিট ও শিক্ষাবন্ধু ইউনিট এবং কিছু তৃণমূলপন্থী রিসার্চ স্কলার সেমিনার বিষয়ক ব্যবস্থাপনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে সাহায্য করেছে। যাদবপুরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের অনুমতিতেই এই সেমিনার ও সভা।

দীর্ঘ একমাস ধরে এই সেমিনার ও বার্ষিক সাধারণ সভার প্রস্তুতি চলছিল। রাজ্যের ৩৫টি সাংগঠনিক জেলা ও ২২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবকুপার ৩৫০০ প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন কিছু উপাচার্যরাও
এই সেমিনারে যোগ দেন। ঘটনার দিন সকাল ৯টা থেকেই পাহাড় থেকে সুন্দরবনের জেলাগূলি থেকে আগত প্রতিনিধিদের রেজিস্ট্রেশন চলছিল।তখন কিন্তু শান্তির পরিবেশ বজায় ছিল।
আমি সেদিন ৯.৩০ নাগাদ ৫নম্বর গেট দিয়ে ঢুকি,ঢোকার পর মাঝামাঝি স্থানে ডান দিকে দেখি কয়েকটি ছেলে মেয়ে হাফ প্যান্ট পরে ছোট ছোট বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছে। তাদের ছাত্র বলে মনে হলো না । রেজিস্ট্রেশন পর্ব চলছে। ১০টা নাগাদ একটা হট্টগোল -এর আওয়াজ পাচ্ছিলাম বাইরে,দেখি ২০/৩০ জন ছাত্রছাত্রী ২টি গ্রুপ করে লম্বা, ছোট ব্যানার নিয়ে কেত্তন করছে। দেখতে পেলাম ব্যানারে লেখা SFI,AIDSO,DSO,ASF ইত্যাদি লেখা।

ঠিক ১১টায় মঞ্চ থেকে তখন সহ সভাপতিদের থেকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সমস্ত প্রতিনিধিদের নিজ নিজ আসন গ্রহণ করতে’। ঠিক ১১.৩০ ন্যাশনাল লেভেল সেমিনার শুরু হয়, সেমিনারের বিষয় ছিল :”Saffronization of Higher Education in Contemporary India”. আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিবাজীপ্রতীম বসু ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয়য়প্রকাশ মজুমদার। সেমিনার এর শেষ পর্বে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ব্রাত্য বসু প্রবেশের পথে মাও মাকু, নকশাল এবং SFI ,DSO ও কিছু গুণ্ডা, বদমাশ তথা৬০/৭০ জনের একটি হুলিগান গোষ্ঠী শ্লোগান দিতে দিতে পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। সভাপতি কোনমতে ৩নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে মঞ্চের গ্রীন রুমে আসেন।ঠিক ১,৩০ নাগাদ WBCUPA –র বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু হয়। এই পর্বে বক্তব্য রাখেন ওয়েবকুপার রাজ্য কমিটির সদস্য অর্ণব সাহা, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির দেবলীনা শেঠ, এরপর দমদম ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বলতে উঠলে বাইরের মাওয়িস্ট হুলিগানরা চিৎকার শুরু করে এবং পাঁচিলে উঠে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি শুরু করে এবং শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন করার দাবি জানাতে শুরু করে। প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায় তীব্র ভাবে তাদের এই নোংরামী বন্ধের জন্য প্রতিবাদ করেন।
এরপর অন্যতম সহ সভাপতি সেলিম বক্স মন্ডল সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন।আমি তা সমর্থন করি এবং সভায় উপস্থিত ৩৫০০এর বেশি অধ্যাপক তা সমস্বরে সমর্থন করেন, এরপর কোষাধ্যক্ষ দীপজ্যোতি কর কোষাধ্যক্ষের প্রতিবেদন পেশ করে ,সহ সভাপতি হিসেবে আমি তার সমর্থনের আহ্বান জানাই, উপস্থিত সবাই তা সমর্থন করেন।এদিন সভা থেকে শিক্ষায় গৈরিকীকরণের বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রস্তাবও গৃহীত ও সমর্থিত হয়।
এরপর সংগঠনের সভাপতি বলতে শুরু করেন। বাইরে অবস্থানরত হামলাকারীরা তারস্বরে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে, হঠাৎ করেই তাদের একাংশ পাঁচিলে উঠে বাঁদরের মতো লাফাতে থাকে, শ্রদ্ধেয় সভাপতিকে কুৎসিত পোষ্টার প্রদর্শন করতে থাকে। এবং হঠাৎ করেই একদল বর্বর হুলিগান অধ্যাপকদের দিকে চেয়ার ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারতে থাকে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে, তখন আমাদের মাননীয় সভাপতি করজোড়ে অধ্যাপকদের আহ্বান জানান,”কোন প্ররোচনায় কান দেবেন না, আপনারা সবাই শান্ত থাকুন,”পুলিশ ডাকার প্রস্তাব কেউ কেউ দিলেও আমাদের মানবিক সভাপতি বলেন, “আমি শিক্ষাঙ্গনে পুলিশ ডাকার
পক্ষপাতী নই “। তখন এই মাও ,মাকু ,হার্মাদ বাহিনী সবাই একসাথে মাননীয় মন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য চিৎকার করতে থাকে। যদিও আমাদের অধ্যাপক সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভায় তাদের ঢুকে দাবি দাওয়া পেশ করার কোন আইনগত এক্তিয়ার নেই তাদের। গণতান্ত্রিক ও মানবিক সভাপতি অধ্যাপক ব্রাত্য বসু তবু ওদের সাথে দেখা করার কথা ঘোষণা করতে বলেন।সহ সভাপতি হিসেবে আমি ঘোষণা করি ‘আপনারা শান্ত থাকুন, উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন না। আপনাদের সঙ্গে মাননীয় মন্ত্রী দেখা করবেন ও কথা বলবেন। আমরা তার নির্দেশমত ওদের ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠনের ৪/৫ প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলবেন ও ডেপুটেশন নেবেন বলে জানাই।

