নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট:- এক সময় বাঙালির ব্যবসায়িক সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল হালখাতা। বাংলা নববর্ষ এলেই শহর জুড়ে শুরু হতো হালখাতার প্রস্তুতি, দোকানপাট সেজে উঠত উৎসবের সাজে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই চেনা হালখাতার রূপ অনেকটাই বদলে গেছে। বালুরঘাটেও তার ব্যতিক্রম নয়।
বাংলা বছরের প্রথম দিনে নতুন খাতার সূচনা এবং পুরনো দেনার নিষ্পত্তিকে কেন্দ্র করে উদ্যাপিত হতো হালখাতা। দোকানিরা পরিচিত ক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানাতেন কার্ডে বা মৌখিকভাবে। নানা রকম খাবার, মিষ্টি, লুচি-তরকারির ভোজ, সঙ্গে উপহার হিসেবে থাকত বাংলা ক্যালেন্ডার। এটি শুধুই হিসেবের খাতা খোলা নয়, বরং এক উৎসব হয়ে উঠত যা ব্যবসায়ী ও ক্রেতার আন্তরিক সম্পর্ককেও তুলে ধরত।
তবে বর্তমানে সেই উৎসবের রঙ ফিকে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথায়, হালখাতা এখন আর আগের মতো প্রাণবন্ত নয়, বরং নিয়মরক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থায়ী ক্রেতার সংখ্যা কমেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দাপটে বেড়েছে অনলাইন শপিং, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ঐতিহ্যবাহী এই প্রথার ওপর।
বালুরঘাটের প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল, হালখাতার দিনে দোকানপাটে উৎসবের আমেজ থাকত। এখন সেই আন্তরিকতা নেই। সবকিছুই যেন কৃত্রিম হয়ে গেছে।’’ স্থানীয় সোনার দোকানের এক ব্যবসায়ীর মন্তব্য, ‘‘আগে হালখাতার দিন ক্রেতা-বান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো হতো। এখন আর সেই প্রথা মানা হয় না, শুধুমাত্র যাঁদের বাকি থাকে, তাঁদেরই ডাকা হয়।’’
আরও এক প্রবীণ ব্যবসায়ী জানান, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষদের দেখেছি হালখাতা পালন করতে। তখন ক্রেতাদের সঙ্গে একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠত। এখন সেই জায়গায় এসেছে শপিং মল আর ই-কমার্স। ফলে হালখাতার আবেদন অনেকটাই হারিয়ে গেছে।’’
তবুও, সব বদলের মাঝেও এখনও বাঙালি সংস্কৃতির টিকে থাকা এই হালখাতা প্রথা বহু স্মৃতিকে জিইয়ে রাখে। যদিও জৌলুসে ঘাটতি, তবুও একে ধরে রাখার চেষ্টায় সচেষ্ট কিছু ব্যবসায়ী ও পুরনো প্রজন্ম। পরিবর্তনের ঢেউয়ে পড়েও, হালখাতার ঐতিহ্য এখনও একফালি আবেগ হয়ে বেঁচে আছে বালুরঘাটের বুকে।
Leave a Reply