ইতিমধ্যে SFI ও TMCP-র ২জন করে প্রতিনিধি আসে, তাদের সঙ্গে আমাদের সামনেই অধ্যাপক বসু কথা বলেন ও তাদের ডেপুটেশন জমা নেন। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৩টে, হুলিগান, মাওয়িস্টদের ও SFI এর ‘B’ ও ‘C’ টিমের ৪০এর টুকরো টূকরো গ্যাং একসাথে কথা বলবে বলে হঙ্কার দিতে থাকে।
ঠিক ৩.১৫ নাগাদ শিক্ষামন্ত্রী বাইরে এসে সব ছাত্র সংগঠনের মাঝে এসে তাদের কথা শুনতে থাকেন। হঠাৎ করে ঐ চল্লিশ/ষাটের চক্র তীব্র ভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করতে শুরু করে, নোংরা নোংরা খিস্তি দিতে থাকে, ভেতরে ডেপুটেশন দেওয়া সেই দুই SFI ছাত্রও হামলাতে‌ যোগ দেয়,এই হামলা ও বচসায় ইন্দ্রানুজ রায়ও যোগ দেয়। তখন তারা শিক্ষামন্ত্রী ও আমাদের অধ্যাপকদের উপর চড়াও হয়। এই পরিস্থিতিতেও অধ্যাপকরা শান্ত থাকে। হঠাৎ করেই ব্রাত্য বসুর গায়ের উপর পড়ে হামলাকারীরা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে । মন্ত্রী অসুস্থতা বোধ করেন এবং পাশেই বসে পড়েন, তখনও মন্ত্রী অপেক্ষা করতে থাকেন ওদের সাথে কথা বলার জন্য এবং সবাইকে শান্ত হতে বলেন।কে শোনে কার কথা, ওরা তখন মরিয়া, ইতিমধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির বনেটে উঠে বাঁদরের মতো বেশ ক’জন লাফাতে থাকে। ইঁট দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গতে থাকে, ভাঙা কাঁচের টুকরো শিক্ষামন্ত্রীর ডান চোখের নীচে লাগে,আর একটু হলেই বর্বরদের ছোঁড়া ইঁটে তার চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে যেতে পারতো।কোনমতে সভাপতি তথা শিক্ষামন্ত্রীকে বাঁচাতে গাড়ির ভেতর তুলে দেওয়া হয়,তোলার সময় তারা মন্ত্রীর হাতঘড়ি টানাটানি করে ছিনিয়ে নেয়। ইঁট দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গতে শুরু করলে ভাঙা কাঁচের টুকরো ব্রাত্য বসুর চোখে লাগে, হঠাৎ করেই হুলিগান গুন্ডা, বর্বররা অধ্যাপকদের ধরে মারতে শুরু করে ,গবেষক ছাত্রদেরও পেটায়, WBCUPA-র সহ সভাপতিরা সহ ৩৭জন অধ্যাপক আহত হন, দুই অধ্যাপিকার শাড়ি ছিঁড়েছে তারা,এতটা বর্বর তারা। এরপর ৪.৩০:নাগাদ মাননীয় মন্ত্রী অসুস্থতা বোধ করলে , ড্রাইভার তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি স্টার্ট করে। উল্টো দিক থেকে সেই নকশাল বীরপুঙ্গব ইন্দ্রানুজ গাড়ির পাশে এসেই স্কুটার থেকে ছিটকে পড়ে,ঐ হামলাবাজ ছাত্রছাত্রীদের ৩/৪জন তাকে গাড়ির গায়ে টেনে লাগিয়ে দিতে তৎপর হয়, মন্ত্রী ততক্ষণে চিকিৎসার জন্য SSKM হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

ঘড়ির কাঁটায় তখন ৪.৪০, বর্বর হামলাবাজরা যখন ৫
নম্বর গেটের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করতে করতে চিৎকার করে “মাল তো বেরিয়ে গেছে এবার এদের নেতা গুলোকে ধর, ঐ দেখ সাদা জামা পরা মহীতোষ গায়েন সম্ভবত, খুব স্লোগান দিচ্ছিল,ধর” একথা শুনে তীব্র আতঙ্কে আমি পাঁচ নম্বর গেটের সামনের দিকে দৌড় দিই, আমার দৌড় দেখে আমার পিছনে আরো ২জন দৌড়াতে শুরু করে,ওরা তখন বলে ,এবার ওদিকটা দেখ। গেটের বাইরে এসে দেখি ওরা কাটোয়া কলেজের দুই অধ্যাপক,হুলিগানরা হয়তো ভেবেছিল ঐ দুইজন ওদেরই লোক। বাইরে আরো দুই অধ্যাপককে দেখি। ওরা ৪জন মিলে আমাকে একটা অটোতে চাপিয়ে যাদবপুর দানায় নিয়ে যায়,থানার অফিসার আমার বন্ধু অনুপ পোল্ল্যেকে বলেন , উনি এবং আপনাদের ওয়েবকুপার ৫/৬ জন টার্গেটেড,ওনাকে একটি ক্যাব ভাড়া করে গড়িয়াহাটের দিকে নিয়ে যান,কারণ সেফ জোনে না নিলে ভয়াবহ বিপদ হতে পারে, অগত্যা আমার সেই বন্ধু তার গাড়িতে করে আমাকে নিউ ব্যারাকপুরের বাড়িতে পৌঁছে দেয়।তার ও অপর ৩ অধ্যাপকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

এই ঘটনার কিছু পরে ঐ হামলাবাজরা আমাদের যাদবপুরের প্রবীন অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রের উপর হামলা চালায়। সন্ধ্যায় পোস্টার দেয়, অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র ও মনোজিৎ মণ্ডলকে ক্লাসে ঢুকতে দেওয়া হবে না।তার পরের দিন ঘটনা তো সবাই জানেন।

একনজরে:
আসলে ওয়েবকুপার সভাপতি তথা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যেভাবে অতি দ্রুত ওয়েবকুপার মরা গাঙে জোয়ার এনে দেন এবং তিনি আমাদের সাথে নিয়ে আলাপ আলোচনা, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ৭৫ সদস্যের রাজ্য কমিটি গঠন,৩৫ টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট কমিটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন তাতে মাওয়িস্ট হুলিগান, অতি রাম,অতি বাম এবং নকশালদের গাত্রদাহ হতে থাকে,এই কারণে যে ,যাদবপুরে মুষ্টিমেয় ৬০/৭০ জনের এই বজ্জাত ছাত্ররা নেশা ভাঙ, মস্তানি,জুলুমবাজি করতে পারবে না, তাদের মদত দেয়
এইজন্য ঐদিনের হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ৩টি যথা:
১- শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে মাননীয়া দলনেত্রীর উন্নয়নকে ব্যহত করে রাজনীতির জলকে ঘুলিয়ে দিয়ে,সেই ঘোলা জলে মাছ ধরার পরিকল্পনা।
২) যাদবপুরে SFI,JUTA,AIDSO,, নকশালদের একচ্ছত্র আধিপত্যে কেন ভাগ বসাবে ওয়েবকুপা এটাও
ছিল উগ্র বামপন্থীদের একটি এজেন্ডা
৩) একজন নকশালপন্থী ছাত্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর নামে FRI করে তাকে কালিমালিপ্ত করে পক্ষান্তরে তৃণমূল কংগ্রেসকে
বিপাকে ফেলাও ছিল এদের উদ্দেশ্য।
আর ছকবাজি বজ্জাতি ও গুণ্ডামির ব্লুপ্রিন্ট রচনা করেছে মহম্মদ সেলিম,ও তার সাকরেদ সুজন চক্রবর্তী, সৃঞ্জয়, মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় প্রমুখরা। চিকিৎসা কেন্দ্র গিয়ে ইন্দ্রানুজকে কু পরামর্শ দেওয়ার চিত্র, ফটোশপে ফেলে AI ব্যবহার করে গাড়ির তলায় তাকে প্রতিস্থাপন করার খবর গণশক্তির প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপার মত ভুয়ো খবর তো সোস্যাল মিডিয়ায়র মাধ্যমে বাঙালির ঘরে ঘরে ঘুরছে।শুন্য থেকে কলকে পাওয়ার রাজনীতি যে সুপার ফ্লপ তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন হটকেক।

(প্রতিবেদন: ড. মহীতোষ গায়েন, অধ্যাপক ও ভাইস প্রিন্সিপাল সিটি কলেজ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *